Ajker Patrika

তরুণীকে চাকরির প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব, তদন্তের মুখে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা

সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ২১: ০৫
তরুণীকে চাকরির প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্কের প্রস্তাব, তদন্তের মুখে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে এক তরুণীর সঙ্গে অশোভন আচরণ ও যৌন হয়রানি চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে এক সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওই তরুণী গত ১৮ ডিসেম্বর (রোববার) মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

এদিকে অভিযোগটি জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের জমা দেওয়ার পর জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্রের উপপরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাককে প্রধান করে একটি তিন সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

অপরদিকে তরুণী সোমবার সকালে নিজে উপস্থিত হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তদন্ত কমিটির কাছে তাঁর লিখিত বক্তব্য ও ওই কর্মকর্তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলার ২১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের অডিও রেকর্ড জমা দিয়েছেন।

তরুণীর লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, কয়েক দিন আগে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মেহেদি হাসানের নিকট ওই তরুণী আসেন ভ্যাকসিন নিয়ে আলোচনা করার জন্য। ভ্যাকসিন দেওয়া হবে এই মর্মে ওই তরুণীর মোবাইল নম্বরটি রেখে দেন এই কর্মকর্তা। এরপর থেকে মোবাইলে যৌন উত্তেজক কথাবার্তা রাতের বেলায় ফোনে উৎপাত ও উত্ত্যক্ত করেন তিনি। প্রতিরাতে অতিমাত্রায় উৎপাত করায় ওই তরুণী কৌশলে ওই কর্মকর্তার কথা রেকর্ড করে রেখে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করে সঠিক বিচার প্রার্থনা করে শাস্তি দাবি করেন।

ওই তরুণী আরও বলেন, ‘সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মেহেদি হাসান আমাকে তাঁর অফিসে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। এরপর তাঁর অফিস বা হোটেলে রাত কাটানোর জন্য প্রস্তাব দেন। একটি মেয়ের শারীরিক গঠনের যৌন উত্তেজক সব বিষয়ে ফোনে আলোচনা করে তিনি। একপর্যায়ে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্কের কথা বলেন। ওই কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে যা বলেছেন তা সব বর্ণনা করা যাবে না। সিডির রেকর্ড শুনলে তদন্ত কমিটি সব বুঝতে পারবে। এমনকি তাঁর অফিসের গাড়ি দিয়ে আমাকে রাতে তাঁর অফিসে আনবে এবং ভোরে বাসায় দিয়ে আসবে। তিনি ২১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ড সময় যত কথা বলেছেন তাঁর সব প্রস্তাবে আমি রাজি হলে তিনি আমাকে তাঁর অফিসে চাকরি দেবেন। এমনকি অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি ও চাপ প্রয়োগ করছেন। আমার মতো আরও অনেক নারী এ অফিসে প্রশিক্ষণ নিতে আসে। তাদেরকেও একই কায়দায় বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিয়ে থাকেন ওই কর্মকর্তা।’

এদিকে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে কয়েকটি সরকারি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব প্রকল্পে কর্মরত আছেন নারীরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের কয়েকজন কর্মরত নারী কর্মচারীরা এই কর্মকর্তার এ ধরনের ঘটনা নিয়ে চিন্তিত বলে জানান।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মেহেদি হাসান বলেন, ‘ওই তরুণীর অভিযোগ সত্য নয়। সে আমার কাছে ভ্যাকসিনের জন্য এসেছিল। তার এক চাচাতো ভাই এ অফিসে ভ্যাকসিনের কাজ করেন। তাকে এখান থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করেন ওই নারী। তার ভাইকে বাদ না দেওয়ায় সে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন। তার সঙ্গে অশোভন আচরণ করা হয়নি। তাকে সঠিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ 

তবে তিনি ২২ মিনিটের অডিও রেকর্ডে তরুণীর সঙ্গে কিছু আপত্তিকর কথাবার্তা বলেছেন বলে স্বীকার করেন এই কর্মকর্তা। 

তদন্ত কর্মকর্তা ডা. আব্দুল রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আগামীকাল মঙ্গলবার তদন্তের দিন ধার্য করা হয়েছে। তদন্তটি ৫ কার্য দিবসে রিপোর্ট দেওয়া হবে। তদন্তে সত্য মিথ্যা যাই হোক তা যথা সময়ে রিপোর্ট দেওয়া হবে বলে।’ 

মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুল ইসলাম ওই তরুণীর অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই তদন্ত কমিটিকে ৫ কার্য দিবসে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা মিললে অবশ্যই ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত