‘যেই পোলার চোখে চুমা দিতাম ওই চোখ তুইল্লালাইসে’

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০১: ০৭
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৩, ০১: ১৭

‘যেই পোলার চোখে চুমা দিতাম ওই চোখ তুইল্লালাইসে। আমার চোখের সামনে মানিকরে মাইরা লাইলো হাশমতে।’ আজ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে ছেলের মরদেহ নিয়ে বিলাপ করতে করতে এসব কথা বলেন নিহত যুবদল নেতা মাহাবুব আলমের (৩০) মা তাহেরা বেগম। 

এর আগে মঙ্গলবার সকালে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের দুপ্তারা ইউনিয়নের সিংরাটি এলাকায় মাহাবুব আলমকে হত্যা করা হয়। পরিবারের সদস্যদের সামনেই তাঁকে পিটিয়ে, কুপিয়ে ও চোখ উপড়ে ফেলে হত্যা করা হয়। এই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁরা হলেন, অভিযুক্ত হাশমতের ভাই কিসমত ও কামাল। 

নিহত মাহাবুব আলম একই এলাকার হানিফ মিয়ার ছেলে এবং ইউনিয়ন যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। দলীয় পরিচয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব মশিউর রনি। 

এ ঘটনায় অভিযুক্ত হাশমত মিয়া স্থানীয়ভাবে দুপ্তারা ইউনিয়নের আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। তবে এ নিয়ে নেতা-কর্মীদের কাছে জানতে চাইলে তারা তাঁকে চিনেন বলে জানান। 

নিহত যুবদল নেতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। এ ছাড়া যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির সহ দপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূইয়া স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে হাশমতকে দুপ্তারা ইউনিয়ন ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একই গ্রামের হাশমত মিয়ার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে জমি কিনেন নেন মাহাবুব। জমির কেনার পর সেই জমি পৈতৃক সূত্রে দাবি করেন হাশমত। এ নিয়ে বিরোধ চলছিল। পরবর্তীতে স্থানীয় সালিসের মাধ্যমে জমিটি কিনে নেওয়ার প্রস্তাব দেন হাশমত। সেই প্রস্তাবে রাজি হয়ে বায়না বাবদ মাহবুবকে ৩ লাখ টাকা দেন হাশমত। কিন্তু পরবর্তীতে হঠাৎ সেই টাকা ফেরত চান হাশমত। মাহাবুব সেই টাকা খরচ করে ফেলায় টাকা পরিশোধের জন্য কিছুদিন সময় চান। এ নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরই জেরে মঙ্গলবার সকালে মাহাবুবকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। 

নিহত যুবদল নেতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ

নিহতের চাচা মজিবর রহমান বলেন, ‘বায়না টাকা ফেরত নিয়েই বিরোধ শুরু হয় মাহাবুবের সঙ্গে। সকালে ১০টার দিকে মাহাবুব বাজারে গেলে সেখানে হাশমত ও তাঁর লোকজন মারধর করে। পরে একটি সিএনজিতে চালিত অটোরিকশায় তাকে তুলে নিয়ে হাশমতের বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে লাঠিপেটা, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ এবং চোখ তুলে ফেলে তারা। মারধরে অংশ নেয় হাশমত, তার ভাই কিসমত ও কামালসহ বেশ কয়েকজন।’ 

মজিবর রহমান আরও বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে মাহাবুবের বাবা, মা, তার দুই ভাই হাশমতের বাড়িতে গিয়ে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে থাকি। কিন্তু তারপরেও হাশমত তার লোকজন দিয়ে মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলে। অচেতন অবস্থায় তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’ 

নিহতের মা তাহেরা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘আমার পোলারে লাঠি, হাতুড়ি দিয়ে মারছে। টাকা দিয়া দিমু কইয়া কতবার পাও ধইরা কানলাম। কিন্তু পাষানগো মন গলে নাই। হাতুড়ি দিয়া আমার পোলাডার মাথা ভাইঙ্গালাইসে। যেই পোলার চোখে চুমা দিতাম ওই চোখ তুইল্লালাইসে। আমার চোখের সামনে মানিকরে মাইরা লাইলো হাশমতে।’ 

হত্যাকান্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এমদাদুল হক তৈয়ব বলেন, ‘হত্যাকান্ডের ঘটনায় হাশমতের ভাই কিসমত ও কামালকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হাশমতকে ধরতে আমাদের অভিযান চলছে। জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত