গোপালগঞ্জে দলবদ্ধ ধর্ষণ: অভিযুক্তরা অপরাধচক্রের সদস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে দলবদ্ধ ধর্ষণে অভিযুক্তরা স্থানীয় অপরাধচক্রের সদস্য। তাঁদের প্রত্যকের নামে থানায় মামলা রয়েছে। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাব বলছে, প্রথমে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ করে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। প্রতিবাদ করলে বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে তুলে নিয়ে গিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, রাকিব মিয়া ওরফে ইমন, পিয়াস ফকির, প্রদীপ বিশ্বাস, নাহিদ রায়হান, হেলাল ও তুর্য মোহন্ত। এ নিয়ে ওই ধর্ষণের মামলায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর আগে গোপালগঞ্জ থেকে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) প্রক্টর অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‍্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ধর্ষণের কথা শিকার করেছেন বলে জানান তিনি।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতরা মূলত রাকিবের নেতৃত্বে স্থানীয় একটি অপরাধচক্রের সদস্য। তাঁরা সবাই গোপালগঞ্জ ও এর আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। এর মধ্যে তুর্য মোহন্ত ছাড়া অন্যরা প্রায় ৮-১০ বছর ধরে নবীনবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন, আড্ডা, চুরি-ছিনতাই, জুয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন। তাঁরা রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতেন। তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেপ্তারকৃতরা ইজিবাইক দিয়ে নবীনবাগ হেলিপ্যাড এলাকায় যাওয়ার পথে ভুক্তভোগীকে তাঁর বন্ধুসহ দেখেন। ইজিবাইক থামিয়ে তাঁদের নাম-পরিচয় জিজ্ঞাসা করেন। এ সময় তাঁরা অশালীন মন্তব্য করতে থাকেন। এ নিয়ে ওই ছাত্রীর বন্ধুর বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। তাঁদের ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে টানা হেঁচড়া করতে থাকলে ভুক্তভোগীর বন্ধু বাধা দেন। তখন তাঁকে মারধর করা হয়। পরে ভুক্তভোগীকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। তাঁরা ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।’ 
র‍্যাব কমান্ডার জানান, গ্রেপ্তারকৃত রাকিব মিয়া স্থানীয় একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল ও আলিম পাস করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে রিসেপশনিস্ট হিসেবে চাকরি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে মাদক ও মারামারির মামলা রয়েছে।

গোপালগঞ্জের একটি পাওয়ার হাউসে দিনমজুরির কাজ করেন পিয়াস ফকির। প্রদীপ বিশ্বাস স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে হোম সার্ভিসে এসি ও ফ্রিজ মেরামতের কাজ করেন। নাহিদ রায়হান স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।

হেলাল স্থানীয় একটি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এ ছাড়া তিনি একটি মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার।

তুর্য খুলনার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৮ সালে ডিপ্লোমা শেষ করে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনার জন্য বিদেশে যান। শেষ বর্ষে থাকাকালীন কোভিড পরিস্থিতির কারণে দেশে আসেন এবং গোপালগঞ্জ সদরে গার্মেন্টস পণ্যের ব্যবসা শুরু করেন বলে জানিয়েছেন। তুর্যের বিরুদ্ধে একটি মারামারির মামলা রয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আল মঈন বলেন, ‘ভুক্তভোগী ছাত্রী গ্রেপ্তারকৃতদের আগে চিনতেন না। তাঁরা হেলিপ্যাড এলাকায় নিয়মিত গাঁজা সেবন করতেন। তাঁদের বিরুদ্ধে এ সংক্রান্তে মামলাও রয়েছে। ভিকটিম ও তাঁর বন্ধু এই ছয়জনকে নিশ্চিত করেছেন। তাঁদের কেউ কেউ সরাসরি ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত, কেউ লাঞ্ছনার সঙ্গে জড়িত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত