Ajker Patrika

এমপি আনার হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিতে যে বর্ণনা দিলেন শিমুল ভূঁইয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ জুন ২০২৪, ২১: ০১
এমপি আনার হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দিতে যে বর্ণনা দিলেন শিমুল ভূঁইয়া

ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার পর হাড় ও মাংস আলাদা করে টুকরা টুকরা করা হয়। স্বীকারোক্তিতে এমন কথা বলেছেন আনোয়ারুল আজীম অপহরণ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া ওরফে শিহাব ওরফে মাহমুদ হাসান শিমুল ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভূঁইয়া।

এত দিন বিভিন্ন তদন্ত সূত্রে জানা যায়, এমপি আনোয়ারুল আজীমকে হত্যার পর লাশ টুকরা টুকরা করে গুম করা হয়। এবার চাঞ্চল্যকর এই মামলার আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে তথ্যই দিয়েছেন।

আজ বুধবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শিমুল ভূঁইয়া। ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তিনি।

এর আগে গত সোমবার এই মামলায় গ্রেপ্তার শিলাস্তি রহমান ও গতকাল মঙ্গলবার শিমুলের ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

স্বীকারোক্তিতে শিমুল আরও বলেছেন, ব্যবসায়িক বিরোধের কারণে এমপিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আক্তারুজ্জামান শাহীন। আর ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন আমান।

আজ দুপুরের শিমুলকে আদালতে হাজির করেন আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সিনিয়র এএসপি মাহফুজুর রহমান। তিনি এক আবেদনে উল্লেখ করেন, আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তিনি এমপি আনারকে হত্যায় মূল ভূমিকা পালন করেন বলে স্বীকার করেছেন। তিনি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে চান।

আদালত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণ করে তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

ঢাকার আদালতের শেরেবাংলা নগর থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জালাল উদ্দিন স্বীকারোক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

শিমুল ভূঁইয়া খুলনা জেলার ফুলতলা থানার দামোদর গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির নাসির উদ্দিন ভূঁইয়ার ছেলে।

সূত্র জানায়, শিমুল ভূঁইয়া আদালতকে জানিয়েছেন, তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষস্থানীয় নেতা। খুলনা, ঝিনাইদহ, যশোরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। এমপি আনারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। আবার ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামান শাহীনের সঙ্গেও এমপি আনারের ব্যবসায়িক বিরোধ ছিল। তাই শিমুল ও শাহীন দীর্ঘদিন ধরে আনারকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছিলেন। গত জানুয়ারি ও মার্চে আনারকে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

পরবর্তীকালে শাহীন বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় বসে আসামিদের সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। আনারকে ভারতের কলকাতায় নিয়ে হত্যা ও লাশ গুম করার ফন্দি আঁটেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্যবসার লোভ দেখিয়ে এমপি আনারকে কলকাতায় যেতে রাজি করান শিমুল ও অন্য আসামিরা। এমপি আনার জানান, কলকাতায় তাঁর বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে, তখন তিনি যাবেন।

কলকাতার অভিজাত নিউটাউন এলাকায় শাহীনের একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাট আছে। গত ২৫ এপ্রিল শাহীন জানান, সেখানে আরও লোক আছে, আপনারাও সেখানে গিয়ে ওঠেন।

শাহীনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ৩০ এপ্রিল শিমুল ও শিলাস্তি বাংলাদেশ থেকে গিয়ে ওই ফ্ল্যাটে ওঠেন। গত ৬ মে শিমুলের ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়াও কলকাতায় যান। তানভীর কলকাতার নিউ টাউন ও সল্টলেকের মাঝামাঝি ত্রিশিব হোটেলে ওঠেন। ওই হোটেলে থেকে তানভীর বিভিন্ন সময়ে শিমুলের সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁর পরিকল্পনা ও নির্দেশ মতো কাজ করতে থাকেন। আর ফ্ল্যাটে আগে থেকে অবস্থান করেন জিহাদ ও সিয়াম। পরে সেখানে যোগ দেন মোস্তাফিজ, তাজ, জামালসহ আরও কয়েকজন।

শিমুল জবানবন্দিতে আরও বলেন, গত ১০ মে আক্তারুজ্জামান শাহীন সবার সঙ্গে বৈঠক করে দায়িত্ব বণ্টন করে বাংলাদেশে চলে আসেন। এমপিকে আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে সর্বশেষ কলকাতা বিমানবন্দরের পাশে ওটু নামের একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে শাহীন, শিমুল ভূঁইয়া, মোস্তাফিজুর রহমান, জিহাদ, তানভীর, সিয়াম, শিলাস্তি রহমানসহ আরও কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। সেখানে হত্যার চূড়ান্ত পরিকল্পনা হয়।

শিমুল ভূঁইয়ার পরিকল্পনা মতো সবাই মিলে এমপি আনোয়ারুল আজীমকে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় তাঁর বন্ধুর বাড়ি থেকে ডেকে নিউটাউন এলাকায় সঞ্জীবা গার্ডেনসের আবাসিক ভবনে শাহীনের ভাড়া বাসায় নেওয়া হয়। সেখানেই তাঁকে হত্যা করা হয়।

শিমুল অন্য আসামিদের সহায়তায় এমপি আনারকে হত্যা করেন। এরপর হাড় ও মাংস আলাদা করেন এবং মাংসের ছোট ছোট টুকরা করে ওই ফ্ল্যাটের টয়লেটের কমোডে ফেলে দিয়ে ফ্লাশ করেন। আর হাড়সহ শরীরে অন্যান্য অংশ ট্রলিব্যাগে করে কলকাতার কৃষ্ণমাটি এলাকার জিরানগাছা বাগজোলা খালে ফেলে দেন।

শিমুল ভূঁইয়া জানান, হত্যা ও হাড়–মাংস আলাদা করার কাজে ফয়সাল, মোস্তাফিজ ও জিহাদ সরাসরি জড়িত ছিলেন। আর হাড় ও শরীরের অন্যান্য অংশ দূরে ফেলে দেওয়ার কাজে ছিলেন সিয়ামসহ অজ্ঞাতনামা দুই–একজন।

শিমুল, শিলাস্তি ও তানভীরকে গত ২২ মে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর আগে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার ঘটনায় গত ২২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা করেন তাঁর মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন।

মামলার এজাহারে এমপির মেয়ে উল্লেখ করেন, ৯ মে রাত ৮টার দিকে তাঁর বাবা মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে এমপি ভবনের বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহে রওনা হন। ১১ মে বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বললে কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলে বন্ধ পান।

গত ১৩ মে আনারের ভারতীয় নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি মেসেজ আসে। মেসেজে লেখা ছিল, ‘আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত শাহের কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নেই। পরে ফোন দেব।’

পরে আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। মেসেজগুলো বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে আরও বলা হয়, এমপি আনার ভারতে খুন হয়েছেন বলে বাদী জানতে পেরেছেন। তবে এখনো লাশ পায়নি পরিবার।

পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজীম গত ১২ মে দর্শনা–গেদে সীমান্ত দিয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। বরাহনগরের স্বর্ণ ব্যবসায়ী বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু ১৬ মে থেকে তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে না পারায় নিখোঁজ জানিয়ে ১৮ মে বরাহনগর থানায় জিডি করেন তাঁর কলকাতার বন্ধু গোপাল বিশ্বাস।

গত ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার খবর আসে। এরপর তাঁর মেয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপহরণের পর গুম করার অভিযোগে মামলা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে নতুন ত্রাস ‘সন্ত্রাসী রনি’

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৪
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত
সন্ত্রাসী মামুন হত্যার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন সন্ত্রাসী রনি। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর অপরাধজগতে নতুন পর্দা নামিয়েছেন রনি নামের এক সন্ত্রাসী। দুই লাখ টাকায় খুনি ভাড়া দিয়ে তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করিয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বলছে, রনি সানজিদুল ইসলাম ইমনের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রথমে মুদিদোকানদার, পরে ডিশ ব্যবসায়ী। এখন ঢাকার অপরাধজগতের নতুন নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে জানান, রনি মূলত মুদিদোকানি ছিলেন। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন কারাগারে থাকাকালে রনির সঙ্গে পরিচয় হয়। ইমন তাঁর মাধ্যমে অপরাধ চক্রের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করতেন। শুরুতে রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ডিশ ব্যবসা দখল, চাঁদাবাজি ও হুমকি দেওয়ার মাধ্যমে অর্থ আদায় করে কারাগারে থাকা ইমনকে পাঠাতেন। পরে সন্ত্রাসী ইমনের শিষ্যদের ব্যবহার করে বড় বড় কাজ করতে থাকেন। মিরপুর এলাকায়ও ব্যবসা বড় করতে থাকেন। এভাবে রনি ধীরে ধীরে ঢাকার অপরাধজগতের পরিচিত মুখে পরিণত হন।

ডিবির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে হত্যা করার পরিকল্পনা ছিল ইমনের। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে রনির নির্দেশে ফারুক হোসেন ফয়সাল ও রবিন আহম্মেদ পিয়াস গুলি করেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন তিনি। পুলিশ বলছে, এখন পর্যন্ত ফারুক রবিন, রুবেল, শামীম আহম্মেদ ও ইউসুফ ওরফে জীবনকে গ্রেপ্তার করতে পারলেও রনির খোঁজ মিলছে না।

ডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার রাতে নরসিংদীর ভেলানগর থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার পর তাঁরা প্রথমে ঢাকা থেকে সিলেট হয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ফারুক ও রবিন ব্যবহৃত অস্ত্র ও অব্যবহৃত গুলি রনির নির্দেশে রুবেলের কাছে রেখে আসেন। পরে রুবেল পেশায় দরজি ইউসুফের কাছে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেন।

পুলিশ জানিয়েছে, ইউসুফ মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসায় অস্ত্র ও গুলি লুকিয়ে রেখেছিলেন। মোটরসাইকেল, অস্ত্র ও নগদ ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। রনি পারিশ্রমিক হিসেবে এই টাকা দুই ভাগে ভাগ করে দুই শুটারকে দেন।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, জামিনে মুক্তির পর মামুন আবার অপরাধজগতে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। রনিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁর এলাকা দখল করতে চান। তখনই শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের সঙ্গে পরার্মশ করে মামুনকে পথ থেকে সরানোর পরিকল্পনা করেন রনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী দুই লাখ টাকায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করেন।

পুলিশ ও ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বের ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী, যাঁরা প্রভাব বিস্তার ও এলাকা দখল নিয়ে লড়াই করছিলেন। ইমনের সহযোগী হিসেবে রনি দ্রুত অপরাধজগতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ মামুন হত্যার পর তিনি এখন ঢাকার অপরাধজগতে নতুন চরিত্র। ডিবি অভিযান চালিয়ে মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তাঁর সহযোগীদের ধরার চেষ্টা করছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঁচজন রিমান্ডে

মামুন হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচজনকে গতকাল মোহাম্মদপুর থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে ডিবি পুলিশ। আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্র প্রত্যেকের চার দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ মামুন হত্যার ঘটনায় ২ শুটার শনাক্ত, গ্রেপ্তার যেকোনো সময়

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ০৬
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে তারিক সাইফ মামুনকে গুলিতে হত্যা করা হয়। ইনসেটে তারিক সাইফ মামুন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে তারিক সাইফ মামুনকে গুলিতে হত্যা করা হয়। ইনসেটে তারিক সাইফ মামুন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পুরান ঢাকায় ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ তারিক সাইফ মামুনকে হত্যার ঘটনায় দুই পেশাদার শুটারসহ চারজনকে শনাক্ত করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। শুটার দুজনের মধ্যে একজন ধানমন্ডি, আরেকজন তেজগাঁও এলাকার একাধিক মামলার আসামি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছে, যেকোনো সময় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে।

গতকাল সোমবার (১০ নভেম্বর) সকালে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের ফটকে মামুনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, হামলার সময় দুজন শুটার পিস্তল চালিয়ে হামলা চালায়, তবে আশপাশে অন্তত দুটি ব্যাকআপ টিম ছিল, ওই টিমের সদস্যদের শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে। মামুনকে হত্যার পর হামলাকারীরা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত দিয়ে পালানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে তারা দেশের ভেতরেই অবস্থান করছে এবং তাদের ধরার জন্য পুলিশ একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। এ অবস্থায় সীমান্তে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার মো. মোস্তাক সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা দুজনকে শনাক্ত করেছি। তারা দেশেই আছে। তাদের গ্রেপ্তারের খুব কাছাকাছি রয়েছি।’

ডিএমপির অপর এক কর্মকর্তা বলেন, শুটাররা মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি পরিধান করলেও প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। মামুন হত্যার আগে অন্তত একজন তাঁকে অনুসরণ করছিল। হামলার আগে তাদের পরিকল্পনা সূক্ষ্মভাবে ছিল এবং তারা পেশাদারত্বের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম রুবেল, অপরজন ইব্রাহীম। এ ছাড়া আরও দুটি দল আলাদাভাবে হত্যাকাণ্ডে ব্যাকআপ টিম হিসেবে কাজ করেছে। এতে সোহেল ও কামাল নামে দুই সন্ত্রাসীর নাম এসেছে।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একাধিক পুলিশের টিম কাজ করছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। তাদের শিগগিরই গ্রেপ্তার করা হবে।’

মামুনের একসময় ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও বন্ধু ইমনের সঙ্গে পারিবারিক ও চাঁদাবাজি-সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব তীব্র ছিল। এ কারণে ইমনের অনুসারীরা একাধিকবার হত্যার পরিকল্পনা করেছিল। ২০১৭ সালে তেজগাঁওয়ে মামুনের ওপর হামলার চেষ্টা হয়েছিল, তখনো তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীল নিহত হন।

মামুন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ জানিয়েছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন এবং শুটারদের দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চলছে।

গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (লালবাগ বিভাগ) মল্লিক এহসান আহসান সামী জানান, গুলিতে নিহত ব্যক্তিটি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। তিনি কোনো ব্যবসায়ী নন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধান ৩ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত
সেলিম প্রধান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর গুলশান থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ক্যাসিনো-কাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. হারুনুর রশিদ।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ওই মামলায় সেলিম প্রধানকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোজাম্মেল হক মামুন ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গত ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বারিধারার একটি রেস্তোরাঁ থেকে সেলিম প্রধানসহ ৯ জনকে আটক করে পুলিশ। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ৬ দশমিক ৭ কেজি ওজনের সিসা জব্দ করা হয়। এ ছাড়া সাতটি সিসা স্ট্যান্ড ও অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় মাদক আইনে মামলা করা হয়। পরে সেলিম প্রধানকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আরেক মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত

জেনেভা ক্যাম্পে জাহিদ হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৩

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে ‘মাদক কারবারিদের’ দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে জাহিদ নিহতের ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ইবনে মিজান আজকের পত্রিকাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বুধবার ভোররাতে দুই গ্রুপ মাদক কারবারির সংঘর্ষে ককটেল বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ (২০)। পরিবারের দাবি, দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে জাহিদের পায়ের কাছে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ সময় স্প্লিন্টার তাঁর ঘাড় ও পিঠে বিদ্ধ হয়। আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। সংঘর্ষের পর ঘটনাস্থলে অভিযান পরিচালনা করে র‍্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনী। অভিযানে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন ও তিনটি তাজা গুলিসহ বিপুল পরিমাণ দেশি অস্ত্র ও পেট্রলবোমা উদ্ধার করা হয়।

জাহিদের ভগ্নিপতি মো. উজ্জ্বল জানান, রাজধানীর কল্যাণপুরে মিজান টাওয়ারে একটি মোবাইল ফোন সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করতেন জাহিদ। বুধবার রাতে বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খেতে যাওয়ার সময় তাঁরা সংঘর্ষের মধ্যে পড়েন। পরে হাসপাতালে জাহিদের মৃত্যু হয়।

তবে পুলিশ বলছে, ককটেল তৈরির সময় বিস্ফোরণে নিহত হন জাহিদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত