গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় নিখোঁজের সাড়ে তিন মাস পর রেক্সি রোজারিও (৪৩) নামের এক ব্যক্তির লাশ ডোবা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার লাশটি উদ্ধার করা হয়। গত ১০ জুলাই তাঁকে বাড়ি থেকে মোবাইল ফোনে কল দিয়ে ডেকে নিয়ে যান পাশের বাড়ির বন্ধু লিঙ্কন জন রোজারিও (৩৯)। এরপর তাঁকে হত্যার পর অপহরণের নাটক সাজান। লিঙ্কনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির জেরে প্রতিশোধ নিতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি।

আজ শুক্রবার সকালে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ লিঙ্কন রোজারিওকে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারাম এলাকার সুলতান উদ্দিনের মালিকানাধীন মাছের ঘের থেকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ওই মাছের ঘেরে ভুয়া পরিচয়ে চাকরি করছিলেন।

তাঁকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর কবির।

পরে তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কালীগঞ্জ উপজেলার তুমুলিয়া ইউনিয়নের দড়িপাড়া এলাকায় টঙ্গী-ঘোড়াশাল-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের একটি ডোবা থেকে রেক্সি বাবু রোজারিওর গলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত রেক্সি বাবু রোজারিও উপজেলার দড়িপাড়া এলাকার মুকুল রোজারিওর একমাত্র ছেলে। গ্রেপ্তার লিঙ্কন জন রোজারিও একই এলাকার মৃত লিউ রোজারিওর ছেলে

নিহতের বাবা মুকুল রোজারিও জানান, ‘গত ১০ জুলাই দুপুরে ছেলে রেক্সি বাবু রোজারিওর মোবাইল ফোনে কল আসে। পরে সে তার মাকে দড়িপাড়া বাজারে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। ওই দিন গভীর রাতেও ছেলে বাড়ি ফিরে না আসায় সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজাখুঁজি করে রাতেই কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করি। একপর্যায়ে আমার ছেলের মোবাইল থেকে কল করে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা জানায় ছেলেকে জীবিত পেতে হলে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ নিয়ে গাজীপুর শাল বনে আসেন।’

তিনি আরও বলেন, এরপর থেকে ছেলের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে ছেলের পূর্ব পরিচিত লিংকন জন রোজারিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন সেসহ তাঁর সহযোগী অজ্ঞাতনামা কয়েকজন তাঁর ছেলেকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করছে। এ ঘটনায় তিনি কালীগঞ্জ থানায় মামলা করেন। মামলায় তাঁর ছেলেকে অপহরণ ও খুনের কথা উল্লেখ করেন। এ ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিলেন লিঙ্কন জন রোজারিও।

পুলিশের সূত্র জানায়, আসামি লিঙ্কন জন রোজারিও একদিন রেক্সি বাবু রোজারিওকে কটাক্ষ করে বলে তুই হিজড়া। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর থেকে ক্ষিপ্ত ছিল লিঙ্কন জন রোজারিও। পরবর্তীতে প্রতিশোধ নিতে সে রেক্সি বাবু রোজারিকে হত্যা করে লাশ ডোবায় ফেলে রেখে অপহরণের নাটক সাজায়। ঘটনার পর থেকে সে এলাকায় পলাতক ছিল।

গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) জাহাঙ্গীর কবির বলেন, ‘বাদী মুকুল রোজারিওর সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করে আসামি লিঙ্কন জন রোজারিওর অবস্থান নিশ্চিত হই। পরে নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর গ্রামের সুলতান উদ্দিনের মালিকানাধীন মাছের ঘেরে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সে ভিকটিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা এবং লাশের সঙ্গে বালুর বস্তা বেঁধে ডোবায় ফেলে দেওয়ার কথা স্বীকার করে।’

আসামির স্বীকারোক্তিতে শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে পুলিশ কালীগঞ্জ উপজেলার দড়িপাড়া গ্রামের রেললাইনের পাশের ডোবা থেকে রেক্সি বাবু রোজারিওর গলিত লাশ উদ্ধার করে। আগামীকাল পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ঘটনায় বিস্তারিত প্রেস ব্রিফিং বা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বিস্তারিত জানাবেন।

লাশ উদ্ধারের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন—গাজীপুর জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম, কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান, কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলাউদ্দিন, ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রাজিউল্লাহসহ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কর্মকর্তাবৃন্দ।