Ajker Patrika

বলিউডে বর্ণপ্রথা নিয়ে সিনেমা, ব্রাহ্মণদের আপত্তিতে আটকে দিল সেন্সর বোর্ড

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৫: ৪০
ফুলে চলচ্চিত্রের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত
ফুলে চলচ্চিত্রের পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

ভারতে ব্রাহ্মণদের আপত্তির মুখে আটকে দেওয়া হলো সমাজসংস্কারক দম্পতি জ্যোতিরাও ফুলে ও সাবিত্রী বাই ফুলের জীবন নিয়ে নির্মিত বলিউড সিনেমা ‘ফুলে’।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রাথমিকভাবে সিনেমাটিকে ইউ সার্টিফিকেট (সবার জন্য উপযুক্ত) দিয়ে ছাড়পত্র দিয়েছিল ভারতের সেন্সর বোর্ড সেন্ট্রাল বোর্ড অব ফিল্ম সার্টিফিকেশন (সিবিএফসি)।

তবে, মহারাষ্ট্র রাজ্যের কিছু সংগঠনের অভিযোগ—ছবিতে ব্রাহ্মণদের ‘অপমান’ করা হয়েছে। অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ সমাজ এবং পরশুরাম আর্থিক বিকাশ মহামণ্ডলের মতো সংগঠনের মুখে পিছিয়ে দেওয়া হয় সিনেমাটির মুক্তির তারিখ।

হিন্দু ধর্মের শাস্ত্রে উল্লেখিত বর্ণ সম্পর্কিত কিছু সংলাপ ও দৃশ্যে কাটছাঁটের নির্দেশ দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।

হিন্দু সমাজে চার বর্ণের (ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র) মধ্যে ব্রাহ্মণদের মর্যাদা সবার ওপরে। বংশ পরম্পরায় তাঁদের শাস্ত্র জ্ঞানের ধারক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী, ভারতের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মের অনুসারী এবং অধিকাংশই এখনো জাতপাত-ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা অনুসরণ করেন। ফুলে দম্পতি এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বিশেষত দলিতদের শিক্ষার অধিকার ও সামাজিক সমতার পক্ষে লড়েছেন তাঁরা। যাদের হিন্দু বর্ণ প্রথায় ‘অস্পৃশ্য’ (যাদের স্পর্শ অপবিত্র বলে মনে করে উচ্চ বর্ণের মানুষেরা) হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই গল্পই তুলে ধরা হয়েছে চলচ্চিত্রটিতে।

সাবিত্রীবাই ফুলে ভারতের নারী অধিকার আন্দোলনের অগ্রদূত। ১৮৪৮ সালে স্বামী জ্যোতিরাও ফুলের সঙ্গে ভারতে প্রথম কন্যাশিশুদের জন্য স্কুল স্থাপন করেন তিনি।

প্রতীক গান্ধী ও পত্রলেখা অভিনীত ‘ফুলে’ চলচ্চিত্রটি গত ১১ এপ্রিল মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।

পরিচালক মহাদেবন অবশ্য দাবি করেছেন, সিনেমাটি কোনো সম্প্রদায়কে আঘাত করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং ইতিহাসনির্ভর। তিনি বলেন, ‘ট্রেলার দেখার পর কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা শুধু ঐতিহাসিক তথ্যই দেখিয়েছি।’

এ বিষয়ে তিনি ব্রাহ্মণ সংগঠনগুলোর সঙ্গে দেখা করেছিলেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘আমি অখিল ভারতীয় ব্রাহ্মণ সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তাঁদের বলেছিলাম, ব্রাহ্মণরাই জ্যোতিরাও ফুলেকে ২০টি বিদ্যালয় স্থাপনে সাহায্য করেছিলেন। ফুলে যখন সত্যশোধক সমাজ নামে প্রতিষ্ঠান খোলেন, তখন ব্রাহ্মণরাই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, এসব ছবিতে দেখানো হয়েছে। তা শুনে সমাজপতিরা খুশিই হয়েছিলেন। তা ছাড়া আমি নিজে একজন নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ। আমি কেন ব্রাহ্মণদের ছোট করে দেখাব! শুধু যা সত্য তা তুলে ধরা হয়েছে সিমেনাটিতে। এর পেছনে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য নেই।’

কিন্তু সংগঠনগুলোর চাপের মুখে সিবিএফসি সিনেমাটি নতুন করে সম্পাদনার নির্দেশ দিয়েছে। বিশেষ করে ‘দলিত’ শব্দটি বাদ দেওয়া এবং এ সংক্রান্ত কিছু সংলাপ ও দৃশ্য ‘টোন ডাউন’ বা তাদের ভাষায় লঘু করতেও বলতে হয়েছে।

সেন্সর বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন ইতিহাসবিদ ও সমাজকর্মীরা। তাঁদের মতে, জাতপাত সংক্রান্ত তথ্য ও সংলাপ বাদ দেওয়া মানে হলো ইতিহাসকে মুছে ফেলা এবং দলিতদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অস্বীকার করা। সমাজ গবেষক নীরজ বুনকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘সমাজের উঁচু বর্ণের অবিচার আর জাতপাতের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন জ্যোতিরাও–সাবিত্রীবাই ফুলে। আজ আবার সেই একই সামাজিক প্রতিপত্তির কারণে সেন্সর বোর্ডে আটকে গেল তাঁদের সিনেমা। ব্যাপারটা প্রহসন বটে!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত