পর্নো সহিংসতা: শিশুদের নিপীড়নের শিকার হচ্ছে শিশুরাই

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫: ৫৯
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৪, ১৬: ২২

শিশুদের যৌন নিপীড়নের পেছনে এখন সবচেয়ে বড় অপরাধী শিশুরাই। মামলার পরিসংখ্যান অনুসারে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাজ্য পুলিশ। তাদের মতে, মোবাইল ফোনে সহিংস পর্নোগ্রাফি সহজলভ্য হওয়ায় মেয়েশিশুদের ওপর আক্রমণের প্রবণতা বাড়ছে ছেলেশিশুদের। পুলিশের তথ্যমতে, শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে খবরটি দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাজ্য পুলিশের তথ্যমতে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অভিযুক্তদের ৫২ শতাংশই অপ্রাপ্তবয়স্ক। ন্যাশনাল পুলিশ চিফস কাউন্সিলের (এনপিসিসি) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুদের বিরুদ্ধে প্রাপ্তবয়স্কদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ সাধারণত আরও গুরুতর। তবে ১৭ বছর বা তার কম বয়সীদের দ্বারা যৌন অপরাধ বৃদ্ধির কারণে তারা উদ্বিগ্ন।

এই প্রবণতার ভয়াবহতা তুলে ধরতে যুক্তরাজ্য পুলিশ একটি ঘটনার কথা উল্লেখ্য করেছে যেখানে চার বছরের এক ছেলেশিশুর বিরুদ্ধে তার বোনের একটি অশালীন ছবি সামাজিক প্ল্যাটফর্মে আপলোড দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

২০২২ সালে ইংল্যান্ড ও ওয়েলশ পুলিশের কাছে শিশুদের বিরুদ্ধে যৌন অপরাধের মোট ১ লাখ ৭ হাজার অভিযোগ এসেছে। অপরাধের তালিকায় ধর্ষণ থেকে শুরু করে অশালীন ছবি তৈরি এবং তা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। এনপিসিসি বলেছে, অভিযুক্তের মধ্যে ৫২ শতাংশই কিশোর। এক দশক আগেও এই সংখ্যা ছিল এখনকার এক-তৃতীয়াংশ।

বছরটিতে পুলিশ ১০ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের বিরুদ্ধে ১৪ হাজার ৮০০টি ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ পেয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে যাদের শিশু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে, তার বেশির ভাগই ছেলে।

এনপিসিসির শিশু সুরক্ষা বিভাগের প্রধান ইয়ান ক্রিচলি বলেন, ‘পরিসংখ্যান মতে এটি মূলত লিঙ্গভিত্তিক অপরাধ—যেখানে অপরাধকারী হয় ছেলে এবং শিকার হয় মেয়েরা। আমি মনে করি, সহিংস পর্নোগ্রাফি এখন সবার কাছেই সহজে পৌঁছায় এবং ছেলেরা এসব আচরণকে স্বাভাবিক মনে করছে। তারা অনলাইনে যা দেখছে, সেটা আরও বেশি মাত্রায় করার চেষ্টা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্পষ্টতই স্মার্টফোনের সহজপ্রাপ্যতা কেবল ১১ থেকে ১৬ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রেই ঘটেনি. বরং ১০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রেও তা ঘটেছে। অবস্থার এই অবনতি এভাবেই চলবে কি না, তা নিয়ে সমাজে আলোচনা হওয়া উচিত।’

পুলিশ বলেছে, এসব যৌন নির্যাতনের ঘটনার এক-তৃতীয়াংশই ঘটেছে পরিবারের মধ্যে। নির্যাতনের শিকার প্রতি ১০ জনের মধ্যে আটজনই তাদের নির্যাতনকারীকে চেনে। পুলিশের অনুমান, সংঘটিত প্রতি ছয় ঘটনার মধ্যে মাত্র একটিই তাদের কাছে রিপোর্ট করা হয়।

এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করেও যৌন অপরাধের ঘটনা ঘটছে বলে জানান ইয়ান ক্রিচলি। এর মাধ্যমে সাধারণত ডিজিটাল উপায়ে নারীদের ছবি এমনভাবে পরিবর্তন করা হয়, যাতে তাদের দেখতে নগ্ন মনে হয়।

ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সির শিশু যৌন নির্যাতন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর ওয়েন্ডি হার্ট বলেন, ‘আমরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপব্যবহারের ফলে এমন সব অস্বাভাবিক (হাইপার রিয়ালিস্টিক) ছবি এবং ভিডিও দেখতে পাচ্ছি, যেখানে শিশুদের রক্ষা করা আমাদের জন্য অনেক বেশি কঠিন হয়ে গিয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত