ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে চাঁদা দাবি: তদন্ত করবে পুলিশ বাদে অন্য সংস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২: ১২

এক ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও চাঁদা দাবি করেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানার সাবেক ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন চন্দ্র বসাক। এই অভিযোগে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এই মামলায় পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থা দিয়ে তদন্ত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ আপিল বিভাগে বহাল রাখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে ব্যবসায়ীকে তুলে নিয়ে নির্যাতন ও চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলায় গত ২৩ মে ওই নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আসামিরা হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে চেম্বার আদালতে যান।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম স্বপনের পক্ষে আজ শুনানি করেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জাসিদুল ইসলাম জনি।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম স্বপনকে বাড়ি থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে হাত ও চোখ বেঁধে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতন করেন ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন চন্দ্র। ৫০ লাখ টাকা চাঁদাও দাবি করা হয়। নির্যাতনের একপর্যায়ে জ্ঞান হারালে রাত সাড়ে ৩টার দিকে তাঁকে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। জ্ঞান ফিরলে আবার থানায় আনা হয়। তবে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে স্বজনদের হাতে তুলে দেন ওসি।

আইনজীবী জাসিদুল ইসলাম জনি বলেন, ‘স্বজনরা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে ছাড়িয়ে আনেন এবং বাকি টাকা পরে দিতে বলা হয়। ওই ঘটনায় জাহিদুল থানায় মামলা করতে গেলে নেওয়া হয়নি। পরে তিনি আদালতে মামলা করলে তা পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। পুলিশ তাতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে ভুক্তভোগী নারাজি দিলে তা নামঞ্জুর হয়। এরপর বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার কমিশন ও ডিআইজি বরাবর অভিযোগ করেন তিনি। মানবাধিকার কমিশন বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায় এবং বলে যে, ওই ওসির বিরুদ্ধে এ রকম বেশ কয়েকটি অভিযোগ তাঁরা পেয়েছেন।’

জাসিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘নারাজির বিরুদ্ধে দায়রা জজ আদালতে রিভিশন আবেদন করা হয়েছিল। তবে দীর্ঘ সময়েও শুনানি না হওয়ায় হাইকোর্টে রিট করা হয়। হাইকোর্ট বিষয়টি ৪৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পরে দায়রা জজ আদালত শুনানি করে রিভিশন আবেদন খারিজ করে দেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন ব্যবসায়ী স্বপন। হাইকোর্ট রুল জারি করেন। পরে রুল নিষ্পত্তি করে পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করাতে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। আসামিরা ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে যান। চেম্বার আদালত হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে আগামী বছরের ৩ মার্চ শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান।’

মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদন
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বিষয়টি তদন্ত করে মানবাধিকার কমিশনে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলম ও উপ-পুলিশ পরিদর্শক সাধন চন্দ্র বসাকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়গুলো প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তকালে আরও জানা যায়, তাঁরা আর্থিক লাভের জন্য এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন। মোরশেদ আলমের এই কর্মকাণ্ড বিভাগীয় নিয়ম শৃঙ্খলা বহির্ভূত। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন নেতিবাচক ধারণা উঠে আসে যা পুলিশের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ন করে। তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে মানবাধিকার কমিশনকে জানানো হয়, দুজনকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে এরই মধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী জাসিদুল ইসলাম জনি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত