বিদেশে উচ্চশিক্ষাপ্রত্যাশী সবার একটি দুশ্চিন্তা থাকে ভিসাপ্রাপ্তি নিয়ে। ভর্তির জন্য সব ধরনের প্রস্তুতির পর অপেক্ষায় থাকতে হয় কাঙ্ক্ষিত ভিসা পাওয়ার জন্য।
প্রতিটি দেশেরই নিজস্ব কিছু নিয়মকানুন আছে শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসা আবেদন এবং প্রাপ্তির ব্যাপারে। তাই ভিসা আবেদনের আগেই সে দেশে শিক্ষা ভিসার নিয়মাবলি এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে জানা এবং তা প্রস্তুত করা অতীব জরুরি। সর্বশেষ যে বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ভিসা ইন্টারভিউ। এই ভিসা ইন্টারভিউটিও অ্যাম্বাসিভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু মৌলিক ও কমন প্রশ্ন সবার জন্য তুলে ধরছি।
ভিসা আবেদনের জন্য টিপস
- ৫টি বাক্যের মধ্যে নিজের সম্পর্কে বলুন/নিজেকে পরিচয় করান।
- এই স্কলারশিপ সম্পর্কে কীভাবে জানতে পারলেন?
- ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণে কোনো পরীক্ষা দিয়েছেন?
- যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন, সেটা কেন বেছে নিয়েছেন?
- বাবা এবং মা কী করেন?
- বৈবাহিক অবস্থা।
- কোনো ভাই বা বোন আছে কি না?
- যদি থাকে তাদের বয়স এবং
পেশা কী?
- হাঙ্গেরি সম্পর্কে কী জানেন অথবা হাঙ্গেরি কোথায় অবস্থিত?
- হাঙ্গেরির পার্শ্ববর্তী দেশ কোনগুলো?
- হাঙ্গেরির কোন দর্শনীয় জায়গা সম্পর্কে জানেন?
- কোন আত্মীয় বা বন্ধুবান্ধব ইউরোপে আছেন?
- বাংলাদেশের বাইরে ভ্রমণ করেছেন কখনো?
- জন্মস্থান কোথায়?
ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য টিপস
আমার মনে হয় শিক্ষা ভিসার ক্ষেত্রে অ্যাম্বাসিভেদে ভিসা ইন্টারভিউ ভিন্ন হলেও সেখানে কিছু কমন বিষয় লক্ষ করা যায়। যেখানেই ভিসা ইন্টারভিউ দেওয়া হোক না কেন, ভিসা অফিসারের কাছে কিছু বিষয় প্রমাণ করতে হবে। ভিসা ইন্টারভিউ গ্রহণের মাধ্যমে ভিসা অফিসার আপনার ব্যক্তিত্ব, আগ্রহ, লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করবেন এবং আপনি সত্যিই পড়াশোনা করতে বিদেশ যাবেন কি না, সে-সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে চেষ্টা করবেন। বিষয়গুলো হলো
- শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা এবং সামঞ্জস্য রাখাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- যেই ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে গমন করছেন তা কেন প্রয়োজন এবং আপনার ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার জন্য তা কতটা জরুরি।
- ডিগ্রি অর্জনের পর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
- বৃত্তি সম্পূর্ণ খরচ পূরণ না করলে বাকি খরচ কীভাবে জোগান হবে?
- কে এই খরচ জোগানে সাহায্য করবে? তার আয়ের উৎস কী এবং বার্ষিক আয় কত? এর সঙ্গে কোনো ব্যাংক স্টেটমেন্ট প্রমাণ আছে কি না?
- পূর্ববর্তী কোনো বিদেশি ডিগ্রি আছে কি না?
প্রতিটি ধাপে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি শুধু শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে তাদের দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। শিক্ষা আপনার জীবনে কীভাবে পরিবর্তন এনেছে এবং ভবিষ্যতেও কীভাবে পরিবর্তন আনতে সক্ষম, তার একটি স্বচ্ছ বিবরণ। শিক্ষার জন্য যে আনুষঙ্গিক খরচ দরকার তা পূরণ করার ক্ষমতা আপনার আছে এবং তা আপনার বা আপনার স্পনসরের বাকি খরচের সঙ্গে সংঘর্ষপূর্ণ না হয়। আপনার আর্থিক লেনদেন যেন স্বচ্ছ হয় এবং কোনো ক্রমেই অপ্রাসঙ্গিক না হয়। আপনি যে দেশে যাচ্ছেন এবং যে শহরে যাচ্ছেন, সেটা সম্পর্কে আপনার পূর্ণ ধারণা আছে এবং আপনি জেনে-বুঝেই যাচ্ছেন। ভিসা অফিসার যেসব প্রশ্ন করবেন, যার উত্তর একাধিক, তখন সবাই যেটা বলে সেটা না বলে ইউনিক কিছু বলার চেষ্টা করা উচিত। ভিসা ইন্টারভিউয়ে ভিসা অফিসার আপনার ডকুমেন্ট সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি প্রশ্ন করবেন। সুতরাং ভিসা ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে যেসব ডকুমেন্ট আপনি জমা দেবেন, সেই সব ডকুমেন্ট সম্পর্ক ভালো করে পড়াশোনা করুন। যেমন জন্মতারিখ, সিজিপিএ, ব্যাংক স্পনসর, ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাডি, ইত্যাদি। ভিসা ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় ভয় পাওয়া যাবে না এবং ভয় বা অস্থিরতা যদি চেহারায় ফুটে ওঠে, তাহলে ভিসা অফিসার সন্দেহ করবেন। মনে করবেন আপনার কথার মধ্যে অথবা কাগজপত্রের ভেতর কোনো সমস্যা আছে বা কাগজপত্র নকল। সুতরাং নার্ভাস হওয়া বা ভয় পাওয়া যাবে না। সর্বোপরি একটি ভালো ভিসা ইন্টারভিউ আপনার ভিসা পেতে অনেক সাহায্য করবে। তাই ভিসা ইন্টারভিউয়ে অংশগ্রহণ করার আগে ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে যান এবং আপনি কী উত্তর দেবেন, সেটা আগে থেকে প্ল্যান করে রাখুন।
অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ