আজ বাবা দিবস

আপডেট : ১৬ জুন ২০২৪, ১৬: ৩৬
Thumbnail image

প্রকৃতিতে তোমরা গম্ভীর বলে আমাদের যেমন কিছু বলো না, সেই গাম্ভীর্যের দেয়াল ভাঙতে না পেরে আমরা পালিয়ে পালিয়ে থাকি। তাই এখানেই থাক আমাদের কথা। তোমরা বুঝে নিয়ো।

যে আমাকে জিতিয়ে দেয়
পৃথিবীতে যে মানুষগুলোকে ভালোবাসি বলা হয়ে ওঠে না, তাদের মধ্যে বাবা অন্যতম। আমাদের জন্য অতিসাধারণ কিছুকেও বিশেষ কিছুতে পরিণত করার চেষ্টায় নিরন্তর ছুটে চলা এই মানুষটিকে কোনো মানদণ্ডে পরিমাপ করা যায় না। আমরা দুই ভাইবোন। ছোটবেলা থেকেই আমি বাবার কড়া শাসনে বড় হয়েছি। তখন প্রচণ্ড রাগ হলেও এখন বুঝতে পারি, সে সময়কার প্রতিটি শব্দ কীভাবে আমার জীবনে উপন্যাস হয়ে ধরা দিয়েছে। বাবার বকাগুলো এখন আর সেভাবে শোনা হয় না। তবে প্রতিদিন খাবার টেবিলে আমাদের বাবা-ছেলের মধ্যে একপ্রকার মিনি টক শো চলে। বিভিন্ন বিষয়ে আমি ইচ্ছা করেই বাবার মতের বিরুদ্ধে বলি। কিন্তু এই একজন মানুষ, যে আমাকে জিতিয়ে দেয়। 
মো. সৈয়দুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 আব্বুর তালের আছাড়
আব্বু মেজ মামার বাসায় যাচ্ছিলেন এক কাঁদি তাল নিয়ে। আমি যেতে চাইলাম, নাছোড়বান্দার মতো। আমি বোধ হয় তখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি। লাল একটা ফ্রক পরে আব্বুর বাইকের পেছনে চড়ে বসলাম। আর আম্মু হাতে ধরিয়ে দিল সেই এক কাঁদি তাল। আমি তখন কোনো একটা সিনেমাতে দেখেছিলাম; নায়িকা বাইকের পেছনে উল্টো করে বসে থাকে। আমিও জিদ ধরলাম, উল্টো করে বসব। সবাই এত বারণ করল! আমি কারও কথা শুনলাম না। বাধ্য হয়ে সেভাবেই বসিয়ে দিল আমাকে। উপজেলা গেট পার হওয়ার সময় মেইন রোডে উঠতে রাস্তা একটু উঁচু ছিল। আব্বু যখন মেইন রোডে উঠলেন, আমি অমনি ধপাস করে পড়ে গেলাম তালসহ। এ গল্প শুনে আমার ভাই তার নাম দিয়েছিল তালের আছাড়। 
তামান্না ইসলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। 

 তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা
বাবার সাদা টাই আর কালো কোট দেখে ছোটবেলা থেকে আমার আইন পড়ার ইচ্ছা ছিল প্রবল। আইন কী জিনিস, যখন বুঝতাম না, তখন থেকে আমি হতে চেয়েছি বাবার মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর যখন বিষয় পছন্দের নানা পরামর্শ আসতে থাকল, কোনো কিছু বিবেচনায় না নিয়ে আইনকেই বেছে নিয়েছি পড়ার বিষয় হিসেবে। রবিঠাকুর কাকে ভেবে ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’ লাইনটি লিখেছিলেন জানি না। কিন্তু যখনই কানে আসে এই লাইন, ভেসে ওঠে বাবার মুখ। বাবার অধীনে আইনজীবী হিসেবে আইনচর্চা করতে চাই; গুরুমুখী বিদ্যায় বাবার থেকে ভালো গুরু তো পাব না আর কোথাও!
অয়ন চক্রবর্তী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 বাবার সঙ্গে মজার স্মৃতি
আমি যখনই কিছু অর্জন করেছি, আমার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খেয়েছে, এই অর্জন কি আমার বাবাকে সন্তুষ্ট করতে যথেষ্ট? আমি কী প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছি, কী কী আমার সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলোর অর্জন কিংবা আমি কী কী অ্যাওয়ার্ড পেয়েছি, সেসবে আমার বাবা কখনো খেয়াল রাখেনি। কখনো কখনো মন খারাপ হয়। আবার নিজেই নিজেকে বুঝিয়ে আরেক ধাপ এগোনোর চেষ্টা করি। একবার একজন আমার বাবাকে ফোন করে আমার ভীষণ প্রশংসা করলেন। ফোনটা রেখে বাবা বললেন, ‘আমি বলি না। কিন্তু আমি শ্রেয়াকে নিয়ে মনে মনে গর্ব করি।’ তিনি খেয়াল করেননি আমি পাশে ছিলাম, খেয়াল করলে কখনো বলতেন না। এই মুহূর্তটা আমার জীবনে নোবেল জেতার মতো। আমার মধ্যে তখন পৃথিবীর সর্বোচ্চ তৃপ্তি অনুভূত হচ্ছিল। আমি সেটা লিখে ব্যক্ত করতে পারব না হয়তো। 
শ্রেয়া ঘোষ, ডিন’স স্কলার, হোবার্ট অ্যান্ড উইলিয়াম স্মিথ কলেজেস

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত