ফজলুল কবির
রূপকথার দিন ফুরিয়ে যায়। রূপকথা যেন কোন সুদূর অতীতের বিষয়-আশয়, যার কথা বলে বলে হা-পিত্যেশ করা যায়। চোখে মায়াঞ্জন না থাকলে অরূপ দুনিয়ায় রূপের কথা ফুরিয়ে যায়, যেতে বাধ্য। এ কারণেই সব সোনালি সময় ভর করে থাকে অতীতের ঘাড়ে। এটাই নিয়ম যেন। যেমনটা শোনা যায় এ দেশের নানা বিষয় নিয়ে, সে সিনেমা হোক বা ভাঁড়ার।
সিনেমার কথা উঠলেই কয়েক দশক পেছনে ফিরে যাওয়াটাই যেন নিয়ম। ‘আহ, কিছু হচ্ছে না’ বলে শুরু করাটাই যেন একমাত্র চল। এই চলে একটা হাওয়া অন্তত দিয়ে গেল ‘হাওয়া’। বদলের কি-না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না অবশ্য।
তাহলে একটু শুরু থেকে শুরু করা যাক। দিনটি ছিল, ‘শুভ শনিবার’। কেউ চমকালে কিছু করার নেই। তবে অবিশ্বাসীদের জন্য বলে রাখাই যায় যে, শনিবার শনি হয়ে নয়, কারও কারও কাছে ছুটিবার হয়ে শুভ হিসেবে ধরা দেয়।
গত শনিবার ছিল হাওয়া বইতে শুরু করার পর নবম দিন। প্রথম কয়েক দিন বিভিন্ন দিক থেকেই ‘হাউসফুল’ আওয়াজ আসছিল। একই আওয়াজ দিয়েছে কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’-ও। দুটিরই টিকিট পাওয়া নাকি দুষ্কর। তাই ‘সিনেমা দেখব’ ভাবনা নিয়েই সবান্ধব বের হওয়া। উদ্দেশ্য—হাওয়া বা পরাণ, যেটার টিকিট পাওয়া যায়, সেটাই সই। সময়টা বিকেল। লক্ষ্য—মতিঝিল মধুমিতা হল।
এদিকে বাস-গাড়ি বেশ কম। ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যে যখন ‘পরাণ’ ওষ্ঠাগত, তখনই আগের দিন; অর্থাৎ, শুক্রবার (৫ আগস্ট) সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল। পথে তার ধক দেখা গেল। তোপখানা রোড ধরে পুরানা পল্টন পর্যন্ত স্লোগানে মুখর। এসব দেখে-শুনে মনে যা-ই আসুক, কণ্ঠে যা-ই ভিড় করুক, ছুটিবার তবু সিনেমার দিকেই হাঁটে। এই হাঁটা যে শেষ পর্যন্ত মন্দ হয়নি, তা মধুমিতাই বলে দিয়েছে।
কৈশোরের মধুমিতা হল যেন হঠাৎ করেই ফিরে এসেছে। ‘হাওয়া’ বইছে মধুমিতায়। ‘পরাণ’ অন্য হলে। হলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পাশ ঘেঁষে একজন চলে গেল চাপা কণ্ঠে ‘ডিসি, ডিসি’ করতে করতে। একটু তাকাতেই হাতের মুঠো আলগা করে দেখিয়ে দিলেন টিকিটের তাড়া। তাঁকে উপেক্ষা করে সামনে এগোতেই দেখা গেল বন্ধ কাউন্টারের সামনে টিকিটের কিউ সাপ হবে হবে করছে। সেখানে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই আরেকজন পাশ ঘেঁষে চলে গেলেন। একই বুলি—ডিসি ডিসি। একজন পাশ থেকে প্রশ্ন করলেন, কত? উত্তর এল—৩০০। শুনেই সামনে তাকালাম। কাউন্টারের ওপরে বড় করে লেখা ১৫০।
কেমন ঘাবড়ে যেতে হলো। কিন্তু একটা কি ভালো লাগাও দোলা দিল? টিকিট ব্ল্যাকের মতো অন্যায় দেখে ভালো লাগা! স্বীকার করতেই হবে, কিছুটা ভালো লেগেছে। হলগুলোর দুর্দিন তো চোখের সামনেই এসেছিল। ব্ল্যাকারদের বিমর্ষ হতে হতে হারিয়ে যেতে দেখা এই চোখ হঠাৎ তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে সিনেমারই ফিরে আসার নিদর্শন খুঁজেছে হয়তো। অপরাধ মার্জনা হোক।
খোঁজ নিয়ে ঘাম ছুটে গেল। টিকিট নেই সত্যি। অগত্যা, আরেকজন পাশ ঘেঁষে যাওয়া লোকের সঙ্গে কথা বলতেই হলো।
সিনেমা শুরুর কয়েক মিনিট পর হলে ঢোকা গেল। শুরুটা মিস হয়েছে। হলভর্তি মানুষ। ভুল সিটে বসে একবার সিট পাল্টানো কিছুটা বিরক্তি উৎপাদন করল। হাওয়ার দৃশ্যরূপ, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ইত্যাদি নিয়ে কথা হয়েছে অনেক। ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গান কিংবা একজন হাশিম মাহমুদ তো এখন সবার মুখে মুখে। কিংবা চঞ্চল চৌধুরী, সুমন আনোয়ার, শরিফুল রাজ, নাজিফা তুষি, সোহেল মণ্ডলসহ সবার অভিনয় নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর।
অনেকেই ‘হাওয়া’-কে ১০০-তে লাখ নম্বর দিতে প্রস্তুত। অনেকে কিছুটা সমালোচনা করে ছাড় দিয়েছেন। কেউ বলছেন, একটা গোটা জলজ সিনেমা বানানো মুখের কথা নয়। মেজবাউর রহমান সুমন প্রশংসায় ভাসছেন। এই সব দৃশ্য পাশ কাটিয়ে হাওয়া মাখা যাক।
হাওয়ার গল্প প্রতিশোধের, যেখানে চাঁন মাঝি চাঁদ সওদাগরের কথা স্মরণ করায়। আছে লখাইও, ইঞ্জিনঘরের লোহালক্কড়ে যার বাস। আর বেহুলা? হ্যাঁ, সেও আছে পুরো জাহাজে একমাত্র নারী চরিত্র হিসেবে, বোবার অভিনয় করে বহু পুরুষ বাঁচিয়ে এক প্রিয়জনে নিবেদনের মাধ্যমে। এই প্রিয়র কাছেই শুধু তার সজল বুলির আয়াস। এই একজনের কাছেই শুধু তার গোপন দুয়ার খোলা। নৈকট্যের আলাপে যে শুরুতেই ইঞ্জিনম্যানকে জানায়, দেবীর আদেশেই সে এসেছে। কে এই দেবী? ‘মা মনসা’ নয়তো?
না, শুধু মনসামঙ্গলের কথাই স্মরণ করায় না হাওয়া। বহুল পঠিত ‘অ্যানশিয়েন্ট মেরিনার’-এর কথাও সে মনে করিয়ে দেয়, যখন ডাঙা না পেয়ে ফিরে আসা পাখিটি পুড়িয়ে খেয়ে ফেলা হয়, যখন পাল ভেঙে হুড়মুড় করে পড়ে যায়, যখন পানির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়, যখন পার্কেস দূরে জাহাজ দেখার ভ্রমে সাগরের অসীমে সাঁতরে চলে যায়। এর সঙ্গে আছে এই সময়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রেম ও যৌনতার ভিন্নধর্মী উপস্থাপন, আছে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির মঞ্চায়ন। এই সবই চমৎকার। তবু একটা কিন্তু থেকে যায়। সেটা কী?
হাওয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের কথা আগেই বলা হয়েছে। কস্টিউম ডিজাইনার একটা বড় বাহবা পেতেই পারেন। শুধু নাজিফা তুষির এক কাপড়ের অমলিন দশা একটা খচখচানি রেখে দেয়। শিল্প নির্দেশনা লেটার মার্কের বেশিই পাবে। তাহলে কিন্তুটা কোথায়? কিন্তুটা গল্পের বুনট নিয়ে। সেই বোবা মেয়েটার মুখে বুলি ফোটাতে হয়েছে শুধু তার প্রতিশোধস্পৃহার কার্যকারণ বর্ণনার জন্যই। অথচ প্রতিশোধের গল্পের বয়ান অনায়াসে অপরাধের কিছু দৃশ্যরূপের মাধ্যমেই হয়তো ফুটিয়ে তোলা যেত, বিশেষত যেহেতু বর্ণনা অনুযায়ী অপরাধের সংঘটনস্থলও সাগরই। ফলে শুধু জলজ পরিবেশে একটি আস্ত সিনেমা নির্মাণের লক্ষ্যের সঙ্গে তা খুব একটা সাংঘর্ষিক হতো না। রয়েছে আরেকটা বড় কিন্তু। অপরাধ তো করেছিল চাঁন ডাকাত, যে এখন চাঁন মাঝি। তাহলে তার সঙ্গীদের এমন করুণ পরিণতির কারণ কী? সেটা কি শুধুই কামুক পুরুষদের প্রতি একজন প্রতীকী নারীর প্রতিশোধ? তেমনটা হলে, তা কিন্তু সিনেমায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
যাক, এসব কাটাছেঁড়া, এগুলো সিনেমা বোদ্ধারা করাই ভালো। বরং ভালো লাগার গল্পে ফেরা যাক। সিনেমা হলে একটু একটু পরপর সিটি বেজেছে, কখনো কখনো হয়তো না বুঝেই সিটি বাজিয়েছেন কেউ। পাশে বসা দুই ভদ্রলোকের ক্রমাগত বিশ্লেষণ মনোযোগের বারোটা বাজিয়েছে। এই সব একই সঙ্গে বিরক্তি ও ভালো লাগা দুই-ই উৎপাদন করেছে। এই ভালো লাগার ক্ষণটি নির্মাণের কৃতিত্ব হাওয়া-কে দিতেই হবে।
কে নায়ক—হলের ভেতর এমন প্রশ্ন ঘুরে বেড়িয়েছে হর-হামেশাই। পর্দায় চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থিতি তাঁকে নায়ক ভাবতে বাধ্য করলেও তাঁর চরিত্র আবার প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে অনেকের মধ্যেই। পাশে বসা বোদ্ধা দুই দর্শক একটু পরপরই এ নিয়ে আলাপে মেতেছেন। বোঝা গেছে, হাওয়া-এর মতো সিনেমা দেখে তাঁরা অভ্যস্ত নন। তাহলে কেন এলেন তাঁরা হলে? নিশ্চিতভাবেই হাওয়ার সজোর প্রচার এর বড় কারণ। হাওয়া সিনেমা এর প্রচার-কৌশলের কারণেও দারুণ নম্বর দাবি করতে পারে, যার অভাবে বাংলা সিনেমা বহু দিন ভুগেছে। সঙ্গে ছিল হলে যেতে চাওয়া, কিন্তু জুতমতো কনটেন্ট খুঁজে না পাওয়া শহুরে মধ্যবিত্তের উদ্গ্রীব অপেক্ষার তাল। বলে রাখা ভালো—শহুরে মধ্যবিত্তের কনটেন্ট না পাওয়ার আক্ষেপ কোনো দিন মিটে গেলে, ব্ল্যাকারদের দেখে শুধু বিরক্তিই যেদিন উৎপাদন হবে, সেদিনই হবে হাওয়ার মতো সিনেমার আসল পরীক্ষা। সে জন্য হাওয়াকে মৌসুমি হলে চলবে না।
সব মিলিয়ে মেজবাউর রহমান সুমন ও তাঁর পুরো দল হাওয়াকে যেভাবে বইয়েছেন, তাতে সাধুবাদ পেতেই পারেন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এ যেন মৌসুমি হাওয়া না হয়।
রূপকথার দিন ফুরিয়ে যায়। রূপকথা যেন কোন সুদূর অতীতের বিষয়-আশয়, যার কথা বলে বলে হা-পিত্যেশ করা যায়। চোখে মায়াঞ্জন না থাকলে অরূপ দুনিয়ায় রূপের কথা ফুরিয়ে যায়, যেতে বাধ্য। এ কারণেই সব সোনালি সময় ভর করে থাকে অতীতের ঘাড়ে। এটাই নিয়ম যেন। যেমনটা শোনা যায় এ দেশের নানা বিষয় নিয়ে, সে সিনেমা হোক বা ভাঁড়ার।
সিনেমার কথা উঠলেই কয়েক দশক পেছনে ফিরে যাওয়াটাই যেন নিয়ম। ‘আহ, কিছু হচ্ছে না’ বলে শুরু করাটাই যেন একমাত্র চল। এই চলে একটা হাওয়া অন্তত দিয়ে গেল ‘হাওয়া’। বদলের কি-না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না অবশ্য।
তাহলে একটু শুরু থেকে শুরু করা যাক। দিনটি ছিল, ‘শুভ শনিবার’। কেউ চমকালে কিছু করার নেই। তবে অবিশ্বাসীদের জন্য বলে রাখাই যায় যে, শনিবার শনি হয়ে নয়, কারও কারও কাছে ছুটিবার হয়ে শুভ হিসেবে ধরা দেয়।
গত শনিবার ছিল হাওয়া বইতে শুরু করার পর নবম দিন। প্রথম কয়েক দিন বিভিন্ন দিক থেকেই ‘হাউসফুল’ আওয়াজ আসছিল। একই আওয়াজ দিয়েছে কাছাকাছি সময়ে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’-ও। দুটিরই টিকিট পাওয়া নাকি দুষ্কর। তাই ‘সিনেমা দেখব’ ভাবনা নিয়েই সবান্ধব বের হওয়া। উদ্দেশ্য—হাওয়া বা পরাণ, যেটার টিকিট পাওয়া যায়, সেটাই সই। সময়টা বিকেল। লক্ষ্য—মতিঝিল মধুমিতা হল।
এদিকে বাস-গাড়ি বেশ কম। ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্যে যখন ‘পরাণ’ ওষ্ঠাগত, তখনই আগের দিন; অর্থাৎ, শুক্রবার (৫ আগস্ট) সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল। পথে তার ধক দেখা গেল। তোপখানা রোড ধরে পুরানা পল্টন পর্যন্ত স্লোগানে মুখর। এসব দেখে-শুনে মনে যা-ই আসুক, কণ্ঠে যা-ই ভিড় করুক, ছুটিবার তবু সিনেমার দিকেই হাঁটে। এই হাঁটা যে শেষ পর্যন্ত মন্দ হয়নি, তা মধুমিতাই বলে দিয়েছে।
কৈশোরের মধুমিতা হল যেন হঠাৎ করেই ফিরে এসেছে। ‘হাওয়া’ বইছে মধুমিতায়। ‘পরাণ’ অন্য হলে। হলের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই পাশ ঘেঁষে একজন চলে গেল চাপা কণ্ঠে ‘ডিসি, ডিসি’ করতে করতে। একটু তাকাতেই হাতের মুঠো আলগা করে দেখিয়ে দিলেন টিকিটের তাড়া। তাঁকে উপেক্ষা করে সামনে এগোতেই দেখা গেল বন্ধ কাউন্টারের সামনে টিকিটের কিউ সাপ হবে হবে করছে। সেখানে দাঁড়াতে দাঁড়াতেই আরেকজন পাশ ঘেঁষে চলে গেলেন। একই বুলি—ডিসি ডিসি। একজন পাশ থেকে প্রশ্ন করলেন, কত? উত্তর এল—৩০০। শুনেই সামনে তাকালাম। কাউন্টারের ওপরে বড় করে লেখা ১৫০।
কেমন ঘাবড়ে যেতে হলো। কিন্তু একটা কি ভালো লাগাও দোলা দিল? টিকিট ব্ল্যাকের মতো অন্যায় দেখে ভালো লাগা! স্বীকার করতেই হবে, কিছুটা ভালো লেগেছে। হলগুলোর দুর্দিন তো চোখের সামনেই এসেছিল। ব্ল্যাকারদের বিমর্ষ হতে হতে হারিয়ে যেতে দেখা এই চোখ হঠাৎ তাদের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে সিনেমারই ফিরে আসার নিদর্শন খুঁজেছে হয়তো। অপরাধ মার্জনা হোক।
খোঁজ নিয়ে ঘাম ছুটে গেল। টিকিট নেই সত্যি। অগত্যা, আরেকজন পাশ ঘেঁষে যাওয়া লোকের সঙ্গে কথা বলতেই হলো।
সিনেমা শুরুর কয়েক মিনিট পর হলে ঢোকা গেল। শুরুটা মিস হয়েছে। হলভর্তি মানুষ। ভুল সিটে বসে একবার সিট পাল্টানো কিছুটা বিরক্তি উৎপাদন করল। হাওয়ার দৃশ্যরূপ, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ইত্যাদি নিয়ে কথা হয়েছে অনেক। ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গান কিংবা একজন হাশিম মাহমুদ তো এখন সবার মুখে মুখে। কিংবা চঞ্চল চৌধুরী, সুমন আনোয়ার, শরিফুল রাজ, নাজিফা তুষি, সোহেল মণ্ডলসহ সবার অভিনয় নিয়ে কথা হয়েছে বিস্তর।
অনেকেই ‘হাওয়া’-কে ১০০-তে লাখ নম্বর দিতে প্রস্তুত। অনেকে কিছুটা সমালোচনা করে ছাড় দিয়েছেন। কেউ বলছেন, একটা গোটা জলজ সিনেমা বানানো মুখের কথা নয়। মেজবাউর রহমান সুমন প্রশংসায় ভাসছেন। এই সব দৃশ্য পাশ কাটিয়ে হাওয়া মাখা যাক।
হাওয়ার গল্প প্রতিশোধের, যেখানে চাঁন মাঝি চাঁদ সওদাগরের কথা স্মরণ করায়। আছে লখাইও, ইঞ্জিনঘরের লোহালক্কড়ে যার বাস। আর বেহুলা? হ্যাঁ, সেও আছে পুরো জাহাজে একমাত্র নারী চরিত্র হিসেবে, বোবার অভিনয় করে বহু পুরুষ বাঁচিয়ে এক প্রিয়জনে নিবেদনের মাধ্যমে। এই প্রিয়র কাছেই শুধু তার সজল বুলির আয়াস। এই একজনের কাছেই শুধু তার গোপন দুয়ার খোলা। নৈকট্যের আলাপে যে শুরুতেই ইঞ্জিনম্যানকে জানায়, দেবীর আদেশেই সে এসেছে। কে এই দেবী? ‘মা মনসা’ নয়তো?
না, শুধু মনসামঙ্গলের কথাই স্মরণ করায় না হাওয়া। বহুল পঠিত ‘অ্যানশিয়েন্ট মেরিনার’-এর কথাও সে মনে করিয়ে দেয়, যখন ডাঙা না পেয়ে ফিরে আসা পাখিটি পুড়িয়ে খেয়ে ফেলা হয়, যখন পাল ভেঙে হুড়মুড় করে পড়ে যায়, যখন পানির অভাব প্রকট হয়ে দেখা দেয়, যখন পার্কেস দূরে জাহাজ দেখার ভ্রমে সাগরের অসীমে সাঁতরে চলে যায়। এর সঙ্গে আছে এই সময়ের সঙ্গে মিল রেখে প্রেম ও যৌনতার ভিন্নধর্মী উপস্থাপন, আছে নারীর প্রতি পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গির মঞ্চায়ন। এই সবই চমৎকার। তবু একটা কিন্তু থেকে যায়। সেটা কী?
হাওয়ার ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের কথা আগেই বলা হয়েছে। কস্টিউম ডিজাইনার একটা বড় বাহবা পেতেই পারেন। শুধু নাজিফা তুষির এক কাপড়ের অমলিন দশা একটা খচখচানি রেখে দেয়। শিল্প নির্দেশনা লেটার মার্কের বেশিই পাবে। তাহলে কিন্তুটা কোথায়? কিন্তুটা গল্পের বুনট নিয়ে। সেই বোবা মেয়েটার মুখে বুলি ফোটাতে হয়েছে শুধু তার প্রতিশোধস্পৃহার কার্যকারণ বর্ণনার জন্যই। অথচ প্রতিশোধের গল্পের বয়ান অনায়াসে অপরাধের কিছু দৃশ্যরূপের মাধ্যমেই হয়তো ফুটিয়ে তোলা যেত, বিশেষত যেহেতু বর্ণনা অনুযায়ী অপরাধের সংঘটনস্থলও সাগরই। ফলে শুধু জলজ পরিবেশে একটি আস্ত সিনেমা নির্মাণের লক্ষ্যের সঙ্গে তা খুব একটা সাংঘর্ষিক হতো না। রয়েছে আরেকটা বড় কিন্তু। অপরাধ তো করেছিল চাঁন ডাকাত, যে এখন চাঁন মাঝি। তাহলে তার সঙ্গীদের এমন করুণ পরিণতির কারণ কী? সেটা কি শুধুই কামুক পুরুষদের প্রতি একজন প্রতীকী নারীর প্রতিশোধ? তেমনটা হলে, তা কিন্তু সিনেমায় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
যাক, এসব কাটাছেঁড়া, এগুলো সিনেমা বোদ্ধারা করাই ভালো। বরং ভালো লাগার গল্পে ফেরা যাক। সিনেমা হলে একটু একটু পরপর সিটি বেজেছে, কখনো কখনো হয়তো না বুঝেই সিটি বাজিয়েছেন কেউ। পাশে বসা দুই ভদ্রলোকের ক্রমাগত বিশ্লেষণ মনোযোগের বারোটা বাজিয়েছে। এই সব একই সঙ্গে বিরক্তি ও ভালো লাগা দুই-ই উৎপাদন করেছে। এই ভালো লাগার ক্ষণটি নির্মাণের কৃতিত্ব হাওয়া-কে দিতেই হবে।
কে নায়ক—হলের ভেতর এমন প্রশ্ন ঘুরে বেড়িয়েছে হর-হামেশাই। পর্দায় চঞ্চল চৌধুরীর উপস্থিতি তাঁকে নায়ক ভাবতে বাধ্য করলেও তাঁর চরিত্র আবার প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে অনেকের মধ্যেই। পাশে বসা বোদ্ধা দুই দর্শক একটু পরপরই এ নিয়ে আলাপে মেতেছেন। বোঝা গেছে, হাওয়া-এর মতো সিনেমা দেখে তাঁরা অভ্যস্ত নন। তাহলে কেন এলেন তাঁরা হলে? নিশ্চিতভাবেই হাওয়ার সজোর প্রচার এর বড় কারণ। হাওয়া সিনেমা এর প্রচার-কৌশলের কারণেও দারুণ নম্বর দাবি করতে পারে, যার অভাবে বাংলা সিনেমা বহু দিন ভুগেছে। সঙ্গে ছিল হলে যেতে চাওয়া, কিন্তু জুতমতো কনটেন্ট খুঁজে না পাওয়া শহুরে মধ্যবিত্তের উদ্গ্রীব অপেক্ষার তাল। বলে রাখা ভালো—শহুরে মধ্যবিত্তের কনটেন্ট না পাওয়ার আক্ষেপ কোনো দিন মিটে গেলে, ব্ল্যাকারদের দেখে শুধু বিরক্তিই যেদিন উৎপাদন হবে, সেদিনই হবে হাওয়ার মতো সিনেমার আসল পরীক্ষা। সে জন্য হাওয়াকে মৌসুমি হলে চলবে না।
সব মিলিয়ে মেজবাউর রহমান সুমন ও তাঁর পুরো দল হাওয়াকে যেভাবে বইয়েছেন, তাতে সাধুবাদ পেতেই পারেন। শুধু খেয়াল রাখতে হবে, এ যেন মৌসুমি হাওয়া না হয়।
প্রতি সপ্তাহেই নতুন সিনেমা বা ওয়েব সিরিজের জন্য দর্শকের নজর থাকে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে। সপ্তাহজুড়ে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে নানা দেশের, নানা ভাষার কনটেন্ট। বাছাই করা এমন কিছু কনটেন্টের খবর থাকছে এই প্রতিবেদনে।
৭ ঘণ্টা আগেবিচ্ছেদের পর একাই পালন করছেন মা-বাবার দায়িত্ব। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার ব্যবসায় নামছেন অভিনেত্রী। মা এবং নবজাতকের দরকারি পণ্যের ব্র্যান্ডশপ দিচ্ছেন পরীমনি।
৮ ঘণ্টা আগেপরদিনই কাকতালীয়ভাবে প্রকাশ্যে আসে বেজিস্ট মোহিনী দের বিবাহবিচ্ছেদের খবর। অনেকে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলানো শুরু করেন। কেউ কেউ তো আগবাড়িয়ে এটাও বলে দিয়েছেন, মোহিনীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার কারণেই নাকি বিচ্ছেদ হয়েছে রাহমান-সায়রার!
৮ ঘণ্টা আগেআগামী ৪ ডিসেম্বর শুরু হবে ৩০তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব। এবারের উৎসবে অংশ নেবে বিভিন্ন দেশের ২০০টির বেশি সিনেমা। তবে রাখা হয়নি না বাংলাদেশের কোনো সিনেমা।
১৩ ঘণ্টা আগে