Ajker Patrika

শিক্ষার্থী ২২৭, শিক্ষক-কর্মচারী ১৩০

রাহুল শর্মা, ঢাকা 
আপডেট : ১৫ মার্চ ২০২৫, ১৪: ৪৭
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত
  • ছয় কলেজের মধ্যে অধ্যক্ষ আছেন মাত্র একটিতে
  • অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ পদ শূন্য থাকায় কাজে স্থবিরতা
  • ৪৩ প্রভাষকের কারও পদ ও চাকরি স্থায়ী হয়নি
  • ছয় কলেজে শিক্ষার্থীদের মোট আসন ১,১২০

বাগেরহাটের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে আসনসংখ্যা ১২০। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে কলেজটিতে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ১৬ শিক্ষার্থী। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু বাগেরহাটের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ নয়, এটিসহ সারা দেশে থাকা ছয়টি শারীরিক শিক্ষা কলেজেরই প্রায় একই চিত্র। পাঁচটি কলেজে অধ্যক্ষ নেই। দীর্ঘদিনেও পদ ও চাকরি স্থায়ী না হওয়ায় কলেজগুলোর শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ ও হতাশা। এগুলোর প্রভাবে স্থবিরতা বিরাজ করছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রশাসনিক ও শ্রেণি কার্যক্রমে। শিক্ষক-কর্মচারী থাকলেও স্নাতক কোর্স চালু না হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে হাতে গোনা। চলতি শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ১২০ আসনের বিপরীতে ভর্তি হয়েছেন ২২৭ জন।

সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজগুলো হলো ঢাকার মোহাম্মদপুরের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, রাজশাহীর সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, ময়মনসিংহের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, বাগেরহাটের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ, চট্টগ্রামের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ এবং বরিশালের সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজ। এসব কলেজ পরিচালিত হয় যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন ক্রীড়া পরিদপ্তরের মাধ্যমে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গত বুধবার ক্রীড়া পরিদপ্তরের পরিচালক মো. মোস্তফা জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আশা করছি, চলতি বছর শিক্ষার্থী ভর্তি বৃদ্ধি পাবে। স্নাতক কোর্স চালু ও শিক্ষকদের পদ ও চাকরি স্থায়ী করার বিষয়ে কাজ চলছে।’

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ হাজার ৩১৬টি। এগুলোর প্রতিটিতে একটি করে শারীরিক শিক্ষক পদ রয়েছে। তবে এসব পদে কত শিক্ষক কর্মরত আছেন, সে তথ্য পাওয়া যায়নি। সাধারণ শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে ডিগ্রিধারীরা এসব পদে চাকরির সুযোগ পান। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষক পদে ২ হাজার ৫৮৩ জনের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

ক্রীড়া পরিদপ্তরের তথ্য বলছে, ছয়টি শারীরিক শিক্ষা কলেজে মোট আসন ১ হাজার ১২০টি। চলতি শিক্ষাবর্ষে এসব কলেজে ভর্তি হয়েছেন ২২৭ জন। এসব কলেজে প্রভাষকের ৫৬টি পদের মধ্যে কর্মরত ৪৩ জন এবং কর্মচারী আছেন ৮৭ জন। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও বাগেরহাটের শারীরিক শিক্ষা কলেজে চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন মোট ৬৯ জন। বাকি তিনটিতে ভর্তি হয়েছেন ১৫৮ শিক্ষার্থী।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ঢাকার সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ রয়েছেন। বাকিগুলোর অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শারীরিক শিক্ষা কলেজের অন্তত ১০ শিক্ষক জানান, পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ না থাকায় কলেজগুলো চলছে জোড়াতালি দিয়ে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকায় প্রশাসনিক কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ২০১৬ সালে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে অধিকাংশ প্রভাষক নিয়োগ পেলেও এখনো তাঁদের চাকরি স্থায়ী হয়নি।

কারণ, শারীরিক শিক্ষা কলেজগুলোতে প্রভাষক পদই সৃষ্টি করা হয়নি। অর্থাৎ প্রভাষক পদের জনবলকাঠামো চূড়ান্ত হয়নি। তাঁরা বলেন, পাঁচ শারীরিক শিক্ষা কলেজে পূর্ণকালীন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ না থাকায় প্রশাসনিক ও শ্রেণি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। এর প্রভাব পড়ছে পড়াশোনায়। দিন দিন শিক্ষার্থী কমার এটি অন্যতম কারণ।

স্নাতক কোর্স না থাকায় শিক্ষার্থী কম: চাকরির বাজারে শারীরিক শিক্ষায় চার বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্সের চাহিদা থাকলেও সরকারি ছয়টি কলেজের একটিতেও স্নাতক কোর্স নেই। এ কারণে এসব কলেজে পড়তে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম।

জানা যায়, ঢাকার শারীরিক শিক্ষা কলেজে এক বছর মেয়াদি দুটি কোর্স চালু আছে। এগুলো হলো ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন এবং মাস্টার্স অব ফিজিক্যাল এডুকেশন। বাকি পাঁচটি কলেজে শুধু ব্যাচেলর অব ফিজিক্যাল এডুকেশন কোর্স চালু রয়েছে।

ক্রীড়া পরিদপ্তর থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালে ঢাকার সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজে চার বছর মেয়াদি স্নাতক প্রোগ্রাম চালুর অনুমতি দেওয়া হলেও এখনো চালু হয়নি। চারটি পাবলিক এবং একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষায় স্নাতক কোর্স থাকায় শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজগুলো।

জানতে চাইলে ঢাকার সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুল হক আজকের পত্রিকা'কে বলেন, চাকরির বাজারের জন্য চার বছর মেয়াদি স্নাতক কোর্স প্রয়োজন। অথচ সরকারি শারীরিক শিক্ষা কলেজগুলোতে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা (অবকাঠামো-শিক্ষক) থাকার পরও স্নাতক কোর্স চালু করা হচ্ছে না। এতে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। তিনি বলেন, নানা সমস্যার কারণে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, পর্যাপ্ত শিক্ষক-কর্মচারী থাকলেও শিক্ষার্থী নেই বললেই চলে। বিষয়টি খুব দুঃখজনক।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইতিহাস দরজায় কড়া নেড়ে বলছে, ১৯৭১ থেকে পাকিস্তান কি শেখেনি কিছুই

‘আমাদের মরদেহ বাড়িতে নিয়ো না’

কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের খামারবাড়ি অবরোধের ঘোষণা

মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীর পিঠে পাড়া দিয়ে অটোরিকশায় শহর ঘোরাল ছাত্রদল, সঙ্গে উচ্চ স্বরে গান

যশোরে আত্মগোপনে থাকা আ.লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বাড়িতে পুলিশের অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত