Ajker Patrika

বন্যার্তদের সহায়তায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বুটেক্স শিক্ষার্থী

আলভী আহমেদ, বুটেক্স এম্বাসাডর 
আপডেট : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১৭: ২৬
বন্যার্তদের সহায়তায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বুটেক্স শিক্ষার্থী

বন্যার্তদের ত্রাণ বিতরণের জন্য ২৪ আগস্ট (শনিবার) ফেনীতে যান বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) একদল শিক্ষার্থী। পরদিন ত্রাণ বিতরণ শেষে ঢাকায় ফেরার সময় তাঁদের বহনকারী পিকআপ ভ্যানটি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গৌরীপুরে ট্রাক্টরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এতে গুরুতর আহত হন দুজন শিক্ষার্থী। উভয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।

আহত শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল লাবিব ও সাজ্জাদ আল মামুনকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর আব্দুল্লাহ আল লাবিবের অবস্থা খারাপ দেখে তাঁকে কুমিল্লার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে লাবিবের অবস্থা আশঙ্কাজনক ও গুরুতর দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা সেখান থেকে হেলিকপ্টার করে ঢাকা সিএমএইচে পাঠান।

লাবিব এখন ঢাকার সিএমএইচের লাইফ সাপোর্টে আছে। দুর্ঘটনার কারণে তাঁর ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো (মস্তিষ্ক, ফুসফুস, বক্ষপিঞ্জর, মেরুদণ্ডের স্পাইনাল কর্ড) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে লাবিবের শরীরের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হয়।      

জানা যায়, শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল লাবিব স্কুলে পড়া অবস্থায় ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিল। তা ছাড়া চলতি বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেও লাবিব শুরু থেকে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যখন আন্দোলনটা শুধু কোটা আন্দোলনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল, তখন থেকেই লাবিব নিয়মিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে আন্দোলন করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বুটেক্সের সমন্বয় প্যানেলের একজন ছিল লাবিব।

পাশাপাশি বুটেক্সের জোন প্রথা ও ছাত্ররাজনীতি বন্ধ এবং বুটেক্সকে সংস্কার করার জন্য যে আন্দোলন হয়েছিল, তাতেও লাবিবের সক্রিয় ভূমিকা এবং অংশগ্রহণ ছিল। 

লাবিবের প্রসঙ্গে বুটেক্সের শিক্ষার্থীরা জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বুটেক্সের পক্ষ থেকে ত্রাণ তহবিল শুরু করার প্রথম উদ্যোগ নেন লাবিব। তিনি তাঁর বন্ধুদের নিয়ে পুরো তেজগাঁও এলাকায় মানুষের কাছে গিয়ে ত্রাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা শুরু করেছিলেন। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের জন্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করে ফেরার পথে তিনি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ‘লাবিব আমাদের দেশ ও জাতির সম্পদ। লাবিব একজন সাধারণ মানুষ না, সে একজন স্বপ্নবাজ মানুষ; যে দেশকে বদলের স্বপ্ন দেখে। দেশের মানুষের ভালোর জন্য যে নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে দিতেও পিছপা হবে না। মানুষকে সাহায্য করতে গিয়ে তার জীবনটা আজ হুমকির মুখে। এই ছেলেটার যে দেশপ্রেম দেখেছি, যে সাহস দেখেছি—এমনটা আমরা আর কারও মাঝে দেখিনি।’

শিক্ষার্থীদের দাবি, লাবিবের এই দুর্দিনে যেন অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর পাশে দাঁড়ান এবং লাবিবের চিকিৎসার ভার রাষ্ট্র বহন করেন। তাঁর সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

শিক্ষার্থীদের মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যাঁরা আহত হয়েছিলেন, তাঁদের চিকিৎসাব্যবস্থা তো রাষ্ট্র বিনা মূল্যে করে দিয়েছিল, লাবিবও তো সে আন্দোলনের একজন ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধা; একজন সমন্বয়ক। দেশের এমন একজন সম্পদের জন্য রাষ্ট্র কিছু করা প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত