Ajker Patrika

গ্রেপ্তারের আগে আসামির বয়ান: কৃষি প্রণোদনার বীজ ও সার যায় যাদের ‘পেটে’

আব্দুর রহিম পায়েল ও আশরাফুল আলম আপন, রংপুর
আপডেট : ০৮ মে ২০২৩, ১৫: ০৪
গ্রেপ্তারের আগে আসামির বয়ান: কৃষি প্রণোদনার বীজ ও সার যায় যাদের ‘পেটে’

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বিপুল পরিমাণে কৃষি প্রণোদনার ধানবীজ ও রাসায়নিক সার উদ্ধার করা হয় গত মাসে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গুদাম থেকে দুটি ভ্যানে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক ধান ব্যবসায়ী এসব সার ও বীজ নিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। পরে আটক ভ্যান দুটির চালকের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা আরও ১৬৭ বস্তা ধানবীজ ও ১২ বস্তা সার জব্দ করে পুলিশ। 

গত ৭ এপ্রিল উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আলমগীর হোসেনের (৫০) নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়। 
 
আলমগীর হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তাঁর বাড়িতে কথা হয় আজকের পত্রিকার। এ সময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয় এসব বীজ ও সার কীভাবে তিনি সংগ্রহ করেন। জবাবে আলমগীর বলেন, ‘আমি  শুধু গঙ্গাচড়া থেকেই এসব বীজ কিনি না। আমি পাশের কয়েকটি উপজেলা থেকেও কিনি। সেখানেও আমার মতো অনেক পাইকার আছেন।’

তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় গঙ্গাচড়া উপজেলায় কার কার কাছ থেকে এসব বীজ কিনেছেন তিনি। আলমগীর বলেন, ‘কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুলের কাছ থেকে ৪৫ বস্তা ধানবীজ কিনেছি। পীরের হাটের মতিয়ারের কাছ থেকে কিনেছি ১৬ বস্তা। বড়বিলের চেয়ারম্যানের পিএস পলাশের কাছ থেকে ৩০ জনের ছয়টি স্লিপের মাল কিনেছি। গমের বীজ বিতরণের সময় তাঁদের সঙ্গে দাম না বনায় সন্ধ্যার সময় উপজেলা পরিষদ থেকে সব গম ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে চৌধুরী হাট বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। বড়বিলের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ওয়াসিমের কৃষি অফিসের লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তিনিও আমার কাছে ২০ বস্তা বীজ বিক্রি করেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসের কুদ্দুস আমার কাছে পাঁচজনের একটি স্লিপ বিক্রি করেন।’

এ বিষয় সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্লিপ বিক্রির বিষয়ে আমি জানি না। তবে যদি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আমার নাম দিয়ে থাকে তাহলে আমি তার ঘাড়ে পাড়া দিয়ে সেই স্লিপ আদায় করব। আমি স্লিপ না পেলে যদি নিউজে আমার নাম আসে, তাহলে আমি তোমার নামেও মানহানির মামলা করব।’

আলমগীর আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মোক্তার আমার কাছে ১০ প্যাকেট পাটের বীজ ২০ টাকা প্যাকেট দরে বিক্রি করেন। ওরা কৃষি অফিস থেকে এগুলো এমনি নেয়। আমার বাড়ির পাশে চাম্মি ও তাঁর ছেলে শামিম—এমন কোনো সরকারি প্রণোদনা নেই যা তাঁরা পান না। কয়েক দিন আগেও আমার কাছে শামিম অগ্রিম টাকা নিয়েছেন।’ 

বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে শামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিএস রুবেল হোসেন আমার কাছে আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি চায়। আমি তা দিয়ে আসি। ওই দিনে আমাকে মাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে মাল দেয়নি। তারপর আমার মাল আলমগীরের কাছে দেয়। সেই দিন আলমগীর মাল নিয়ে যায়। সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মাল আটক করেন। আমি কারও কাছে অগ্রিম কোনো টাকাপয়সা নেইনি।’

বীজ ও সার বেহাত চক্রে কয়েকজন সাংবাদিকও জড়িত বলে জানান আলমগীর। তিনি বলেন, ‘গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে বাড়ি এমন চার-পাঁচজন সাংবাদিক। এরা আগেই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। টাকা নিয়ে আমাকে কৃষি অফিসের হাবিবুরের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। হাবিবুর পরে আমাকে স্লিপ দেয়।’  

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এসব বীজ বিক্রি করেন কি না—এ বিষয় জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এখানে যতজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আছেন, তাঁদের সবার একজন করে নিজস্ব লোক আছেন। তাঁদের দিয়ে তাঁরা পাঁচ-সাতটা করে স্লিপের মাল তুলে একখানে জমা করেন। এরপর আমাকে ডাকলে আমি নগদ টাকা দিয়ে মালগুলো কিনে নিই। যখন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সরাসরি আসেন তখন আরও বেশি করে এসব মাল বিক্রি হয়। তার কারণ, প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাঁদের ভাগের স্লিপ বিতরণ না করে বিক্রি করে দেন।’

এ সময় আলমগীরের কাছে জানতে চাওয়া হয় কৃষকের এনআইডির ফটোকপি ও ছবি ছাড়া তো এসব বীজ ও সার তোলা সম্ভব নয়। তাহলে কী করে এসব মাল তোলেন তাঁরা। আলমগীর বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তাঁদের এলাকার মানুষ বিভিন্ন সাহায্যের জন্য আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি জমা দিয়ে  থাকেন। এসব জমা দেওয়া আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি ব্যবহার করে তাঁরা এ ধরনের প্রণোদনার মাল তুলে থাকেন। কৃষি অফিসের লোকজন তো আর কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করে প্রণোদনা দেন না।’ 

এ বিষয়ে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এসব বীজ বিক্রির বিষয় অস্বীকার করেন তাঁরা।

বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কেন সরকারি বীজ বিক্রি করব। আমি কোনোভাবেই সরকারি বীজ কারও কাছে বিক্রি করিনি।’ তবে এলাকার লোকজন জানান, কৃষি অফিসের লোকদের সঙ্গে তাঁর ‘ভালো সম্পর্ক’ থাকায় বীজ বাড়িতে এনে বিক্রি করেন এনামুল।

বড়বিল ইউনিয়নের ভ্যানচালক ওয়াসিমের বাড়িতে গেলে কথা হয় তাঁর স্ত্রী নাসিমা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় তাঁর কাছে বীজ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামরা আবাদ করি সেই সার আনি বাড়িত থুই। হামরা কিসের সরকারি বীজ বেচাই।’

তাঁর বাড়ির আশপাশের একাধিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক। তিনি এসব সার ও বীজ কৃষি অফিস থেকে এনে বাড়িতে বিক্রি করেন। তাঁর বাড়িতে এসে এলাকার কৃষকেরা প্রণোদনার ধান ও ভুট্টা বীজসহ সরকারি বিভিন্ন ধরনের বীজ কিনে নিয়ে যান।

গঙ্গাচড়া উপজেলায় এসব প্রণোদনা তিনি ছাড়া আর কারা কেনেন জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের ভূটকা গ্রামের বীজ ও সার ব্যবসায়ী আব্দুল কালাম, বড়বিল ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ওয়াসিম, কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুল, ওই ইউনিয়নের মতিসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন এসব প্রণোদনার সার ও বীজ কেনেন।’

এসব বীজ কেনার পর কোথায় বিক্রি করেন—এ প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, ‘গমের বীজগুলো একেকটি ১০ কেজির বস্তা প্রতিটি ১১০০ টাকা করে কিনে আমি ঠাকুরগাঁওয়ের এক বিএডিসির ডিলারের কাছে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আমাদের এখানে গমের তেমন আবাদ হয় না। আর যারা এসব প্রণোদনার গমবীজ পান, তাঁরা বেশির ভাগ কৃষক না। আর যে দুই-একজন কৃষক বীজ পান, তাঁরা চাষ করেন। ধান, ভুট্টা ও সরিষার বীজগুলো তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের বিএডিসির ডিলারদের কাছে বিক্রি করি।’

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি এখন বুঝতে পারছি, এসব মাল কেনা আমার ঠিক হয়নি। আমি একটা কথা বলতে চাই, আমি তো আমার হক টাকা দিয়ে মাল কিনেছি। আমি তো আর চুরি করে এসব মাল নিয়ে আসি নাই। যদি আমার নামে মামলা হয়। তাহলে তাদের নামেও মামলা হওয়া দরকার। যারা এসব মাল মানুষের নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রণোদনার যেসব বীজ দেওয়া হয়, সেগুলো প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছায় না।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ৪ হাজার ৪০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ৫ কেজি আউশ ধানবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার; ৭৮০ জন কৃষকের মাঝে ২ কেজি করে ভুট্টাবীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার; ৮৮০ জন কৃষকের মাঝে ২০ কেজি করে গমবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার; ২ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে ১ কেজি করে পাটবীজ, ১০ কেজি  এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার এবং ৪ হাজার কৃষকের মাঝে হাইব্রিড চমক জাতের ২ কেজি করে ধানবীজ দেওয়ার কথা ছিল। তবে এসব ধানবীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ না করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নামমাত্র কয়েকজন কৃষকের মাঝে বিতরণ করে বাকি সব মাল স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। কৃষকেরা বলেন, এটি হওয়ার একমাত্র কারণ কৃষি অফিসার বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দুজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনার মাল যা-ই আসুক না কেন, এগুলো এভাবেই চলে। যে সময় এসব প্রণোদনা দেওয়া হয়, সে সময় কৃষকদের দিলেও সেগুলো কৃষকদের কাজে আসে না। আর যখনই এসব প্রণোদনা আসে দলীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজনের একটা চাপ থাকে। এ বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানে। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, ‘কারা এর সঙ্গে জড়িত—আমি এখন কিছু বলতে পারব না। তবে দুটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলির ঘটনায় সন্দেহভাজন ফয়সাল ওরফে দাউদ কে, মাস্ক পরা ব্যক্তিটিই কি তিনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩: ০৫
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত
হাদিকে গুলি করা সন্দেহভাজন। ছবি: সংগৃহীত

জুলাই–আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আলোচিত মুখ ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগে মাধ্যমে বহুল আলোচিত নাম ফয়সাল করিম মাসুদ কিংবা দাউদ খান। গতকাল শুক্রবার হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর থেকেই এই দুই নামে এক ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।

হাদিকে গুলির ঘটনায় মাস্ক পরা দুই তরুণ জড়িত বলে তাঁর সহযোদ্ধাদের সন্দেহ। তাঁদের দাবি, কয়েকদিন ধরে দুই তরুণ মাস্ক পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদির সঙ্গে গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। বার বার তাঁদের মাস্ক খুলতে বলা হলেও তাঁরা রাজি হননি। হাদিঘনিষ্ঠদের সন্দেহ, এই তরুণরা হাদিকে হত্যার উদ্দেশ্যে তাঁর গতিবিধি বোঝার জন্য তাঁর সঙ্গে যুক্ত হন।

দুজনের মধ্যে মাস্ক পরা একজন হাদির পাশে বসে আছে— এমন একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই তাকে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ হিসেবে দেখিয়েছেন। তবে মাস্ক করা এই তরুণই যে হাদিকে গুলি করেছেন, কিংবা এই তরুণই যে ফয়সাল, তা নিশ্চিত করে বলছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে ‘সন্দেহভাজন’ হিসেবে শনাক্ত একজনের ছবি প্রকাশ করে ধরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ডিএমপির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী দুর্বৃত্তদের হামলায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদি গুরুতর আহত হন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেফতারে রাজধানীতে জোর অভিযান পরিচালনা করছে। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ছবির ব্যক্তিকে প্রাথমিকভাবে সনাক্ত করা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ তাকে হন্য হয়ে খুঁজছে। উক্ত ব্যক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য থাকলে বা তার সন্ধান পেলে দ্রুত নিম্নলিখিত মোবাইল নম্বর অথবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশকে জানানোর জন্য বিনীত অনুরোধ করা হলো।’

পুলিশের বিবৃতিতে এই তরুণের নাম উল্লেখ করা না হলেও ছবি দেখে ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ বলে আন্দাজ করা যায়। এই তরুণকেও আগে হাদীর সঙ্গে দেখা গেছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে হাদির সঙ্গে গণসংযোগে থাকা মাস্ক পরা তরুণটিই ‘ফয়সাল করিম মাসুদ ওরফে দাউদ খান’ এমন কোনো তথ্য পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম। সেই আলোচনার ছবিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।

ফয়সাল করিম নামের তরুণ কার্যক্রমনিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধঘোষিত সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০১৯ সালের ১১ মে ঘোষিত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তিনি সদস্য হন। তাঁর পুরো নাম ফয়সাল করিম দাউদ খান।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে গুলিবিদ্ধ হন ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ও ঢাকা–৮ সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ওসমান হাদি। হাদিকে বহনকারী রিকশাকে অনুসরণ করে পেছন দিকে থেকে মোটরসাইকেলে এসে তাঁকে গুলি করে চলে যায় আততায়ীরা। হাদি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ইনকিলাব কালচারাল সেন্টার নামে ওসমান হাদির প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর সঙ্গে ফয়সাল করিমের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছবিগুলোতে থাকা ফয়সাল করিমের সঙ্গে মাস্ক পরা ব্যক্তির চেহারার কিছুটা সাদৃশ্য আছে। সেকারণে গুলি ছোড়ার ঘটনায় তাঁকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এর মধ্যেই দুপুরে ডিএমপি সন্দেহভাজনকে শনাক্তের কথা জানায় এবং ওসমান হাদিকে গুলি করা ব্যক্তিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।
গত ৯ ডিসেম্বর বাংলামোটর এলাকায় হাদির ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে গিয়ে হাদির পাশে বসে আলোচনা শুনেছিলেন ফয়সাল করিম।

আলোচিত ফয়সাল করিম কে?

পেশাদারদের যোগাযোগমাধ্যম লিংকডইনে ফয়সাল করিমের নামে প্রোফাইল আছে। সেখানে তিনি নিজেকে অ্যাপল সফট আইটি, ওয়াইসিইউ টেকনোলজি ও এনলিস্ট ওয়ার্ক নামে তিন প্রতিষ্ঠানের মালিক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

লিংকডইন প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী, ফয়সাল করিম ২০১৩ সালে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। পরে আরেকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এমবিএ করেছেন বলে সেখানে উল্লেখ রয়েছে।

২০২৪ সালে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলনকারীদের দমনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা–কর্মীদের সঙ্গে মাঠে ছিলেন বলে ছাত্রলীগের সূত্র জানিয়েছে।

ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় নাম আসার পর ফয়সাল করিমের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আমলে বাংলাদেশের দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কিছু নেতার ছবি ফেসবুকে প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে হাদির সঙ্গে ঢাকা–৮ আসনে গণসংযোগ এবং বাংলামোটরে হাদির প্রতিষ্ঠিত ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারের আড্ডায় ফয়সালের অংশ নেওয়ার ছবিও ভাইরাল হয়েছে। অনেকে ধারণা করছেন, ফয়সাল করিম ওসমান হাদিকে বেশ কিছুদিন ধরে অনুসরণ করছিলেন।

২০১৬ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সহযোগিতা ও সরকারের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ‘ব্যাটল অব ৭১’ নামে একটি কম্পিউটার গেম তৈরি করেছিল ফয়সাল করিমের মালিকানাধীন ওয়াইসিইউ টেকনোলজি লিমিটেড। সে বছরের নভেম্বরে ওই গেমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বেসিসের তৎকালীন সভাপতি এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারও উপস্থিত ছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘আসনভিত্তিক নির্বাচন পরিচালনা ও সমন্বয়ক কমিটি’ করেছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ঢাকা–১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এই আসনের সমন্বয়ক কমিটির সদস্য ছিলেন ফয়সাল করিম।

অভ্যুত্থানের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার ফয়সালের দ্রুত জামিন নিয়ে প্রশ্ন সবার

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২৮ অক্টোবর ঢাকার আদাবরের বাইতুল আমান হাউজিং সোসাইটি এলাকায় ব্রিটিশ কলাম্বিয়া স্কুলের চতুর্থ তলায় অফিসে অস্ত্রের মুখে ১৭ লাখ টাকা লুটের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় আদাবর থানার মামলার প্রধান আসামি ছিলেন ফয়সাল করিম।

মামলা হওয়ার কিছুদিন পর ৭ নভেম্বর আদাবর এলাকা থেকে ফয়সাল করিমকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁর কাছ থেকে দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি ম্যাগাজিন ও পাঁচটি গুলিও উদ্ধার করা হয়। ওই মামলায় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান ফয়সাল করিম। জামিনের সময়সীমা বাড়াতে গত ১২ আগস্ট আবারও আবেদন করলে হাইকোর্ট নতুন করে তাঁর এক বছরের জামিন মঞ্জুর করেন।

জামিনে থাকা অবস্থায় এবার তাঁর বিরুদ্ধে ওসমান হাদিকে গুলি করার অভিযোগ এল। এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি কীভাবে জামিন পেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ, কোনো অপরাধমূলক কাজের প্রমাণ না থাকলেও অভ্যুত্থানের পর শুধু মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা সভা করায় গ্রেপ্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিকের জামিন বারবার নাকচ করা হয়েছিল। আর এ রকম লুটের ঘটনায় দুটি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে এতো দ্রুত জামিন দেওয়া হলো কীভাবে, সেই প্রশ্ন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন আলোচনা–সমালোচনায় সরব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট, ‘গৃহকর্মী আয়েশা’র পরিচয় মেলেনি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৭
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া
ছবি: সিসিটিভির ফুটেজ থেকে নেওয়া

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে খুন করার পর কথিক গৃহকর্মী আয়েশা ওই বাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, বেশ কিছু স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা লুট করেন। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় করা হত্যা মামলার এজাহারে এই দাবি করা হয়েছে। তবে আয়েশা নামে পরিচয় দেওয়া ওই তরুণীর প্রকৃত পরিচয় মেলেনি এখনো।

স্ত্রী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) হত্যার ঘটনায় গতকাল মামলাটি করেন নাটোরের স্থায়ী বাসিন্দা আ জ ম আজিজুল ইসলাম। মামলায় কথিত গৃহকর্মী মোছা. আয়েশাকে (২০) একমাত্র আসামি করা হয়েছে। তবে এজাহারে তাঁর বাবার নাম ও ঠিকানায় ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আজকের পত্রিকাকে মামলার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রকিবুজ্জামান তালুকদার। গতকাল সকাল ৭টা ৫১ মিনিট থেকে ৯টা ৩৫ মিনিটের মধ্যে যেকোনো সময় এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

এজাহারে বাদী আজিজুল লিখেছেন, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক। মোহাম্মদপুরে পরিবার নিয়ে থাকেন। চার দিন আগে উল্লিখিত আসামি তাঁর বাসায় খণ্ডকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। গতকাল সকাল ৭টার দিকে তিনি (আজিজুল) তাঁর কর্মস্থল উত্তরায় চলে যান। কর্মস্থলে থাকাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

পরে তিনি বেলা ১১টার দিকে বাসায় আসেন। এসে দেখতে পান, তাঁর স্ত্রীর গলাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা। স্ত্রী রক্তাক্ত জখম হয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে আছেন আর মেয়ের গলার নিচে ডান পাশে কাটা। মেয়ে গুরুতর অবস্থায় বাসার প্রধান ফটকে পড়ে আছে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে তিনি দ্রুত তাকে উদ্ধার করেন। পরিচ্ছন্নতাকর্মী আশিকের মাধ্যমে মেয়েকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মামলায় আজিজুল আরও লিখেছেন, তিনি বাসার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি দেখতে পান, আসামি সকাল ৭টা ৫১ মিনিটের সময় কাজ করার জন্য বাসায় আসেন। সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটের সময় আসামি তাঁর (বাদী) মেয়ের স্কুলড্রেস পরে বাসা থেকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ অন্যান্য মূলবান সামগ্রী নিয়ে যান আসামি।

মামলায় বাদী লিখেছেন, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে তিনি নিশ্চিত হন যে, অজ্ঞাত কারণে আসামি তাঁর (বাদী) স্ত্রী ও মেয়েকে ছুরি বা অন্য কোনো ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে হত্যা করেন।

মা-মেয়ে হত্যার আসামিকে শনাক্ত করা যায়নি। মোহাম্মদপুর থানা-পুলিশ জানায়, গৃহকর্মীর পরিচয় এখনো শনাক্ত করা যায়নি। পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সৌদি আরবে অপহরণ, ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি দেশে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সৌদি আরবে এক প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে বাংলাদেশে তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে একটি চক্র। না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে (এমএফএস) ধাপে ধাপে মোট ৩৫ লাখ টাকা পাঠালে সৌদি আরবের রিয়াদে অচেতন অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় অপহরণকারীরা।

গত মঙ্গলবার অপহরণকারী এই চক্রের বাংলাদেশি সদস্য মো. জিয়াউর রহমানকে (৪২) মাগুরার শালিখা থানার হরিপুর বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।

গ্রেপ্তারের পর সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান জানান, অপহরণকারীদের দেওয়া এমএফএস ও ব্যাংক হিসাব নম্বর বিশ্লেষণ করে জিয়াউর রহমানকে শনাক্ত করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মুক্তিপণ থেকে ৫ লাখ টাকা কমিশন নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।

চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি মো. রাসেল নামের ওই প্রবাসীকে অপহরণের পর সে মাসের ২১ তারিখে তাঁর শ্বশুর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মামলাটি সিআইডির ঢাকা মেট্রো (পূর্ব) ইউনিট তদন্ত করছে।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মো. রাসেল ২০ বছর ধরে রিয়াদে ব্যবসা করছেন। ১২ জানুয়ারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁকে অপহরণ করে তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের কাছে ইমু ও ভিওআইপিতে ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। কয়েক ধাপে টাকা পাঠানোর পর তাঁকে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় অপহরণকারীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পুলিশের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হচ্ছে: ডিএমপি কমিশনার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ২৫
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। ছবি: আজকের পত্রিকা

অরাজকতা প্রতিহত করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী। তিনি বলেছেন, পুলিশ যখন অরাজকতা ঠেকানোর চেষ্টা করছে, তখন তাদের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক।

ডিএমপি কমিশনার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার অফিসারদের সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবেন না।’

আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক অরাজকতা প্রতিরোধের সময় পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণের বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, ‘পুলিশ যখন অরাজকতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছিল, তখন আমার অফিসারদের সঙ্গে যে ধরনের ব্যবহার করা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমার অফিসারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবেন না। আমরা সংঘাতে জড়াতে চাই না; আমরা সেবা দিতে চাই। আপনারা যেটি করতে চাচ্ছিলেন, সেটি করলে সমাজে, ঢাকায় এবং পুরো দেশে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।’

কমিশনার জানান, একটি গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। এখন যদি একই ধরনের কার্যকলাপ দেখা যায়, তাহলে সমাজে অস্থিরতা বাড়বে। এ জন্যই পুলিশের সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি এমন আচরণ কোনো শিক্ষিত ও সচেতন মানুষের কাছ থেকে প্রত্যাশিত নয়।

পল্লবী থানার সামনে ককটেল বিস্ফোরণে এক পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমার নিরপরাধ অফিসারকে যেভাবে ককটেল মেরে আহত করা হয়েছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এতে সদস্যদের মনোবল নষ্ট হয় এবং এর ক্ষতি সমাজকেই ভোগ করতে হয়। যদি পুলিশের মনোবল ভেঙে যায়, তবে ৫ আগস্টের পর যেভাবে ৮০ বছরের বৃদ্ধও লাঠি হাতে নিয়ে মহল্লা পাহারা দিয়েছেন, সেই পরিস্থিতি আবার তৈরি হতে পারে।’

যারা ককটেল ছোড়া বা এ ধরনের দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে পুলিশ সদস্যদের মনোবল ভাঙার চেষ্টা করছে, তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন—‘এই কাজটি করবেন না।’

গুলির নির্দেশনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা নয়, এটি দেশের আইন। আইন পুলিশ বানায় না, পার্লামেন্ট বানায়। আইন যা বলেছে, আমরা শুধু সেটাই অনুসরণের নির্দেশ দিয়েছি।’

ডিএমপি কমিশনার জানান, দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ মোকাবিলায় আধুনিক সক্ষমতা গড়ে তুলতেই ডিবির সাইবার সাপোর্ট সেন্টার উদ্বোধন করা হয়েছে। এখানে থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিযুক্ত ল্যাব, দক্ষ তদন্তকারী দল, ডিজিটাল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ এবং ২৪ ঘণ্টার রেসপন্স টিম। ফেসবুক পেজ, ই-মেইল এবং ডিবির অনলাইন চ্যানেলের মাধ্যমে নাগরিকেরা সরাসরি অভিযোগ জানাতে পারবেন। প্রযুক্তিনির্ভর, সময়োপযোগী ও প্রমাণভিত্তিক পুলিশ সেবা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, বর্তমান সময়ে অনলাইন জালিয়াতি, প্রতারণা, ডিজিটাল হয়রানি, মানহানি, অনলাইন গ্যাম্বলিংসহ নানা অপরাধ মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও আর্থিক সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। তাই জনগণের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ডিএমপি তার সক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে।

নারী ও কিশোরদের সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে সাইবার সাপোর্ট সেন্টার কাজ করবে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারী ও কিশোরদের ওপর হয়রানির অভিযোগ দ্রুত সমাধানের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে। হয়রানির শিকার হলে দ্রুত সহায়তা নিশ্চিত করাই তাদের অন্যতম অঙ্গীকার।

সাইবার নিরাপত্তা শুধু পুলিশের দায়িত্ব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সমাজের সচেতনতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ গড়ে তুলতে তিনি সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্ব দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত