বিএনপির প্রয়াত নেতা হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে ‘গলাটিপে’ হত্যার হুমকির অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট
প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ২২: ০৫
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ২২: ৫৫

সিলেট বিএনপির প্রয়াত নেতা আবুল হারিছ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার সামিরা তানজিন চৌধুরীকে তাঁর চাচা আশিক উদ্দিন চৌধুরী গলাটিপে হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ১৭ জানুয়ারি সিলেটের কানাইঘাটে একটি অনুষ্ঠানে বক্তৃবায় তিনি এমন হুমকি দেন।

আশিক উদ্দিন চৌধুরী সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান। তিনি প্রয়াত আবুল হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই। 

১৭ জানুয়ারি সকালে আশিক উদ্দিন চৌধুরীর বাবার নামে ‘রফিকুল হক চৌধুরী স্মৃতি পরিষদ’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। সেদিন এ উপলক্ষে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ওই অনুষ্ঠানে সামিরা তানজিনকে ‘গলাটিপে মারার’ হুমকি দেন আশিক চৌধুরী। এ ছাড়া হারিছ চৌধুরীর স্বজনদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গারও করেন তিনি। 

আশিক চৌধুরীর এমন হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার রাতে কানাইঘাট থানায় লিখিত অভিযোগ দিতে যান সামিরা তানজিনের চাচাতো ভাই রাহাত চৌধুরী। রাহাত হারিছ চৌধুরীর ভাই কামাল চৌধুরীর ছেলে। লিখিত অভিযোগে রাহাত চৌধুরী ফৌজদারি, জননিরাপত্তা ও ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে আশিক চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ করেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম আজ মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামিরার চাচাতো ভাই রাহাত থানায় একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। আইনানুযায়ী যাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁকে (সামিরা) নিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। অথবা তিনি অনলাইনেও আবেদন করতে পারবেন। তখন পুলিশ বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেবে। 

হারিছ চৌধুরীদের গ্রামের বাড়ি কানাইঘাটের দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের দর্পনগর গ্রামে। তিনি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে পলাতক ছিলেন। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মারা যান হারিছ চৌধুরী। 

স্থানীয়রা জানান, হারিছ চৌধুরীর বাবার নামে এলাকায় ‘শফিকুল হক চৌধুরী মেমোরিয়াল এতিমখানা’ আছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এতিমখানাটি নিবন্ধিত হয়। হারিছ চৌধুরী মারা যাওয়ার পর তাঁর মেয়ে সামিরা চৌধুরী এই এতিমখানার বিষয়ে খোঁজখবর রাখতেন। চাচা কামাল উদ্দিন চৌধুরী ও চাচাতো ভাইদের সঙ্গে এতিমখানার বিষয়ে কথাবার্তা বলেন সামিরা। এতে ক্ষুব্ধ হন আশিক চৌধুরী। তাঁকে পাশ কাটিয়ে অন্যদের সঙ্গে এতিমখানার বিষয়ে কথাবার্তা বলায় রেগে যান তিনি। 

সেই রাগের বিস্ফোরণ ঘটে ১৭ জানুয়ারি। সেদিন হারিছ চৌধুরীর স্বজনদের গালাগাল ও হুমকি-ধমকির একপর্যায়ে সামিরা তানজিনকে ‘গলাটিপে মেরে ফেলার’ হুমকি দেন।

সেই অনুষ্ঠানের একটি ভিডিও ফুটেজ আজকের পত্রিকার হাতে এসেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বক্তব্যের একপর্যায়ে আশিক উদ্দিন চৌধুরী বলছেন, ‘এতিমখানার সেক্রেটারি হবেন! তাদের মাকে হাঙ্গা (বিয়ে) দেব...আমি বেঁচে থাকতে এতিমখানার সভাপতি-সেক্রেটারি কীভাবে হয়, দেখব। হারিছ চৌধুরীর কম বয়সী মেয়ে আসছে, তাকে চ্যানেলে চ্যানেলে নেওয়া হচ্ছে। গলাটিপে ধরে হারিছ চৌধুরীর মেয়েকে মেরে ফেলব। আমি তার মায়ের জামাই, আমি তার বাপ...আজ বাবা দুনিয়ায় নেই, আমি তার বাবা...ধৈর্য অনেক ধরেছি, গলাটিপে ধরব। আর আমার বাড়িতে ঢুকবে কানাকানি করার জন্য, মারতে মারতে ...র বাচ্চাদের বাড়ি থেকে বের করে দেব। তোমরা রেডি থেকো গল্লাটল্লা নিয়ে, মারতে মারতে বের করে দেব...ডাক দেব আমার মাখন-টাখন যারা আছে সবাইকে...।’ 

হারিছ চৌধুরীর মেয়ে এলে কেউ যদি কানাকানি করতে যায়, তবে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকিও দেন আশিক চৌধুরী। এ সময় গালাগালি করে ‘মনের ফোলা’ গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। 

আজ রাত আটটার দিকে এই বক্তব্য, গালাগালি আর হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে আশিক উদ্দিন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হারিছ চৌধুরী মারা যাওয়ার পর স্থানীয় কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে ভাতিজির (সামিনা) কাছে। এর লাগি আমি গালাগালি করে মনের ফোলা ঝাড়ছি। সে আমার মেয়ে। তাইর বাবা নাই। আমিই বাবা। রাগ কইরা কইছি, গলা টিইপা মাইরা ফালাইমু! এটা কথার কথা।’ 

সামিরা তানজিন চৌধুরী যুক্তরাজ্যে ফিরে গেছেন। আজকের পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত