২৫ বছরে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

মীর মহিবুল্লাহ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ০৮: ১৩

আগামীকাল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ২০০০ সালের ৮ জুলাই কৃষি কলেজের অবকাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে অবকাঠামোগত ধারাবাহিক উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিকতার ছোঁয়া পেতে চলেছে। এর সেশনজট দূর হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রাপ্য পদোন্নতি পাচ্ছেন যথাসময়ে। 

পটুয়াখালী শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তরে দুমকি উপজেলায় ৯৭ একর জায়গা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস। বরিশালের খানপুরা, বাবুগঞ্জে এর আরও দুটি ক্যাম্পাস আছে।

গবেষণা কার্যক্রম
বিশ্ববিদ্যালয়টির রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। এই সেন্টারের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ পর্যন্ত ৮০১টি গবেষণা প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। বর্তমানে নিজস্ব ও সরকারি অর্থায়নে ২০২২-২৩ সালে পরিচালিত গবেষণা প্রকল্প ১৫৩টি।

পবিপ্রবির গবেষণায় বেশ কয়েকটি উন্নত ও উচ্চফলনশীল ফলের জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম পিএসটিইউ বিলাতি গাব-১, পিএসটিইউ বিলাতি গাব-২, পিএসটিইউ ডেউয়া-১, পিএসটিইউ ডেউয়া-২, পিএসটিইউ বাতাবিলেবু-১, পিএসটিইউ কামরাঙা-১, পিএসটিইউ কামরাঙা-২, পিএসটিইউ তেঁতুল-১, পিএসটিইউ বৈচি-১।

 শিক্ষা, সংস্কৃতি, স্বাধীনতাসংগ্রাম, মননশীলতা, আধুনিকতায় দক্ষিণাঞ্চলের রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। এই অঞ্চলের অতীত গৌরবকে এ বিশ্ববিদ্যালয় আরও দৃঢ় ও সমৃদ্ধ করবে বলে আমার বিশ্বাস। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণাঞ্চলের সত্যিকারের ‘বাতিঘর’ হয়ে উঠুক—এটা আমার প্রত্যাশা।
অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত উপাচার্য, পবিপ্রবি

উপকূলীয় এলাকার জন্য উন্নত ক্রপিং সিস্টেম ও বায়োচার প্রযুক্তি উদ্ভাবন, ১০০ দেশি জাতের পাঁচ শর বেশি ধানের গবেষণা ও সংগ্রহশালা তৈরি, ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষে স্ট্রিপ পদ্ধতিতে ২২ থেকে ২৫ শতাংশ বেশি উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরি এবং লবণাক্ততা ও পানিসহিষ্ণু ধান উৎপাদনের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

 পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের শিক্ষা ও কৃষির উন্নয়ন এবং তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যাঁরা নেতৃত্ব দেন এবং সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়েছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই। 
অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী ট্রেজারার, পবিপ্রবি

মাছের দ্রুত বৃদ্ধিকরণ প্রযুক্তি, শুঁটকি তৈরি ও সংরক্ষণের নিরাপদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং দেশের প্রথম ও একমাত্র জলহস্তীর কঙ্কাল প্রস্তুতকরণ ছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণী নিয়ে দেড় শর বেশি গবেষণা চলমান রয়েছে। কৃষি সমৃদ্ধ করতে প্রতিনিয়ত চলছে নানা ধরনের গবেষণা কার্যক্রম। এ ছাড়া প্রোগ্রাম বেইজড গবেষণা কার্যক্রম এগিয়ে চলছে। 

শিক্ষার মান
আমেরিকান কোর্স ক্রেডিট সিস্টেম পদ্ধতি চালু রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। হাতে-কলমে শিক্ষাদানের জন্য এখানে রয়েছে ৩২টি আধুনিক গবেষণাগার। রয়েছে অত্যাধুনিক সরঞ্জামসংবলিত একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাগার।

 বর্তমানে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ধরনের গবেষণা করে দেশের ও দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়টি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হোক। আমাদের নানান চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আশা করি সরকারের সহযোগিতায় আরও নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে আমরা চ্যালেঞ্জগুলো অতিক্রম করতে পারব।
অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু রেজিস্ট্রার, পবিপ্রবি

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়ন করতে কোর্স কারিকুলামে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। চালু হয়েছে আউটকাম বেইজড কারিকুলাম। একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রমে শতভাগ ডিজিটালের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। 

সহশিক্ষা কার্যক্রম
পবিপ্রবিতে নিয়মিতভাবে বার্ষিক ক্রীড়া ও আন্তঅনুষদীয় টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। সংস্কৃতিচর্চার জন্য রয়েছে কয়েকটি সংগঠন ও গানের দল। এ ছাড়া টিএসসিকেন্দ্রিক অর্ধশতাধিক সামাজিক সংগঠন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ডিজিটাল ক্যাম্পাস
বিশ্ববিদ্যালয়টির ক্যাম্পাস ডিজিটাল ক্যাম্পাসে পরিণত করার কাজ চলছে। এর লাইব্রেরিকে শতভাগ ডিজিটাল করার কাজ চলছে। রয়েছে শিক্ষার্থী, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ডিজিটাল পরিচয়পত্র। হলসহ সবখানে রয়েছে হাইস্পিড ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট। পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে অটোমেশন করার কাজ চলমান।

অবকাঠামো উন্নয়ন
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। ভূমি উন্নয়ন, খামার, হলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে সমানতালে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বর্তমান উপাচার্য একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরিসহ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন পরিকল্পনার কাজে হাত দিয়েছেন। সমুদ্রসম্পদের যথাযথ ব্যবহার ও গবেষণার জন্য কুয়াকাটায় মেরিন ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৬০০ কোটি টাকার ডিপিপি জমা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও উন্নয়নের জন্য ফিজিক্যাল মাস্টারপ্ল্যান তৈরি শেষ পর্যায়ে। অবকাঠামো উন্নয়ন এবং একটি কেন্দ্রীয় গবেষণাগারসহ অ্যানিমেল রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা এই মাস্টারপ্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এ ছাড়া ইইই বিভাগ, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, কৃষি প্রকৌশল এবং বায়োমেডিকেল বিভাগসহ অন্যান্য যুগোপযোগী বিভাগ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত