আব্দুর রহিম পায়েল ও আশরাফুল আলম আপন, রংপুর
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বিপুল পরিমাণে কৃষি প্রণোদনার ধানবীজ ও রাসায়নিক সার উদ্ধার করা হয় গত মাসে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গুদাম থেকে দুটি ভ্যানে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক ধান ব্যবসায়ী এসব সার ও বীজ নিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। পরে আটক ভ্যান দুটির চালকের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা আরও ১৬৭ বস্তা ধানবীজ ও ১২ বস্তা সার জব্দ করে পুলিশ।
গত ৭ এপ্রিল উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আলমগীর হোসেনের (৫০) নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
আলমগীর হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তাঁর বাড়িতে কথা হয় আজকের পত্রিকার। এ সময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয় এসব বীজ ও সার কীভাবে তিনি সংগ্রহ করেন। জবাবে আলমগীর বলেন, ‘আমি শুধু গঙ্গাচড়া থেকেই এসব বীজ কিনি না। আমি পাশের কয়েকটি উপজেলা থেকেও কিনি। সেখানেও আমার মতো অনেক পাইকার আছেন।’
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় গঙ্গাচড়া উপজেলায় কার কার কাছ থেকে এসব বীজ কিনেছেন তিনি। আলমগীর বলেন, ‘কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুলের কাছ থেকে ৪৫ বস্তা ধানবীজ কিনেছি। পীরের হাটের মতিয়ারের কাছ থেকে কিনেছি ১৬ বস্তা। বড়বিলের চেয়ারম্যানের পিএস পলাশের কাছ থেকে ৩০ জনের ছয়টি স্লিপের মাল কিনেছি। গমের বীজ বিতরণের সময় তাঁদের সঙ্গে দাম না বনায় সন্ধ্যার সময় উপজেলা পরিষদ থেকে সব গম ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে চৌধুরী হাট বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। বড়বিলের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ওয়াসিমের কৃষি অফিসের লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তিনিও আমার কাছে ২০ বস্তা বীজ বিক্রি করেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসের কুদ্দুস আমার কাছে পাঁচজনের একটি স্লিপ বিক্রি করেন।’
এ বিষয় সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্লিপ বিক্রির বিষয়ে আমি জানি না। তবে যদি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আমার নাম দিয়ে থাকে তাহলে আমি তার ঘাড়ে পাড়া দিয়ে সেই স্লিপ আদায় করব। আমি স্লিপ না পেলে যদি নিউজে আমার নাম আসে, তাহলে আমি তোমার নামেও মানহানির মামলা করব।’
আলমগীর আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মোক্তার আমার কাছে ১০ প্যাকেট পাটের বীজ ২০ টাকা প্যাকেট দরে বিক্রি করেন। ওরা কৃষি অফিস থেকে এগুলো এমনি নেয়। আমার বাড়ির পাশে চাম্মি ও তাঁর ছেলে শামিম—এমন কোনো সরকারি প্রণোদনা নেই যা তাঁরা পান না। কয়েক দিন আগেও আমার কাছে শামিম অগ্রিম টাকা নিয়েছেন।’
বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে শামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিএস রুবেল হোসেন আমার কাছে আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি চায়। আমি তা দিয়ে আসি। ওই দিনে আমাকে মাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে মাল দেয়নি। তারপর আমার মাল আলমগীরের কাছে দেয়। সেই দিন আলমগীর মাল নিয়ে যায়। সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মাল আটক করেন। আমি কারও কাছে অগ্রিম কোনো টাকাপয়সা নেইনি।’
বীজ ও সার বেহাত চক্রে কয়েকজন সাংবাদিকও জড়িত বলে জানান আলমগীর। তিনি বলেন, ‘গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে বাড়ি এমন চার-পাঁচজন সাংবাদিক। এরা আগেই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। টাকা নিয়ে আমাকে কৃষি অফিসের হাবিবুরের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। হাবিবুর পরে আমাকে স্লিপ দেয়।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এসব বীজ বিক্রি করেন কি না—এ বিষয় জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এখানে যতজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আছেন, তাঁদের সবার একজন করে নিজস্ব লোক আছেন। তাঁদের দিয়ে তাঁরা পাঁচ-সাতটা করে স্লিপের মাল তুলে একখানে জমা করেন। এরপর আমাকে ডাকলে আমি নগদ টাকা দিয়ে মালগুলো কিনে নিই। যখন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সরাসরি আসেন তখন আরও বেশি করে এসব মাল বিক্রি হয়। তার কারণ, প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাঁদের ভাগের স্লিপ বিতরণ না করে বিক্রি করে দেন।’
এ সময় আলমগীরের কাছে জানতে চাওয়া হয় কৃষকের এনআইডির ফটোকপি ও ছবি ছাড়া তো এসব বীজ ও সার তোলা সম্ভব নয়। তাহলে কী করে এসব মাল তোলেন তাঁরা। আলমগীর বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তাঁদের এলাকার মানুষ বিভিন্ন সাহায্যের জন্য আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি জমা দিয়ে থাকেন। এসব জমা দেওয়া আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি ব্যবহার করে তাঁরা এ ধরনের প্রণোদনার মাল তুলে থাকেন। কৃষি অফিসের লোকজন তো আর কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করে প্রণোদনা দেন না।’
এ বিষয়ে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এসব বীজ বিক্রির বিষয় অস্বীকার করেন তাঁরা।
বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কেন সরকারি বীজ বিক্রি করব। আমি কোনোভাবেই সরকারি বীজ কারও কাছে বিক্রি করিনি।’ তবে এলাকার লোকজন জানান, কৃষি অফিসের লোকদের সঙ্গে তাঁর ‘ভালো সম্পর্ক’ থাকায় বীজ বাড়িতে এনে বিক্রি করেন এনামুল।
বড়বিল ইউনিয়নের ভ্যানচালক ওয়াসিমের বাড়িতে গেলে কথা হয় তাঁর স্ত্রী নাসিমা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় তাঁর কাছে বীজ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামরা আবাদ করি সেই সার আনি বাড়িত থুই। হামরা কিসের সরকারি বীজ বেচাই।’
তাঁর বাড়ির আশপাশের একাধিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক। তিনি এসব সার ও বীজ কৃষি অফিস থেকে এনে বাড়িতে বিক্রি করেন। তাঁর বাড়িতে এসে এলাকার কৃষকেরা প্রণোদনার ধান ও ভুট্টা বীজসহ সরকারি বিভিন্ন ধরনের বীজ কিনে নিয়ে যান।
গঙ্গাচড়া উপজেলায় এসব প্রণোদনা তিনি ছাড়া আর কারা কেনেন জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের ভূটকা গ্রামের বীজ ও সার ব্যবসায়ী আব্দুল কালাম, বড়বিল ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ওয়াসিম, কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুল, ওই ইউনিয়নের মতিসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন এসব প্রণোদনার সার ও বীজ কেনেন।’
এসব বীজ কেনার পর কোথায় বিক্রি করেন—এ প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, ‘গমের বীজগুলো একেকটি ১০ কেজির বস্তা প্রতিটি ১১০০ টাকা করে কিনে আমি ঠাকুরগাঁওয়ের এক বিএডিসির ডিলারের কাছে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আমাদের এখানে গমের তেমন আবাদ হয় না। আর যারা এসব প্রণোদনার গমবীজ পান, তাঁরা বেশির ভাগ কৃষক না। আর যে দুই-একজন কৃষক বীজ পান, তাঁরা চাষ করেন। ধান, ভুট্টা ও সরিষার বীজগুলো তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের বিএডিসির ডিলারদের কাছে বিক্রি করি।’
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি এখন বুঝতে পারছি, এসব মাল কেনা আমার ঠিক হয়নি। আমি একটা কথা বলতে চাই, আমি তো আমার হক টাকা দিয়ে মাল কিনেছি। আমি তো আর চুরি করে এসব মাল নিয়ে আসি নাই। যদি আমার নামে মামলা হয়। তাহলে তাদের নামেও মামলা হওয়া দরকার। যারা এসব মাল মানুষের নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রণোদনার যেসব বীজ দেওয়া হয়, সেগুলো প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছায় না।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ৪ হাজার ৪০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ৫ কেজি আউশ ধানবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার; ৭৮০ জন কৃষকের মাঝে ২ কেজি করে ভুট্টাবীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার; ৮৮০ জন কৃষকের মাঝে ২০ কেজি করে গমবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার; ২ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে ১ কেজি করে পাটবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার এবং ৪ হাজার কৃষকের মাঝে হাইব্রিড চমক জাতের ২ কেজি করে ধানবীজ দেওয়ার কথা ছিল। তবে এসব ধানবীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ না করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নামমাত্র কয়েকজন কৃষকের মাঝে বিতরণ করে বাকি সব মাল স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। কৃষকেরা বলেন, এটি হওয়ার একমাত্র কারণ কৃষি অফিসার বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দুজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনার মাল যা-ই আসুক না কেন, এগুলো এভাবেই চলে। যে সময় এসব প্রণোদনা দেওয়া হয়, সে সময় কৃষকদের দিলেও সেগুলো কৃষকদের কাজে আসে না। আর যখনই এসব প্রণোদনা আসে দলীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজনের একটা চাপ থাকে। এ বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, ‘কারা এর সঙ্গে জড়িত—আমি এখন কিছু বলতে পারব না। তবে দুটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।’
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বিপুল পরিমাণে কৃষি প্রণোদনার ধানবীজ ও রাসায়নিক সার উদ্ধার করা হয় গত মাসে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গুদাম থেকে দুটি ভ্যানে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে এক ধান ব্যবসায়ী এসব সার ও বীজ নিয়ে যাওয়ার সময় আটক করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন। পরে আটক ভ্যান দুটির চালকের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আলমগীর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে খড় দিয়ে ঢেকে রাখা আরও ১৬৭ বস্তা ধানবীজ ও ১২ বস্তা সার জব্দ করে পুলিশ।
গত ৭ এপ্রিল উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আলমগীর হোসেনের (৫০) নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
আলমগীর হোসেন গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তাঁর বাড়িতে কথা হয় আজকের পত্রিকার। এ সময় তাঁকে প্রশ্ন করা হয় এসব বীজ ও সার কীভাবে তিনি সংগ্রহ করেন। জবাবে আলমগীর বলেন, ‘আমি শুধু গঙ্গাচড়া থেকেই এসব বীজ কিনি না। আমি পাশের কয়েকটি উপজেলা থেকেও কিনি। সেখানেও আমার মতো অনেক পাইকার আছেন।’
তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় গঙ্গাচড়া উপজেলায় কার কার কাছ থেকে এসব বীজ কিনেছেন তিনি। আলমগীর বলেন, ‘কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুলের কাছ থেকে ৪৫ বস্তা ধানবীজ কিনেছি। পীরের হাটের মতিয়ারের কাছ থেকে কিনেছি ১৬ বস্তা। বড়বিলের চেয়ারম্যানের পিএস পলাশের কাছ থেকে ৩০ জনের ছয়টি স্লিপের মাল কিনেছি। গমের বীজ বিতরণের সময় তাঁদের সঙ্গে দাম না বনায় সন্ধ্যার সময় উপজেলা পরিষদ থেকে সব গম ভ্যানে করে নিয়ে গিয়ে চৌধুরী হাট বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করি। বড়বিলের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ওয়াসিমের কৃষি অফিসের লোকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। তিনিও আমার কাছে ২০ বস্তা বীজ বিক্রি করেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের অফিসের কুদ্দুস আমার কাছে পাঁচজনের একটি স্লিপ বিক্রি করেন।’
এ বিষয় সাঁটমুদ্রাক্ষরিক কাম কম্পিউটার অপারেটর (সিএ) কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘স্লিপ বিক্রির বিষয়ে আমি জানি না। তবে যদি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আমার নাম দিয়ে থাকে তাহলে আমি তার ঘাড়ে পাড়া দিয়ে সেই স্লিপ আদায় করব। আমি স্লিপ না পেলে যদি নিউজে আমার নাম আসে, তাহলে আমি তোমার নামেও মানহানির মামলা করব।’
আলমগীর আরও বলেন, ‘জাতীয় পার্টির মোক্তার আমার কাছে ১০ প্যাকেট পাটের বীজ ২০ টাকা প্যাকেট দরে বিক্রি করেন। ওরা কৃষি অফিস থেকে এগুলো এমনি নেয়। আমার বাড়ির পাশে চাম্মি ও তাঁর ছেলে শামিম—এমন কোনো সরকারি প্রণোদনা নেই যা তাঁরা পান না। কয়েক দিন আগেও আমার কাছে শামিম অগ্রিম টাকা নিয়েছেন।’
বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে শামিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিএস রুবেল হোসেন আমার কাছে আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি চায়। আমি তা দিয়ে আসি। ওই দিনে আমাকে মাল দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাকে মাল দেয়নি। তারপর আমার মাল আলমগীরের কাছে দেয়। সেই দিন আলমগীর মাল নিয়ে যায়। সে সময় উপজেলা চেয়ারম্যান মাল আটক করেন। আমি কারও কাছে অগ্রিম কোনো টাকাপয়সা নেইনি।’
বীজ ও সার বেহাত চক্রে কয়েকজন সাংবাদিকও জড়িত বলে জানান আলমগীর। তিনি বলেন, ‘গঙ্গাচড়া ইউনিয়নে বাড়ি এমন চার-পাঁচজন সাংবাদিক। এরা আগেই আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে যায়। টাকা নিয়ে আমাকে কৃষি অফিসের হাবিবুরের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। হাবিবুর পরে আমাকে স্লিপ দেয়।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এসব বীজ বিক্রি করেন কি না—এ বিষয় জানতে চাইলে আলমগীর হোসেন বলেন, ‘এখানে যতজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা (বিএস) আছেন, তাঁদের সবার একজন করে নিজস্ব লোক আছেন। তাঁদের দিয়ে তাঁরা পাঁচ-সাতটা করে স্লিপের মাল তুলে একখানে জমা করেন। এরপর আমাকে ডাকলে আমি নগদ টাকা দিয়ে মালগুলো কিনে নিই। যখন চেয়ারম্যান-মেম্বাররা সরাসরি আসেন তখন আরও বেশি করে এসব মাল বিক্রি হয়। তার কারণ, প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান-মেম্বাররা তাঁদের ভাগের স্লিপ বিতরণ না করে বিক্রি করে দেন।’
এ সময় আলমগীরের কাছে জানতে চাওয়া হয় কৃষকের এনআইডির ফটোকপি ও ছবি ছাড়া তো এসব বীজ ও সার তোলা সম্ভব নয়। তাহলে কী করে এসব মাল তোলেন তাঁরা। আলমগীর বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের তাঁদের এলাকার মানুষ বিভিন্ন সাহায্যের জন্য আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি জমা দিয়ে থাকেন। এসব জমা দেওয়া আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি ব্যবহার করে তাঁরা এ ধরনের প্রণোদনার মাল তুলে থাকেন। কৃষি অফিসের লোকজন তো আর কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে যাচাই করে প্রণোদনা দেন না।’
এ বিষয়ে কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এসব বীজ বিক্রির বিষয় অস্বীকার করেন তাঁরা।
বীজ ও সার বিক্রির বিষয়ে কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি কেন সরকারি বীজ বিক্রি করব। আমি কোনোভাবেই সরকারি বীজ কারও কাছে বিক্রি করিনি।’ তবে এলাকার লোকজন জানান, কৃষি অফিসের লোকদের সঙ্গে তাঁর ‘ভালো সম্পর্ক’ থাকায় বীজ বাড়িতে এনে বিক্রি করেন এনামুল।
বড়বিল ইউনিয়নের ভ্যানচালক ওয়াসিমের বাড়িতে গেলে কথা হয় তাঁর স্ত্রী নাসিমা আক্তারের সঙ্গে। এ সময় তাঁর কাছে বীজ বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হামরা আবাদ করি সেই সার আনি বাড়িত থুই। হামরা কিসের সরকারি বীজ বেচাই।’
তাঁর বাড়ির আশপাশের একাধিক লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কৃষি অফিসের লোকজনের সঙ্গে তাঁর ভালো সম্পর্ক। তিনি এসব সার ও বীজ কৃষি অফিস থেকে এনে বাড়িতে বিক্রি করেন। তাঁর বাড়িতে এসে এলাকার কৃষকেরা প্রণোদনার ধান ও ভুট্টা বীজসহ সরকারি বিভিন্ন ধরনের বীজ কিনে নিয়ে যান।
গঙ্গাচড়া উপজেলায় এসব প্রণোদনা তিনি ছাড়া আর কারা কেনেন জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের ভূটকা গ্রামের বীজ ও সার ব্যবসায়ী আব্দুল কালাম, বড়বিল ইউনিয়নের হাজীপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক ওয়াসিম, কোলকোন্দ ইউনিয়নের মাদ্রাসাপাড়া এলাকার বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী এনামুল, ওই ইউনিয়নের মতিসহ প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন এসব প্রণোদনার সার ও বীজ কেনেন।’
এসব বীজ কেনার পর কোথায় বিক্রি করেন—এ প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, ‘গমের বীজগুলো একেকটি ১০ কেজির বস্তা প্রতিটি ১১০০ টাকা করে কিনে আমি ঠাকুরগাঁওয়ের এক বিএডিসির ডিলারের কাছে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। আমাদের এখানে গমের তেমন আবাদ হয় না। আর যারা এসব প্রণোদনার গমবীজ পান, তাঁরা বেশির ভাগ কৃষক না। আর যে দুই-একজন কৃষক বীজ পান, তাঁরা চাষ করেন। ধান, ভুট্টা ও সরিষার বীজগুলো তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের বিএডিসির ডিলারদের কাছে বিক্রি করি।’
আলমগীর হোসেন বলেন, ‘আমি এখন বুঝতে পারছি, এসব মাল কেনা আমার ঠিক হয়নি। আমি একটা কথা বলতে চাই, আমি তো আমার হক টাকা দিয়ে মাল কিনেছি। আমি তো আর চুরি করে এসব মাল নিয়ে আসি নাই। যদি আমার নামে মামলা হয়। তাহলে তাদের নামেও মামলা হওয়া দরকার। যারা এসব মাল মানুষের নাম ভাঙিয়ে বিক্রি করেছে।’ তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রণোদনার যেসব বীজ দেওয়া হয়, সেগুলো প্রকৃত কৃষকের কাছে পৌঁছায় না।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ৪ হাজার ৪০০ জন প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ৫ কেজি আউশ ধানবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার; ৭৮০ জন কৃষকের মাঝে ২ কেজি করে ভুট্টাবীজ, ২০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার; ৮৮০ জন কৃষকের মাঝে ২০ কেজি করে গমবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার; ২ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মাঝে ১ কেজি করে পাটবীজ, ১০ কেজি এমওপি সার, ১০ কেজি ডিএপি সার এবং ৪ হাজার কৃষকের মাঝে হাইব্রিড চমক জাতের ২ কেজি করে ধানবীজ দেওয়ার কথা ছিল। তবে এসব ধানবীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণ না করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা নামমাত্র কয়েকজন কৃষকের মাঝে বিতরণ করে বাকি সব মাল স্থানীয় বীজ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। কৃষকেরা বলেন, এটি হওয়ার একমাত্র কারণ কৃষি অফিসার বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা স্থানীয়।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক দুজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনার মাল যা-ই আসুক না কেন, এগুলো এভাবেই চলে। যে সময় এসব প্রণোদনা দেওয়া হয়, সে সময় কৃষকদের দিলেও সেগুলো কৃষকদের কাজে আসে না। আর যখনই এসব প্রণোদনা আসে দলীয় থেকে শুরু করে স্থানীয় লোকজনের একটা চাপ থাকে। এ বিষয়গুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও জানে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মারুফা ইফতেখার সিদ্দিকা বলেন, ‘কারা এর সঙ্গে জড়িত—আমি এখন কিছু বলতে পারব না। তবে দুটি তদন্ত প্রক্রিয়াধীন আছে। তদন্ত শেষ হলে বলা যাবে।’
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৫ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৫ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৫ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১৯ দিন আগে