জালিয়াতি করে বিআইসিএমে চাকরি বাগানো ড. তারেকের পদত্যাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ২০
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৯: ৪৪

পুঁজিবাজারের শিক্ষা ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেটের (বিআইসিএম) নির্বাহী প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ তারেক পদত্যাগ করেছেন। 

আজ রোববার ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে বিআইসিএমের পরিচালনা পর্ষদ ও বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র দেন। 

বিআইসিএমের জনসংযোগ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মাদ আব্দুল্লাহিল ওয়ারিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ করেননি ড. তারেক। মেসেজ পাঠালেও সাড়া দেননি। 

এর আগে অনিয়ম ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত–উল–ইসলাম ড. তারেককে গত জানুয়ারিতে বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দেন। তারেক যোগ দেন ১ ফেব্রুয়ারি। 

ড. তারেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের অধ্যাপক। তাঁর আগে এ পদে ছিলেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহমুদা আক্তার। শিবলী রুবাইয়াত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন ছিলেন। এই দুজনই অধ্যাপক শিবলীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহযোগী। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ড. তারেকের ১১টি প্রকাশনা ও গবেষণার মধ্যে ৭টিই অধ্যাপক শিবলীর সঙ্গে যৌথভাবে। 

বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদে তাড়াহুড়া করে অবৈধভাবে ড. তারেককে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে পদাধিকার বলে নিয়োগ কমিটির সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক শিবলী। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ২০২৩ সালের ২৮ ডিসেম্বর। মন্ত্রণালয়ের শর্ত ছিল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দুটি বহুল প্রচারিত বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। কিন্তু প্রকাশ করা হয় অখ্যাত পত্রিকায়। 

বিজ্ঞপ্তিতে অন্যতম শর্ত ছিল প্রার্থীর কমপক্ষে ২০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। জন্মসনদ অনুসারে ওই সময়ে ড. তারেকের বয়স ছিল ৪৪ বছর। ২০ বছরের পেশাগত অভিজ্ঞতা দেখাতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন তিনি। 

২০০০ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২০০২ সালের ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিজ্ঞতা সনদে দেখানো হয়। কিন্তু গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, ওই ব্যাংকে ফেলো কোনো পদ নেই। আর যে সনদ দেখানো হয়েছে, তা ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি। 

বাস্তবে ওই সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে বিবিএ এবং ২০০১ সালে এমবিএ সমাপ্ত করেন। এ ছাড়াও ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ‘লেকচারার’ ছিলেন বলে উল্লেখ করেছেন। এটিও সত্য নয়। 

ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি জানায়, ২০০৪ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২০০৫ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত জুনিয়র লেকচারার ছিলেন। আর ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি থেকে ২০ মে এবং ওই বছরের ১৩ জুন ২৯ জুলাই পর্যন্ত খণ্ডকালীন শিক্ষক ছিলেন। 

অধ্যাপক শিবলীর অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সহযোগী ছিলেন ড. তারেক। বিএসইসিতে ২০২১ সালে জালিয়াতির মাধ্যমে ১২৭ জনের একটি নিয়োগ পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষার তদারকির দায়িত্বে ছিলেন ড. তারেক। আবার তারেক ও মাহমুদা দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ–সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সদস্য। শর্তপূরণ না করলেও জালিয়াতির মাধ্যমে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের আওতায় সরকারি অর্থায়নে পরিচালিত শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান বিআইসিএম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানের তদারকির দায়িত্বে বিএসইসি। এখানে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাস্টার্স কোর্স রয়েছে। কেউ এখান থেকে পাস করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ দেওয়া হয়। পদাধিকার বলে বিএসইসির চেয়ারম্যান এই প্রতিষ্ঠানের পর্ষদের চেয়ারম্যান থাকেন। এ হিসেবে গত চার বছর এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ছিলেন বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত। তবে নির্বাহী প্রধানের পদবি হলো ‘নির্বাহী প্রেসিডেন্ট’।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত