রক্তমাখা শরীরে জুবায়েরের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন সহপাঠী রাজিন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০০: ২৯
আপডেট : ০৮ জুলাই ২০২৪, ০৮: ৪৭

ঢাকা কমার্স কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়ের হাসান রাফিতকে হত্যা করে রক্তমাখা শরীর নিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তাঁর সহপাঠী চৌধুরী রাজিন ইকবাল। তবে শাহআলী এলাকায় রাজিনের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাঁকে তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এই সুযোগে রাজিন পালিয়ে যান। রাজিন ও তাঁর বাবাকে আসামি করে মামলা করেছেন নিহতের বাবা আবুল বাশার মিয়া। 

প্রত্যক্ষদর্শী ও কমার্স কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শনিবার (৬ জুলাই) সন্ধ্যায় জুবায়েরকে ঢাকা কমার্স কলেজের সামনে থেকে ডেকে নেন সহপাঠী রাজিন। কলেজের পূর্বপাশের একটি সরকারি বহুতল ভবনের তৃতীয় তলায় নিয়ে যান। সেখানে বটি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর সেখানে অনেকক্ষণ বটি হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্থানীয়রা জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন কল করে, এরপর পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। অবশ্য পুলিশ আসার আগেই রাজিন পালিয়ে যান। 

জুবায়েরের বাবা একটি হত্যা মামলা করেছেন। এতে রাজিন ও তাঁর বাবা ইকবাল আহম্মেদ চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। তবে পুলিশ কাউকেই এখনো গ্রেপ্তার করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজিনের বাবা ইকবাল আহম্মেদ আইনজীবী, মা রাশিদা খাতুন শিক্ষকতা করেন। তাঁরা শাহআলী এলাকায় প্রভাবশালী। ঘটনার পর পুলিশের তেমন তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজন ও সহপাঠীরা। 

রোববার (৭ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জুবায়েরের ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহটি দাফনের জন্য নেওয়া হয়েছে গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। 

এদিকে জুবায়েরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে কোনো দায় নিতে রাজি নয়। ঢাকা কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ আবু মাসুদ বলেন, এই ঘটনা কলেজের বাইরে ঘটেছে। এর দায়ভার কলেজ কর্তৃপক্ষ নেবে না। তবে রাজিনের একটি বিষয় নিয়ে কিছুদিন আগে আমাদের কাছে এলে আমরা সেটির সমাধান করে দিয়েছি। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশই এখন বিষয়টি তদন্ত করবে। 

সুরতহাল প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, জুবায়েরের মাথায় ধারালো অস্ত্রের কয়েকটি আঘাত রয়েছে। ডান চোখের পাশে কাটা, গলায় ৩ ইঞ্চি পরিমাণ কাটা জখম, বুকের ডান পাশেও জখম আছে। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কবজি প্রায় বিচ্ছিন্ন। 

সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন শাহআলী থানার উপ–পরিদর্শক (এসআই) মো. আমিনুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি প্রাথমিক তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সহপাঠীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের জেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। 

জুবায়েরের মামা মো. নুরুজ্জামান বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়ের কলেজের ক্লাস ক্যাপ্টেন ছিলেন। এক মাস আগে ক্লাসে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে সহপাঠী রাজিনের মারামারি হয়। এ ঘটনায় রাজিন জুবায়ের বিপক্ষে অবস্থান নেন। ক্ষিপ্ত হয়ে রাজিন ক্লাসের মধ্যে জুবায়েরের ওপর চড়াও হন। তখন জুবায়ের কলেজের অধ্যক্ষের কাছে নালিশ দেন। অধ্যক্ষ রাজিনের বাবা–মাকে ডাকেন এবং তাঁদের রাজিনকে সতর্ক করে দেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই ক্ষোভ থেকেই রাজিন ও তাঁর বাবা মিলে কৌশলে জুবায়েরকে তাঁদের বাসায় নিয়ে হত্যা করে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের গ্রেপ্তার করলে আসল বিষয় বেরিয়ে আসবে। এই ঘটনায় আমরা রাজিন ও তাঁর বাবার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। 

জুবায়েরে গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। বাবা আবুল বাশার ভূমি অফিসে চাকরি করেন, মা আয়েশা সিদ্দিকা রুমী গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জুবায়ের সবার বড়। তিনি ঢাকায় মিরপুর ১ নম্বর রাইনখোলা এ–ব্লকে মামা নুরুজ্জামানের বাসায় থেকে ঢাকা কমার্স কলেজে লেখাপড়া করতেন। 

এ বিষয়ে শাহ আলী থানার ওসি তারিকুজ্জামান বলেন, এই ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। দুই জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আমরা কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে এই ঘটনার তদন্ত করছি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত