মীর রাকিব হাসান
ঢাকা: বিশ্ব মা দিবসে মাকে শ্রদ্ধা জানাতে অনেকেই মায়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তেমনই একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ক্যাপশনে লেখেন ‘মা’। মায়ের সঙ্গে সন্তানের এমন স্থিরচিত্রও পড়েছে সাম্প্রদায়িকতার রোষানলে।
নেটিজেনদের কেউ কেউ চঞ্চলের ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। তবে অধিকাংশই এসব বিরূপ মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। ধর্ম নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠতেই অস্বস্তি প্রকাশ করেন ‘আয়নাবাজি’ খ্যাত এই অভিনেতা। প্রতিবাদও করেছেন। জানিয়ে দেন-ধর্ম নয়, মানুষ হিসেবেই তাঁর আসল পরিচয়।
ধিক্কার জানাই। মনে রাখবেন, এই দেশে মীর সাব্বির যেভাবে বড় হয়েছে চঞ্চলও একইভাবে বড় হয়েছেন।
—মীর সাব্বির, অভিনেতা
সাম্প্রতিক সময়ে শুধু চঞ্চল চৌধুরীই নন। অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাও তাঁর মাকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি দিলে এমন খারাপ মন্তব্যের শিকার হন। সিয়াম আহমেদ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়েছেন। সেখানেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটু মন্তব্যের শিকার হতে হয় কমবেশি সবাইকেই। তারকা হলে তো কথাই নেই! একটি সেলফিই হয়ত দিয়েছেন। মুহূর্তেই একদল এসে জানিয়ে দেবে, দেখতে আপনি কুৎসিত! আপনাকে কারও ভালো না লাগতেই পারে। কিন্তু সেটা বলার ভাষা এমন! কেউ আপনার ইহকাল-পরকাল নিয়ে চিন্তিত হয়ে নানা উপদেশ বিলিয়ে যাবে।
স্নেহের চঞ্চল চৌধুরী, কতিপয় আকাট মূর্খের সাম্প্রদায়িক উক্তিতে মন খারাপ করো না। আমরা তোমাকে ভালোবাসি
—নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
কারও মা, কারও স্ত্রী, কারও স্বামী, কারও শরীরের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কারও বর্ণ, কারও ধর্ম, কারও ব্যক্তিগত জীবন, কারও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, কারও অর্জন, কারও প্রত্যাশা, কারও ব্যক্তিগত মতামত-এগুলোর কোনকিছুই রেহাই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঢুঁ মারলে দেখা যায়, সবখানেই আছে এই কটুক্তিকারীরা। তুলনামূলক বিচার করলে বোঝা যায়, অসুস্থ চর্চাটা এই অঞ্চলেই বেশি। তারকা যেহেতু, সবসময় পাল্টা মন্তব্যও করতে পারছেন না তাঁরা। চারপাশের এমন নেতিবাচকতা ভেতরে ভেতরে দুর্বল করে দেয়, আত্মবিশ্বাস গুড়িয়ে দেয়।
এমনও হয়েছে এই কারণে গত বছর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মডেল-অভিনেত্রী কিছুদিন আগেই শরণাপন্ন হয়েছিলেন মনোবিদের। একবার নাকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন! চিকিৎসকের পরামর্শে দূরে আছেন ফেসবুক টুইটার থেকে। বেশির ভাগ মডেল-অভিনেত্রী একবাক্যে বলেন, ‘এসবে পাত্তা দেই না।’ কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়।
চঞ্চল, ভাবনা বা আমাদের সবার এমন অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু আমরা কি কেউ একটুও কথা বলতে পারি না? সাইবারে এই ঘৃণা কি কেবল আমাদের জন্য? আমি লজ্জিত, আমি বিব্রত।
—বন্যা মির্জা, অভিনেত্রী
আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ‘পাত্তা না দেওয়া’র অবস্থানে এসেছেন তাঁরা। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, জয়া আহসান, শবনম বুবলী, মেহজাবীন চৌধুরী, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, নুসরাত ফারিয়া, শবনম ফারিয়া, ভাবনা, জেসিয়া ইসলাম, তানজিন তিশা বা নায়লা নাঈমদের পাবলিক পোস্টের নিচে যেসব মন্তব্য আসে, সেগুলোর বেশিরভাগই উপদেশমূলক, অশালীন ও অপমানজনক।
যারা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন, সেই জনপ্রিয় ব্যক্তিটির মুখোমুখি হলে এরা সরাসরি কিছুই বলতে পারবেন না। উল্টো হয়ত অটোগ্রাফ-সেলফি তুলতে চাইবেন। এসব মন্তব্য কারা করেন? কেন করেন? সাধারণত যে উত্তরটা আসে, ‘অশিক্ষিত মূর্খরা করেন। অপ্রস্তুত একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর হাতে ইন্টারনেট চলে যাওয়ার ফল হচ্ছে এসব।’
ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ, আমি হিন্দু নাকি মুসলিম! তাতে আপনাদের লাভ বা ক্ষতি কি? সকলেরই সবচেয়ে বড় পরিচয় ‘মানুষ’। ধর্ম নিয়ে এসব রুচিহীন প্রশ্ন ও বিব্রতকর আলোচনা সবক্ষেত্রে বন্ধ হোক। আসুন, সবাই মানুষ হই।
—চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা
কথাটা অনেকাংশেই সত্য। কিন্তু পুরোপুরি নয়। অল্প জানাশোনা মানুষদের ওপর দোষ চাপিয়ে আসলে আড়াল করা হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষের মানসিকতাকে। সমস্যাটা আসলে আমাদের সবার মধ্যেই। অন্যের ভালো-মন্দে দখলদারি করতে আমরা কে না ভালোবাসি! কারও কিছু পছন্দ না-ই হতে পারে, সেটা জানানোও যেতে পারে।
কিন্তু কাউকে নিজের মতো হওয়ার পরামর্শ দিতে পারি না আমরা! কটু মন্তব্যকারীদের সবাই ‘অশিক্ষিত’-‘মূর্খ’ নয়, তাঁদের প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যাবে, অনেকেই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন তাঁরা।
সোহানা সাবা, অভিনেত্রী
অনেক তারকাই ফেসবুকে মন্তব্যের ঘর বন্ধ রাখেন। আমারটা খোলা থাকে। কারণ এসব কটুক্তিকে আমি কেয়ার করি না। বাজে মন্তব্যকারীরা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব করে তা নয়। পত্রিকার নিউজের নিচেও অনেকে অনেক ধরণের মন্তব্য করে। ফেসবুকে আমি সাহসী ছবি পোস্ট করি। অনেক ইস্যু নিয়ে বলি। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করে।
আমার মাকেও এরা ছাড়ল না। আমার হাতাকাটা ব্লাউজ নিয়ে তাঁদের কথা, আমার মা কেন টিপ পরল, আমার মা হিন্দু। আমার মা হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক তবে সে মানুষ। আমার মার ওড়না দেখা যাচ্ছে না কেন? এরাই ধর্ষক। মানুষ কারও মাকে নিয়ে এমন নোংরামি করতে পারে?
—আশনা হাবিব ভাবনা, অভিনেত্রী
তবে নেগেটিভ হলেই ডিলিট করি না। উত্তর দেওয়ার দরকার মনে করি না। দুএকজন আছে যাদের উত্তর দেই, ‘আপনি একটা গাধা। আপনার আয়োডিনের অভাব আছে।’ এসব বলে ব্লক করে দেই, কিন্তু তার সেই মন্তব্য ডিলিট করি না। আমার রিঅ্যাকশন অন্যরাও দেখুক।
অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী
অনেক সময়ই দেখি, কেউ একজন খুব বাজে মন্তব্য করল। প্রোফাইলে গিয়ে দেখি সে আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। এতটুকু বাচ্চা ছেলে পড়াশোনা না করে ফেসবুকে এসে এসব করে বেড়ায়! ওর বোন বা মা যদি দেখে তাঁদের আদরের ছেলের কাণ্ড! নিশ্চিত তাঁরা মানতে পারবেন না। এমন বাজেভাবে একজনকে নিয়ে কেউ ভাবতে পারে!
অনেক সময়ই মনে হয় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যদি আইনানুগ ব্যবস্থা নেই, দেখা যাবে ওর ক্যারিয়ারে সেটার প্রভাব পড়বে। ওর মন্তব্যে আমার জীবনে যতটা না প্রভাব পড়েছে তারচেয়ে ওর বেশিই পড়বে। আমি মনে করি, বয়স বাড়লে এরাও শোধরাবে। বুঝবে ওরা একজন মানুষকে কতটা আঘাত করছে।
শবনম ফারিয়া, অভিনেত্রী
খুব খারাপ লাগে, যখন আমার ফ্যামিলি মেম্বাররা এসব মন্তব্য দেখে। ওরা আসলেই আপসেট হয়ে যায়। বিশেষ করে আমার দুই বোন, হাজবেন্ড। এটা দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন’কে আরও অ্যাকটিভ হতে হবে। কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া গেলে অনেকের শিক্ষা হতো।
চঞ্চল চৌধুরীর প্রতি জনৈক ধর্ম-গাধার ঘৃণিত মন্তব্যে একজন মুসলমান ধর্মাবলম্বী হিসেবে আমি লজ্জ্বিত। অপমানিত। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্র আর অসভ্য সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।
—আসিফ আকবর, গায়ক
অনেকেই আমাকে বলে, এসব ইগনোর করে যাও। কথা বললে, ওরা মজা পেয়ে আরও করে। এটা আমি করেছিও। একসময় আমি মন্তব্য মুছে দিতাম। কিন্তু এটা তো সমাধান নয়।
আজ তাঁকে ব্লক করে দিলাম, কালকে সে সাফা কবিরের পেজে গিয়ে বাজে মন্তব্য করবে। সাফা ব্লক করে দিল তো মেহজাবীনের পেজে গিয়ে করবে।
অনলাইনের যত অপরাধ কার্যক্রম হয়, সেগুলো দেখভাল করে ঢাকা মেট্রো পুলিশের ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন’। হ্যাকিংসহ বড় ধরণের অপরাধ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁদের। তবে কটু মন্তব্যকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা খুব একটা শোনা যায় না। রাস্তার ইভটিজার আর অনলাইনে অশালীন কটু মন্তব্যকারী—দুজনের অপরাধ প্রায় একই।
যারা নিয়মিত কটূক্তি করে বেড়ায় তাঁদেরকে সাজা দিলে হয়ত অন্যরাও সতর্ক হবে।
এটা আসলেই আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি, পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও পরিমিত শালীনতা লক্ষণীয়; তা মুষ্টিমেয় কিছু বিচ্যুত মানুষ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
আমাদের প্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও প্রিয় অভিনেত্রী ভাবনাকে নিয়ে যেসব অযাচিত, অনভিপ্রেত ও অশালীন কমেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা হয়েছে; তা সীমা অতিক্রান্ত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই বিষবাষ্পকে এখনই প্রতিকার করতে না পারলে সাইবার রিজিলিয়েন্ট বাংলাদেশ গঠনে আমাদের ধুঁকতে হবে এটা নিশ্চিত।
আশার কথা হচ্ছে, অসংখ্য নেটিজেন এসব বাজে কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা ইঙ্কলুসিভ সমাজের জয়গান গেয়েছেন। সম্মানিত নেটিজেনদের এই প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাই। দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ পুলিশ অবশ্যই এই বিষবাষ্পের মূলোৎপাটন করবে। আমরা খুব শিগগিরই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম
মা দিবস সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
ঢাকা: বিশ্ব মা দিবসে মাকে শ্রদ্ধা জানাতে অনেকেই মায়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। তেমনই একটি ছবি ফেসবুকে শেয়ার করেছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। ক্যাপশনে লেখেন ‘মা’। মায়ের সঙ্গে সন্তানের এমন স্থিরচিত্রও পড়েছে সাম্প্রদায়িকতার রোষানলে।
নেটিজেনদের কেউ কেউ চঞ্চলের ধর্ম নিয়ে প্রশ্ন করেছেন। তবে অধিকাংশই এসব বিরূপ মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন। ধর্ম নিয়ে এমন প্রশ্ন উঠতেই অস্বস্তি প্রকাশ করেন ‘আয়নাবাজি’ খ্যাত এই অভিনেতা। প্রতিবাদও করেছেন। জানিয়ে দেন-ধর্ম নয়, মানুষ হিসেবেই তাঁর আসল পরিচয়।
ধিক্কার জানাই। মনে রাখবেন, এই দেশে মীর সাব্বির যেভাবে বড় হয়েছে চঞ্চলও একইভাবে বড় হয়েছেন।
—মীর সাব্বির, অভিনেতা
সাম্প্রতিক সময়ে শুধু চঞ্চল চৌধুরীই নন। অভিনেত্রী আশনা হাবিব ভাবনাও তাঁর মাকে নিয়ে ফেসবুকে ছবি দিলে এমন খারাপ মন্তব্যের শিকার হন। সিয়াম আহমেদ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়েছেন। সেখানেও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কটু মন্তব্যের শিকার হতে হয় কমবেশি সবাইকেই। তারকা হলে তো কথাই নেই! একটি সেলফিই হয়ত দিয়েছেন। মুহূর্তেই একদল এসে জানিয়ে দেবে, দেখতে আপনি কুৎসিত! আপনাকে কারও ভালো না লাগতেই পারে। কিন্তু সেটা বলার ভাষা এমন! কেউ আপনার ইহকাল-পরকাল নিয়ে চিন্তিত হয়ে নানা উপদেশ বিলিয়ে যাবে।
স্নেহের চঞ্চল চৌধুরী, কতিপয় আকাট মূর্খের সাম্প্রদায়িক উক্তিতে মন খারাপ করো না। আমরা তোমাকে ভালোবাসি
—নাসির উদ্দীন ইউসুফ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
কারও মা, কারও স্ত্রী, কারও স্বামী, কারও শরীরের কোন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, কারও বর্ণ, কারও ধর্ম, কারও ব্যক্তিগত জীবন, কারও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ, কারও অর্জন, কারও প্রত্যাশা, কারও ব্যক্তিগত মতামত-এগুলোর কোনকিছুই রেহাই পাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে ঢুঁ মারলে দেখা যায়, সবখানেই আছে এই কটুক্তিকারীরা। তুলনামূলক বিচার করলে বোঝা যায়, অসুস্থ চর্চাটা এই অঞ্চলেই বেশি। তারকা যেহেতু, সবসময় পাল্টা মন্তব্যও করতে পারছেন না তাঁরা। চারপাশের এমন নেতিবাচকতা ভেতরে ভেতরে দুর্বল করে দেয়, আত্মবিশ্বাস গুড়িয়ে দেয়।
এমনও হয়েছে এই কারণে গত বছর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মডেল-অভিনেত্রী কিছুদিন আগেই শরণাপন্ন হয়েছিলেন মনোবিদের। একবার নাকি আত্মহত্যার কথাও ভেবেছিলেন! চিকিৎসকের পরামর্শে দূরে আছেন ফেসবুক টুইটার থেকে। বেশির ভাগ মডেল-অভিনেত্রী একবাক্যে বলেন, ‘এসবে পাত্তা দেই না।’ কথাটা পুরোপুরি ঠিক নয়।
চঞ্চল, ভাবনা বা আমাদের সবার এমন অভিজ্ঞতা হয়। কিন্তু আমরা কি কেউ একটুও কথা বলতে পারি না? সাইবারে এই ঘৃণা কি কেবল আমাদের জন্য? আমি লজ্জিত, আমি বিব্রত।
—বন্যা মির্জা, অভিনেত্রী
আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই ‘পাত্তা না দেওয়া’র অবস্থানে এসেছেন তাঁরা। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, জয়া আহসান, শবনম বুবলী, মেহজাবীন চৌধুরী, জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, নুসরাত ফারিয়া, শবনম ফারিয়া, ভাবনা, জেসিয়া ইসলাম, তানজিন তিশা বা নায়লা নাঈমদের পাবলিক পোস্টের নিচে যেসব মন্তব্য আসে, সেগুলোর বেশিরভাগই উপদেশমূলক, অশালীন ও অপমানজনক।
যারা জনপ্রিয় ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনে অশালীন ভাষায় আক্রমণ করেন, সেই জনপ্রিয় ব্যক্তিটির মুখোমুখি হলে এরা সরাসরি কিছুই বলতে পারবেন না। উল্টো হয়ত অটোগ্রাফ-সেলফি তুলতে চাইবেন। এসব মন্তব্য কারা করেন? কেন করেন? সাধারণত যে উত্তরটা আসে, ‘অশিক্ষিত মূর্খরা করেন। অপ্রস্তুত একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর হাতে ইন্টারনেট চলে যাওয়ার ফল হচ্ছে এসব।’
ভ্রাতা ও ভগ্নিগণ, আমি হিন্দু নাকি মুসলিম! তাতে আপনাদের লাভ বা ক্ষতি কি? সকলেরই সবচেয়ে বড় পরিচয় ‘মানুষ’। ধর্ম নিয়ে এসব রুচিহীন প্রশ্ন ও বিব্রতকর আলোচনা সবক্ষেত্রে বন্ধ হোক। আসুন, সবাই মানুষ হই।
—চঞ্চল চৌধুরী, অভিনেতা
কথাটা অনেকাংশেই সত্য। কিন্তু পুরোপুরি নয়। অল্প জানাশোনা মানুষদের ওপর দোষ চাপিয়ে আসলে আড়াল করা হচ্ছে সব শ্রেণির মানুষের মানসিকতাকে। সমস্যাটা আসলে আমাদের সবার মধ্যেই। অন্যের ভালো-মন্দে দখলদারি করতে আমরা কে না ভালোবাসি! কারও কিছু পছন্দ না-ই হতে পারে, সেটা জানানোও যেতে পারে।
কিন্তু কাউকে নিজের মতো হওয়ার পরামর্শ দিতে পারি না আমরা! কটু মন্তব্যকারীদের সবাই ‘অশিক্ষিত’-‘মূর্খ’ নয়, তাঁদের প্রোফাইল ঘাঁটলে দেখা যাবে, অনেকেই সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে আছেন তাঁরা।
সোহানা সাবা, অভিনেত্রী
অনেক তারকাই ফেসবুকে মন্তব্যের ঘর বন্ধ রাখেন। আমারটা খোলা থাকে। কারণ এসব কটুক্তিকে আমি কেয়ার করি না। বাজে মন্তব্যকারীরা শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব করে তা নয়। পত্রিকার নিউজের নিচেও অনেকে অনেক ধরণের মন্তব্য করে। ফেসবুকে আমি সাহসী ছবি পোস্ট করি। অনেক ইস্যু নিয়ে বলি। সেখানে অনেকেই মন্তব্য করে।
আমার মাকেও এরা ছাড়ল না। আমার হাতাকাটা ব্লাউজ নিয়ে তাঁদের কথা, আমার মা কেন টিপ পরল, আমার মা হিন্দু। আমার মা হিন্দু হোক আর মুসলিম হোক তবে সে মানুষ। আমার মার ওড়না দেখা যাচ্ছে না কেন? এরাই ধর্ষক। মানুষ কারও মাকে নিয়ে এমন নোংরামি করতে পারে?
—আশনা হাবিব ভাবনা, অভিনেত্রী
তবে নেগেটিভ হলেই ডিলিট করি না। উত্তর দেওয়ার দরকার মনে করি না। দুএকজন আছে যাদের উত্তর দেই, ‘আপনি একটা গাধা। আপনার আয়োডিনের অভাব আছে।’ এসব বলে ব্লক করে দেই, কিন্তু তার সেই মন্তব্য ডিলিট করি না। আমার রিঅ্যাকশন অন্যরাও দেখুক।
অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী
অনেক সময়ই দেখি, কেউ একজন খুব বাজে মন্তব্য করল। প্রোফাইলে গিয়ে দেখি সে আমার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট। এতটুকু বাচ্চা ছেলে পড়াশোনা না করে ফেসবুকে এসে এসব করে বেড়ায়! ওর বোন বা মা যদি দেখে তাঁদের আদরের ছেলের কাণ্ড! নিশ্চিত তাঁরা মানতে পারবেন না। এমন বাজেভাবে একজনকে নিয়ে কেউ ভাবতে পারে!
অনেক সময়ই মনে হয় এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যদি আইনানুগ ব্যবস্থা নেই, দেখা যাবে ওর ক্যারিয়ারে সেটার প্রভাব পড়বে। ওর মন্তব্যে আমার জীবনে যতটা না প্রভাব পড়েছে তারচেয়ে ওর বেশিই পড়বে। আমি মনে করি, বয়স বাড়লে এরাও শোধরাবে। বুঝবে ওরা একজন মানুষকে কতটা আঘাত করছে।
শবনম ফারিয়া, অভিনেত্রী
খুব খারাপ লাগে, যখন আমার ফ্যামিলি মেম্বাররা এসব মন্তব্য দেখে। ওরা আসলেই আপসেট হয়ে যায়। বিশেষ করে আমার দুই বোন, হাজবেন্ড। এটা দিনকে দিন বেড়েই যাচ্ছে। ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন’কে আরও অ্যাকটিভ হতে হবে। কয়েকজনকে শাস্তি দেওয়া গেলে অনেকের শিক্ষা হতো।
চঞ্চল চৌধুরীর প্রতি জনৈক ধর্ম-গাধার ঘৃণিত মন্তব্যে একজন মুসলমান ধর্মাবলম্বী হিসেবে আমি লজ্জ্বিত। অপমানিত। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উগ্র আর অসভ্য সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। এদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে।
—আসিফ আকবর, গায়ক
অনেকেই আমাকে বলে, এসব ইগনোর করে যাও। কথা বললে, ওরা মজা পেয়ে আরও করে। এটা আমি করেছিও। একসময় আমি মন্তব্য মুছে দিতাম। কিন্তু এটা তো সমাধান নয়।
আজ তাঁকে ব্লক করে দিলাম, কালকে সে সাফা কবিরের পেজে গিয়ে বাজে মন্তব্য করবে। সাফা ব্লক করে দিল তো মেহজাবীনের পেজে গিয়ে করবে।
অনলাইনের যত অপরাধ কার্যক্রম হয়, সেগুলো দেখভাল করে ঢাকা মেট্রো পুলিশের ‘সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম ডিভিশন’। হ্যাকিংসহ বড় ধরণের অপরাধ নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয় তাঁদের। তবে কটু মন্তব্যকারীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা খুব একটা শোনা যায় না। রাস্তার ইভটিজার আর অনলাইনে অশালীন কটু মন্তব্যকারী—দুজনের অপরাধ প্রায় একই।
যারা নিয়মিত কটূক্তি করে বেড়ায় তাঁদেরকে সাজা দিলে হয়ত অন্যরাও সতর্ক হবে।
এটা আসলেই আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। আবহমানকাল ধরে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে যে ধর্মীয় সম্প্রীতি, পারস্পারিক সৌহার্দ্য ও পরিমিত শালীনতা লক্ষণীয়; তা মুষ্টিমেয় কিছু বিচ্যুত মানুষ নষ্ট করার চেষ্টা করছে।
আমাদের প্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী ও প্রিয় অভিনেত্রী ভাবনাকে নিয়ে যেসব অযাচিত, অনভিপ্রেত ও অশালীন কমেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে করা হয়েছে; তা সীমা অতিক্রান্ত করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই বিষবাষ্পকে এখনই প্রতিকার করতে না পারলে সাইবার রিজিলিয়েন্ট বাংলাদেশ গঠনে আমাদের ধুঁকতে হবে এটা নিশ্চিত।
আশার কথা হচ্ছে, অসংখ্য নেটিজেন এসব বাজে কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা ইঙ্কলুসিভ সমাজের জয়গান গেয়েছেন। সম্মানিত নেটিজেনদের এই প্রচেষ্টাকে সম্মান জানাই। দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলতে চাই, প্রচলিত আইনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ পুলিশ অবশ্যই এই বিষবাষ্পের মূলোৎপাটন করবে। আমরা খুব শিগগিরই এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।
নাজমুল ইসলাম, অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার, সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম
মা দিবস সম্পর্কিত আরও পড়ুন:
শুধু কিং খানই নন, তাঁর নিশানায় ছিলেন বাদশাপুত্র আরিয়ান খানও। শাহরুখের নিরাপত্তাবলয়ের বিষয়েও খুঁটিনাটি তথ্য ইন্টারনেট ঘেঁটে জোগাড় করেছিলেন ফয়জান। এমনকি শাহরুখ এবং আরিয়ান নিত্যদিন কোথায়, কখন যেতেন, কী করতেন সমস্ত গতিবিধির ওপর নজর ছিল ধৃতর। পুলিশি সূত্রে খবর, রীতিমতো আটঘাট বেঁধে শাহরুখ খানকে খুনের হুম
২ ঘণ্টা আগেগত বছরের শেষ দিকে ‘নীলচক্র’ সিনেমার খবর দিয়েছিলেন আরিফিন শুভ। এতে শুভর বিপরীতে অভিনয় করেছেন মন্দিরা চক্রবর্তী। শুটিং শেষে মুক্তির জন্য প্রস্তুত সিনেমাটি। ট্রেন্ডি ও সমসাময়িক গল্পে নীলচক্র বানিয়েছেন মিঠু খান।
৪ ঘণ্টা আগেগত মার্চে প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর উদ্যাপন উপলক্ষে দুই মাসের সফরে যুক্তরাষ্ট্রে যায় ব্যান্ড সোলস। সেই সফরে ছিলেন না ভোকাল নাসিম আলী খান। সেই সময় গুঞ্জন উঠেছিল, সোলসের সঙ্গে ৪৫ বছরের সম্পর্কের ইতি টানছেন কণ্ঠশিল্পী নাসিম।
৪ ঘণ্টা আগেদীর্ঘ ১৫ বছর বিটিভির কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করছেন সংগীতশিল্পী আগুন। অনুষ্ঠানের নাম ‘আগুন ঝরা সন্ধ্যা’। এরই মধ্যে দুটি পর্বের শুটিং সম্পন্ন হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগে