অনলাইন ডেস্ক
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে বাবুল আক্তার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক অর্থাৎ দুইবার রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ পদকও পেয়েছেন একবার। ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাবুল আক্তার একজন সৎ, নির্ভীক ও পরিশ্রমী অফিসার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি দমনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীকে টার্গেট করা হয়েছে।
কিন্তু এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (ব্যুরো) তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। আজ বুধবার পিবিআই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রতিবেদনকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে এক নম্বর আসামি করে আটজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। এই মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
ফিরে দেখা
ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন মাহমুদা খানম মিতু। পথে মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ধরে প্রথমে গুলি করে। পরে কুপিয়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা ১৭ মিনিটে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই সময় পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে অবস্থান করছিলেন।
হত্যা তদন্তে নতুন মোড়
ওই ঘটনায় বাদী হয়ে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। এজাহারে তিনি বলেন, তাঁর জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মাহমুদা হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। অব্যাহতভাবে মাহমুদার মা–বাবা এই হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় পাওয়া সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে একজনের কর্মকাণ্ড ও চেহারা পরিষ্কার দেখা গিয়েছিল। পরে তাকে কামরুল ইসলাম মুছা নামে শনাক্ত করা হয়। ঘটনার পাঁচ বছর পরেও মেলেনি তার খোঁজ। মুছার স্ত্রী পান্না আক্তারের অভিযোগ, ওই বছরের ২২ জুন বন্দর এলাকার বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নানা নাটকীয়তার মধ্যে দুই মাস পর বাবুলের চাকরি ছাড়ার কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০১৭ সালের জানুয়ারি বাবুলের বাবা-মা ও শ্বশুর মোশারফ হোসেন ও শাশুড়ি শাহিদা মোশারফ চট্টগ্রাম গিয়ে দেখা করেন তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোলার লালমোহন এলাকা থেকে মিতুর সেলফোনের সিম উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
বাবুলের ফোনালাপ
তদন্তে একটি কল রেকর্ডে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত মুছার মোবাইল ফোনে করেন এসপি বাবুল আক্তার। মাত্র ২৭ সেকেন্ডের কথোপকথনের রেকর্ডে শোনা যায়– মুছা ফোনটি রিসিভ করতেই ওপার থেকে বাবুল আক্তার বলেন, তুই কোপালি ক্যান? ৩/৪ সেকেন্ড থেমে আবার বলেন, বল তুই কোপালি ক্যান? তোরে কোপাতে কইছি? ওপার থেকে মুছার কথা, না মানে। মিতু হত্যার প্রধান আলামত ও সাক্ষী হয়ে ওঠে ছোট্ট এই রেকর্ডটিই।
বাবুলের পরকীয়া
বাবুল আক্তারের পরোকীয়া সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিলেন মিতু। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরোয়, গায়ত্রী এম্মার্সিং নামের এক ভারতীয় নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের একদিন বাবুল গোসলে ঢুকলে তাঁর ফোনে কিছু আপত্তিকর মেসেজ, ছবি দেখেন মিতু। এমন ২৯টি মেসেজ প্রমাণ হিসেবে ছেলের আর্ট পেপারে লিখে রাখেন মিতু। জানা যায়, গায়ত্রী ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী বিষয়ক একজন কর্মকর্তা।
নিজের এলাকার এক নারীর সঙ্গেও বাবুল আক্তারের সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিল। ওই নারীর স্বামী পুলিশের এসআই আকরাম হোসেন লিটনের মৃত্যুর তদন্তও দাবি করেছিলেন মিতুর বাবা মোশাররফ। তার ভাষ্য মতে, ওই খুনের তদন্ত তার মেয়ে খুনের জট খুলে দিতে পারে। সেই নারী অবশ্য পরে সংবাদ সম্মেলন করে বাবুলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। ওই সময় মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিল ডিবি।
গ্রেপ্তার হওয়াদের জবানবন্দি
ঘটনার ১৯ দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ জুন আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওয়াসিম জানায়– নবী, কালু, মুছা ও তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। মোটরসাইকেলের সামনে ছিল মুসা, এরপর আনোয়ার ও ওয়াসিম। মটরসাইকেলের পেছন থেকে প্রথমে মিতুকে গুলি করে ওয়াসিম। নবী আগেই জিইসির মোড়ে থেকে ওঁত পেতে ছিল। এই নবীই মিতুর বুক, হাত ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এসময় মুসা বাবুল আক্তারের ছেলেকে আটকে রেখেছিল। মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা চলে যায়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই আসামি নূরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়, গুম হয় মুছাসহ দুইজন আসামি। এই মামলায় বর্তমানে ওয়াসিম ও আনোয়ার গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী। নবী, কালুসহ ৩ জন জামিনে মুক্ত।
জঙ্গি সন্দেহ
মিতু একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়ায় এ ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক ধরনের রহস্যও ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর স্বামী বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম এবং তার আগে কক্সবাজারে বিভিন্ন জঙ্গি অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই শুরুতে জঙ্গিদের দিকেই ছিল সন্দেহের তীর।
মিতুর বাবার সন্দেহ
তবে মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বেশ কিছুদিন যাবত মেয়ের হত্যাকাণ্ডের জন্য জামাতা বাবুল আক্তারকেই দায়ী বলে দাবি করে আসছেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাবুল চট্টগ্রামে নয়, পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ঢাকায় ছিলেন। কিন্তু মোশাররফ হোসেন বলেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাতার যোগসাজশ রয়েছে বলে তার সন্দেহ।
২০১৭ সালের ২৪ জুন গভীর রাতে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনেক প্রশ্নের জবাব না পাওয়ায় সন্দেহের মোড় ঘুরতে থাকে। এর এক মাস পর এসপি বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে আবেদন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এর ২২ দিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির কথা জানানো হয়। এতে শ্বশুরের সন্দেহের মাত্রা আরও তীব্র হয়।
মিতু হত্যার পর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্রথমে ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন বাবুল। চাকরি হারানোর পর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা বাসায় ওঠেন।
সর্বশেষ
মামলাটি চট্টগ্রামের নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ৩ বছর ১১ মাস তদন্তে থাকার পর গত বছরের মে মাসে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পরামর্শে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে আটক করা হয়। আজ বাবুলসহ আট জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
আরও পড়ুন:
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে বাবুল আক্তার প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক অর্থাৎ দুইবার রাষ্ট্রীয় পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশ পদকও পেয়েছেন একবার। ২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাবুল আক্তার একজন সৎ, নির্ভীক ও পরিশ্রমী অফিসার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জঙ্গি দমনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁকে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীকে টার্গেট করা হয়েছে।
কিন্তু এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (ব্যুরো) তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। আজ বুধবার পিবিআই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। প্রতিবেদনকে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরই মধ্যে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে এক নম্বর আসামি করে আটজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। এই মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানিয়েছে পিবিআই।
ফিরে দেখা
ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাচ্ছিলেন মাহমুদা খানম মিতু। পথে মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত তাকে ঘিরে ধরে প্রথমে গুলি করে। পরে কুপিয়ে তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা ১৭ মিনিটে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। ওই সময় পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে অবস্থান করছিলেন।
হত্যা তদন্তে নতুন মোড়
ওই ঘটনায় বাদী হয়ে বাবুল আক্তার পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। এজাহারে তিনি বলেন, তাঁর জঙ্গিবিরোধী কার্যক্রমের জন্য স্ত্রী আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে থাকতে পারেন। তবে সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় মাহমুদা হত্যার তদন্ত নতুন মোড় নেয়। অব্যাহতভাবে মাহমুদার মা–বাবা এই হত্যার জন্য বাবুল আক্তারকে দায়ী করে আসছেন। সিসিটিভি ক্যামেরায় পাওয়া সেই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে একজনের কর্মকাণ্ড ও চেহারা পরিষ্কার দেখা গিয়েছিল। পরে তাকে কামরুল ইসলাম মুছা নামে শনাক্ত করা হয়। ঘটনার পাঁচ বছর পরেও মেলেনি তার খোঁজ। মুছার স্ত্রী পান্না আক্তারের অভিযোগ, ওই বছরের ২২ জুন বন্দর এলাকার বাসা থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ।
হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা গুঞ্জনের মধ্যে ২০১৭ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীতে শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে গোয়েন্দা পুলিশ কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নানা নাটকীয়তার মধ্যে দুই মাস পর বাবুলের চাকরি ছাড়ার কথা জানায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০১৭ সালের জানুয়ারি বাবুলের বাবা-মা ও শ্বশুর মোশারফ হোসেন ও শাশুড়ি শাহিদা মোশারফ চট্টগ্রাম গিয়ে দেখা করেন তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোলার লালমোহন এলাকা থেকে মিতুর সেলফোনের সিম উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ।
বাবুলের ফোনালাপ
তদন্তে একটি কল রেকর্ডে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের দিন সকাল ৭টা ৩৭ মিনিটে চট্টগ্রামের বহুল আলোচিত মুছার মোবাইল ফোনে করেন এসপি বাবুল আক্তার। মাত্র ২৭ সেকেন্ডের কথোপকথনের রেকর্ডে শোনা যায়– মুছা ফোনটি রিসিভ করতেই ওপার থেকে বাবুল আক্তার বলেন, তুই কোপালি ক্যান? ৩/৪ সেকেন্ড থেমে আবার বলেন, বল তুই কোপালি ক্যান? তোরে কোপাতে কইছি? ওপার থেকে মুছার কথা, না মানে। মিতু হত্যার প্রধান আলামত ও সাক্ষী হয়ে ওঠে ছোট্ট এই রেকর্ডটিই।
বাবুলের পরকীয়া
বাবুল আক্তারের পরোকীয়া সম্পর্কের কথা জেনে গিয়েছিলেন মিতু। বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর বেরোয়, গায়ত্রী এম্মার্সিং নামের এক ভারতীয় নারীর সঙ্গে বাবুলের সম্পর্ক ছিল। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের একদিন বাবুল গোসলে ঢুকলে তাঁর ফোনে কিছু আপত্তিকর মেসেজ, ছবি দেখেন মিতু। এমন ২৯টি মেসেজ প্রমাণ হিসেবে ছেলের আর্ট পেপারে লিখে রাখেন মিতু। জানা যায়, গায়ত্রী ইউএনএইচসিআরের শরণার্থী বিষয়ক একজন কর্মকর্তা।
নিজের এলাকার এক নারীর সঙ্গেও বাবুল আক্তারের সম্পর্কের অভিযোগ উঠেছিল। ওই নারীর স্বামী পুলিশের এসআই আকরাম হোসেন লিটনের মৃত্যুর তদন্তও দাবি করেছিলেন মিতুর বাবা মোশাররফ। তার ভাষ্য মতে, ওই খুনের তদন্ত তার মেয়ে খুনের জট খুলে দিতে পারে। সেই নারী অবশ্য পরে সংবাদ সম্মেলন করে বাবুলের সঙ্গে কোনো ধরনের সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেন। ওই সময় মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিল ডিবি।
গ্রেপ্তার হওয়াদের জবানবন্দি
ঘটনার ১৯ দিন পর ২০১৬ সালের ২৬ জুন আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তাঁরা বলেন, কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুছার ‘পরিকল্পনাতেই’ এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওয়াসিম জানায়– নবী, কালু, মুছা ও তিনি হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেয়। মোটরসাইকেলের সামনে ছিল মুসা, এরপর আনোয়ার ও ওয়াসিম। মটরসাইকেলের পেছন থেকে প্রথমে মিতুকে গুলি করে ওয়াসিম। নবী আগেই জিইসির মোড়ে থেকে ওঁত পেতে ছিল। এই নবীই মিতুর বুক, হাত ও পিঠে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এসময় মুসা বাবুল আক্তারের ছেলেকে আটকে রেখেছিল। মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা চলে যায়। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই আসামি নূরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়, গুম হয় মুছাসহ দুইজন আসামি। এই মামলায় বর্তমানে ওয়াসিম ও আনোয়ার গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দী। নবী, কালুসহ ৩ জন জামিনে মুক্ত।
জঙ্গি সন্দেহ
মিতু একজন পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হওয়ায় এ ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক ধরনের রহস্যও ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর স্বামী বাবুল আক্তার বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। বাবুল আক্তার চট্টগ্রাম এবং তার আগে কক্সবাজারে বিভিন্ন জঙ্গি অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাই শুরুতে জঙ্গিদের দিকেই ছিল সন্দেহের তীর।
মিতুর বাবার সন্দেহ
তবে মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন বেশ কিছুদিন যাবত মেয়ের হত্যাকাণ্ডের জন্য জামাতা বাবুল আক্তারকেই দায়ী বলে দাবি করে আসছেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাবুল চট্টগ্রামে নয়, পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দিতে ঢাকায় ছিলেন। কিন্তু মোশাররফ হোসেন বলেন, তার মেয়েকে হত্যার পেছনে তার জামাতার যোগসাজশ রয়েছে বলে তার সন্দেহ।
২০১৭ সালের ২৪ জুন গভীর রাতে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অনেক প্রশ্নের জবাব না পাওয়ায় সন্দেহের মোড় ঘুরতে থাকে। এর এক মাস পর এসপি বাবুলকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে আবেদন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এর ২২ দিন পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতির কথা জানানো হয়। এতে শ্বশুরের সন্দেহের মাত্রা আরও তীব্র হয়।
মিতু হত্যার পর দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে প্রথমে ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে উঠেছিলেন বাবুল। চাকরি হারানোর পর বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে আলাদা বাসায় ওঠেন।
সর্বশেষ
মামলাটি চট্টগ্রামের নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ৩ বছর ১১ মাস তদন্তে থাকার পর গত বছরের মে মাসে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) স্থানান্তর করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের পরামর্শে মামলার বাদী বাবুল আক্তারকে আটক করা হয়। আজ বাবুলসহ আট জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন।
আরও পড়ুন:
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৫ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৫ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৬ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
২০ দিন আগে