Ajker Patrika

টাঙ্গাইলে নির্মাণ শেষের আগেই দেবে গেল সাড়ে ৩ কোটি টাকার সেতু

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ জুন ২০২২, ২৩: ০১
টাঙ্গাইলে নির্মাণ শেষের আগেই দেবে গেল সাড়ে ৩ কোটি টাকার সেতু

টাঙ্গাইলে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুর মাঝখানে দেবে গেছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে হতাশা দেখা দিয়েছে। তাঁরা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ লাঘবে সরকার সেতু করে দিলেও, ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতিতে সেতুটি নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেল। এখন দুর্ভোগ কমা তো দূরের কথা আরও বাড়ল।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় টাঙ্গাইল-বেড়াডোমা-ওমরপুর সড়কের বেড়ডোমা এলাকার লৌহজং নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি দেবে যায়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি করা হবে বলে জানিয়েছেন পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার। 

পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় টাঙ্গাইল পৌরসভা সেতুটির বাস্তবায়ন করছে। আট মিটার প্রস্থ ও ৩০ মিটার দীর্ঘ সেতুটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ১৮ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ১২ নভেম্বর থেকে সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কাজ পেয়েছে ব্রিক্সস অ্যান্ড ব্রিজ লিমিটেড অ্যান্ড দি নির্মিতি নামের দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। গত ১১ মে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৫৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। গত সপ্তাহে সেতুটির ওপরের অংশে ঢালাই দেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে সেতুটির সেন্টারিং সাটারিং সরে গিয়ে মাঝখানে সাড়ে তিন ফুট দেবে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, লৌহজং নদীর মাঝখান থেকে গাছ ও বাঁশের পাইল সরে গেছে। স্থানীয় লোকজন এ অবস্থা দেখতে ভিড় করছেন। কয়েক জন শ্রমিক সেতু নির্মাণে কাজ করে যাচ্ছেন। দেবে যাওয়া স্থান পৌরসভা ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করেছেন। 

বেড়াডোমা এলাকার বাসিন্দার শামীম আল মামুন বলেন, ‘এর আগে এখানে যে বেইলি ব্রিজ ছিল সেটিও দুবার ভেঙে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে কয়েক বছর। এ সেতু নির্মাণের কারণেও দুর্ভোগ অব্যাহত আছে। অপর দিকে সেতু না থাকার কারণে এলাকায় কেউ বাসা ভাড়া নিতে চায় না। জমির দামও অনেক কমে গেছে।’

খোরশেদ হোসেন নামে আরেক স্থানীয় অভিযোগ করে বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে সেতুটি দেবে গেছে। এতে আমাদের আরও কয়েক বছর দুর্ভোগ পোহাতে হবে।’

পথচারী মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘পার্ক বাজার থেকে বাজার করে নিজেই বহন করে আনতে হয়। কোনো রিকশা আসে না। দুই বছরের অধিক সময় ধরে আমাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’ কাশেম মিয়া বলেন, ‘সেতু না থাকায় পার্শ্ববর্তী অস্থায়ী সেতুতে মাঝে মধ্যেই যানজটের সৃষ্টি হয়। ছোট খাটো দুর্ঘটনাও ঘটে।’

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সোলায়মান হাসান বলেন, ‘এই সেতুর নির্মাণকাজ অন্যজন পেয়েছিলেন। স্থানীয় এমপি তাঁর কাছ থেকে প্রভাব খাটিয়ে কাজটি হাতিয়ে নেন। পরে তাঁর কর্মী আমিরুল তাঁর অনুসারীদের কাজটি দিয়েছেন। যারা কখনো সেতু নির্মাণ করা দেখেইনি তাঁরা সেতু নির্মাণ করতে এসেছে। এটা দুঃখজনক। নদীতে তেমন পানি ও স্রোত না থাকার পরও সেতুটি দেবে গেছে। সঠিক পদ্ধতিতে মানসম্মত সেতু নির্মাণ করার দাবি জানালেও তাঁরা সব সময় এমপির দোহাই ও ক্ষমতা দেখিয়েছেন। সরকারের অর্থের অপচয় করার জন্য বাস্তবায়নকারীদের বিচার চাই।’

 বৃহস্পতিবার রাতে সেতুটি মাঝখান থেকে দেবে যায়৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘দুর্ভোগ লাঘবে কাজটি শেষ করার জন্য বারবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন কোনো কথাই শোনে না। সেতুটি দেবে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষের কয়েক বছরের জন্য দুর্ভোগ বেড়ে গেল।’

এমন কেন হলো জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকার। তবে জামিল ভাইসহ কয়েকজনে বাস্তবায়ন করছে। আমার নেতৃত্বে কোনো কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’

টাঙ্গাইল পৌরসভা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের কোয়ালিটি কন্ট্রোল ইঞ্জিনিয়ার সাধরণ চন্দ্র ধরের সঙ্গে ফোনে জানতে চাইলে বলেন, তিনি একটি অনুষ্ঠানে আছেন। এই বলেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার শিব্বির আহমেদ আজমী বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করে মূল রহস্য উদ্‌ঘাটন করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত