আয়ুর্বেদিক ওষুধের আড়ালে মাদক পানীয় বিক্রি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২২, ১৪: ৩৬
Thumbnail image

রাজধানীর পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকায় মধ্যরাতে অভিযান চালিয়েছে র‍্যাব। অভিযানে একটি বাড়ি থেকে আয়ুর্বেদিক ওষুধের নামে একধরনের মাদক ও যৌন উত্তেজক মিশ্রিত কোমল পানীয় তৈরির কারখানা ও বিপুল পরিমাণ মাদক মিশ্রিত পানিয় জব্দ করেছে। এসব পানীয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আউটলেট খুলে কিশোর ও তরুণদের কাছে বিক্রি করে আসছিল একটি চক্র। অভিযানে চক্রের মূল হোতাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

গ্রেপ্তারকৃতেরা হলেন মূল হোতা মো. ওয়াজেদ ইসলাম শান্ত (২০), তাঁর সহযোগী মো. রাসেল (২৯), মো. হৃদয় (২৯), মো. মুরসালিন আহম্মেদ (১৮), মো. সবুজ মিয়া (১৮) ও মো. নান্টু (৫২)। তাঁদের রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় কারখানা থেকে ৩ হাজার ৫০০ বোতল বিভিন্ন প্রকার মাদক মিশ্রিত পানীয় এবং এই ওষুধ তৈরির কাজে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত ইয়াবার গুঁড়া ও গাঁজাসদৃশ বস্তু এবং পানীয়টি তৈরির বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার মধ্যরাতে নারিন্দায় অভিযানস্থলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমরা বেশ কিছু অভিভাবকের কাছ থেকে অভিযোগ পাই যে কামরাঙ্গীরচরের খোলামোরা এলাকায় একটি দোকানে আয়ুর্বেদিক ওষুধের আড়ালে একপ্রকার পানীয় বিক্রি করা হচ্ছে। তাদের ছেলেরা এই আয়ুর্বেদিক ওষুধের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে এবং তা খাওয়ার পর মাদকাসক্তদের মতো আচরণ করেছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। এমন তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-২-এর গোয়েন্দা দল আয়ুর্বেদিকের দোকান থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠায়। পরীক্ষায় দেখা যায়, এই পানীয়তে গাজা, ইয়াবা, ডান্ডি তৈরিতে ব্যবহৃত টলুইন নামক ‘ক’ শ্রেণির মাদকের উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া তীব্র ঘুমের ওষুধ ও যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপকরণ, অ্যাসিডজাতীয় দ্রব্যাদিসহ বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যায়, যা গ্রহণ করলে কিডনিসহ শরীরের নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমন ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে র‍্যাব-২ নারিন্দার ওই কারখানায় এবং কামরাঙ্গীরচর, কাঁটাবন, নাজিরা বাজার, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার বিভিন্ন আউটলেটে অভিযান চালায়।

গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার মঈন বলেন, চক্রটি ফার্মেসির নামে লাইসেন্স নিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে আয়ুর্বেদিক ওষুধ বিক্রির আড়ালে মাদক ও যৌন উত্তেজক উপকরণ মিশ্রিত পানীয় তৈরি করে আসছিল। কথিত এই আয়ুর্বেদিক পানীয়ের প্রতি বোতলের দাম ১৬০ থেকে ২০০ টাকা।

কমান্ডার মঈন আরও জানান, তারা দু-তিন বছর ধরে আয়ুর্বেদিক ওষুধের ক্ষতিকর ও নেশাজাতীয় এই পানীয় উৎপাদন ও বিক্রয় করছে। তারা রাজধানীর নারিন্দার কারখানায় এই পানীয় উৎপাদন করে কামরাঙ্গীরচর, কাঁটাবন, নাজিরা বাজার, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন জায়গায় আউটলেটের মাধ্যমে বিক্রয় করত। রাজধানীর বিভিন্ন আউটলেট থেকে প্রতিদিন ৩০০-৪০০ বোতল পানীয় বিক্রি হতো। এই পানীয় বানাতে তারা ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে কারখানা চালাত। বিভিন্ন সময়ে বাসা পরিবর্তনের মাধ্যমে অবস্থান পরিবর্তন করত। অল্প দামে পাওয়া যাওয়ায় এবং নেশাজাতীয় দ্রব্যাদির উপস্থিতি থাকায় তরুণদের কাছে পানীয়টির চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছিল বলে জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত