Ajker Patrika

ইউএনওর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ কলেজছাত্রীর, তদন্তে প্রশাসন

টাঙ্গাইল ও বাসাইল প্রতিনিধি
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৯: ৫৯
ইউএনওর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ কলেজছাত্রীর, তদন্তে প্রশাসন

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনেছেন এক কলেজছাত্রী। এ বিষয়ে ওই কলেজছাত্রী প্রতিকার চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। 

বর্তমানে মো. মনজুর হোসেন (পরিচিতি নম্বর-১৭৩০০) কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলায় ইউএনও হিসেবে কর্মরত। 

বিয়ের প্রলোভন দিয়ে ওই কর্মকর্তার ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন কলেজছাত্রী। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্থানে বহুবার শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার পরেও বিয়ে না করায় প্রতারণার শিকার হয়েছেন মর্মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর প্রতিকার চেয়ে লিখিত অভিযোগ ও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি। 

অভিযোগটি নিয়ে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে তদন্ত শুরু হয়েছে। আগামী সাত দিনে মধ্যে তদন্ত শেষ হবে বলে জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। 

কলেজছাত্রীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় ইউএনও মো. মনজুর হোসেন দায়িত্বে থাকাকালীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচয় হয় তাঁদের। একপর্যায়ে তাঁকে সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান ইউএনও। সেখানে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। কলেজছাত্রীর বাবা-মা অসুস্থ থাকার কারণে পারিবারিকভাবে অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। বিষয়টি ইউএনও মনজুর হোসেনকে জানালে বিয়ে করার আশ্বাস দিয়ে কলেজছাত্রীকে তাঁর বাবার বাড়ি ছেড়ে আসতে রাজি করান। পরে ইউএনও টাঙ্গাইল কুমুদিনী কলেজের সঙ্গে পাওয়ার হাউসের পেছনে মিথ্যা পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে কলেজছাত্রীকে রাখেন। সেখানে তাঁরা দুই মাস স্বামী-স্ত্রীর মতো সংসার করেন। 

একপর্যায়ে কলেজছাত্রী সামাজিক স্বীকৃতির জন্য চাপ দিলে ভারতে গিয়ে বিয়ে করবেন বলে আশ্বাস দেন ইউএনও। তাঁরা মেডিকেল সার্টিফিকেট দিয়ে পরিচিত জোবায়েত হোসেনের সঙ্গে যমুনা ফিউচার পার্কে নিয়ে যান এবং সেখানে কলেজছাত্রীর মেডিকেল ভিসা করানো হয়। কিছুদিন পর ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় এসির (ল্যান্ড) গাড়িতে করে জোবায়েত হোসেন, গাড়ির চালক বুলবুল হোসেন ও দুই আনসারসহ বেনাপোলের উদ্দেশে রওনা হন তাঁরা। 

যাত্রাবিরতির জন্য যশোর সার্কিট হাউসে সময় কাটান সবাই। সেখান থেকে বেনাপোল সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা বিমানবন্দর হয়ে হায়দরাবাদের বিমানবন্দরে নামেন। হায়দরাবাদের হাসপাতালের কাছেই একটি বাসা নেন। সেখানে দুজনে চিকিৎসা নেন। 

হাসপাতালে অবস্থানকালে কলেজছাত্রী ইউএনওর ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে দেখে বুঝতে পারেন তিনি বিবাহিত এবং দুটি সন্তান রয়েছে। ইউএনওর কাছে কলেজছাত্রী এ বিষয়ে জানতে চান। কেন তাঁর কাছে এটি গোপন করা হয়েছে জিজ্ঞেস করেন। কলেজছাত্রী উত্তেজিত হলে ইউএনও তাঁকে থামতে বলেন। বলেন, এটি বাংলাদেশ নয় ভারত। হুমকিও দেন তিনি। 

পরে হাসপাতাল থেকে হোটেলে এসে মনজুর হোসেন জোবায়েতের সহযোগিতায় কলেজছাত্রীর মোবাইল ফোন কেড়ে নেন এবং তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ও চ্যাট হিস্টরি মুছে দেন। ইউএনও কলেজছাত্রীকে এ বিষয় গোপন রাখতে বলেন, কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেন। 

ওই বছরের ১২ অক্টোবর তাঁরা ভারত থেকে দেশে ফেরেন। এরপর কলেজছাত্রী তাঁর বাবার বাড়ি ফিরে যান। পরে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে দেখা করেন তাঁরা এবং আবার স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করার কথা বলেন ইউএনও। 

ভারতে অবস্থানকালে ইউএনও একাধিকবার ওই কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এভাবে একসঙ্গে দীর্ঘদিন থাকার পরও ইউএনও মনজুর হোসেন ওই কলেজছাত্রীকে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। অবশেষে কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বরাবর মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ দেন। 

এ বিষয়ে গাড়িচালক বুলবুল হোসেন বলেন, ‘আমি শুধু আমার তৎকালীন বসের হুকুম পালন করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমি ওই কলেজছাত্রীসহ তিনজনকে বেনাপোল সীমান্তে পৌঁছে দিয়েছি। এর আগেও ওই নারী ইউএনও স্যারের বাসায় এসেছেন।’ 

ওই কলেজছাত্রী বলেন, ‘ইউএনও মনজুর হোসেন আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছেন। মনজুর হোসেন বিবাহিত হয়েও তিনি অবিবাহিত পরিচয় দিয়েছেন। আমি সরল মনে তাঁর কথা বিশ্বাস করেছি। তিনি শুধু আমাকে ব্যবহারই করেছেন, সামাজিকভাবে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। আমি আমার প্রাপ্য অধিকার চাই।’ 

কলেজছাত্রীর মা বলেন, ‘ইউএনও মো. মনজুর হোসেন আমার মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমরা সামাজিকভাবে অসহায় হয়ে পড়েছি। আমার মেয়ে কলেজে যেতে পারছে না। আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি এর সঠিক বিচার চাই।’ 

অভিযোগের বিষয়ে মোবাইলে ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে ‘আমি দেখছি’ বলে কল কেটে দেন। পরে আর কল রিসিভ করেননি। 

বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও মনজুর হোসেন বাসাইল থেকে চলে যাওয়ার পর আমাকে একদিন ফোন করে জানান, একটি মেয়ে আমার বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দিয়েছে। বিষয়টি আপনি একটু দেখেন। আমি ওই মেয়েটির সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তিনি আইনের মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন।’ 

লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বলা যাবে কে দোষী, কে দোষী নয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

‘মবের হাত থেকে বাঁচাতে’ পলকের বাড়ি হয়ে গেল অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প

স্বাধীনতা পদক পাচ্ছেন এম এ জি ওসমানীসহ ৮ জন

কনের বাড়িতে প্রবেশের আগমুহূর্তে হৃদ্‌রোগে বরের মৃত্যু

বগুড়ায় মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় ছাদ থেকে পড়ে নার্সিং শিক্ষার্থীর মৃত্যু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত