Ajker Patrika

ঢাকার বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি দৈনিক প্রায় দুটি সিগারেট পানের সমতুল্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১৯: ৩৬
ঢাকার বায়ুদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি দৈনিক প্রায় দুটি সিগারেট পানের সমতুল্য

রাজধানী ঢাকা শহরে বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিপুল যানবাহন চলাচল এলাকায় বায়ুদূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। ঢাকার বায়ুতে সূক্ষ্ম বস্তুকণার যে ঘনত্ব এবং এর কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকির মাত্রা দৈনিক প্রায় দুইটি সিগারেট পানের সমতুল্য। এমনকি সবচেয়ে বিশুদ্ধ বায়ুর বিভাগ সিলেটেও সূক্ষ্ম বস্তুকণার ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি। 

বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর বায়ুমান নিয়ে আজ রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের নতুন প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। 

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান্ডান চেনের সভাপতিত্ব এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। 

উচ্চ স্তরের বায়ু দূষণের কারণে উল্লেখযোগ্যভাবে শ্বাসকষ্ট, কাশি, নিম্ন শ্বাসনালির সংক্রমণ, সেই সঙ্গে বিষণ্নতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, বয়স্ক এবং ডায়াবেটিস, হৃদ্‌যন্ত্র বা শ্বাসকষ্টের মতো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। 

ঢাকা ও সিলেটের মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব মূল্যায়ন করে ‘ব্রিদিং হেভি: নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পলিউশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। 

স্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের প্রভাব কমানোর জন্য প্রতিবেদনে জনস্বাস্থ্য পরিষেবা এবং সাড়াদান প্রক্রিয়া উন্নত করা, বায়ু দূষণের ডেটা মনিটরিং সিস্টেমের উন্নতি, প্রারম্ভিক সতর্কতা ব্যবস্থায় বিনিয়োগ এবং আরও গবেষণায় দ্রুত পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা শহরের বড় বড় ভবন নির্মাণ এবং নিয়মিত যানজটের এলাকাগুলোতে বায়ু দূষণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এই এলাকাগুলোতে সূক্ষ্ম কণা (পিএম ২.৫), যা স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে মনে করা হয়, এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বায়ু মান নির্দেশিকা (একিউজি) থেকে গড়ে ১৫০ শতাংশ বেশি। এটি প্রতিদিন প্রায় ১ দশমিক ৭টি সিগারেট পানের সমতুল্য। 

পিএম ২.৫ মাত্রার কণা বস্তুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে বৃহত্তর ঢাকার ইটভাটার কাছাকাছি এলাকাগুলোতে। এটি ডব্লিউএইচওর একিউজির ১৩৬ শতাংশ বেশি, যা প্রতিদিন ১ দশমিক ৬টি সিগারেট পানের সমান। 

ইটভাটাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় নির্মাণ এবং যানজটের কাছাকাছি বসবাসকারী শিশুদের মধ্যে নিম্ন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। সিলেট বিভাগ, যেখানে দেশের সবচেয়ে বিশুদ্ধ বায়ু রয়েছে, সেখানে এখনো কণা বস্তুর ঘনত্বের মাত্রা ডব্লিউএইচওর নির্দেশিত মাত্রার ৮০ শতাংশ বেশি। এটি প্রতিদিন ১ দশমিক ২টি সিগারেট পানের সমান। 

বায়ু দূষণ শিশু থেকে বয়স্ক সবাইকেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মৃত্যু এবং অক্ষমতার দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ ছিল বায়ু দূষণ। এর ক্ষতি দেশের জিডিপির ৩ দশমিক ৯ থেকে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যান্ডান চেন এ তথ্য জানান। 

বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে ২০১৯ সালে ৭৮ হাজার ১৪৫ থেকে ৮৮ হাজার ২২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যদিও দেশের অভ্যন্তরে বায়ু দূষণের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়। তবে এরপরও সব অঞ্চলে কণা বস্তুর ঘনত্ব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বায়ু মান নির্দেশিকার সুপারিশকৃত মানের বেশ ওপরে। 

সবচেয়ে দূষিত বিভাগ ঢাকা এবং সবচেয়ে কম দূষিত সিলেট। ২০১৮ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত, ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে স্থান পেয়েছে। 

আবার পশ্চিমাঞ্চল (খুলনা ও রাজশাহী) পূর্বাঞ্চলের (সিলেট ও চট্টগ্রাম) চেয়ে বেশি দূষিত। ঢাকা বিভাগে স্থানীয় দূষণ উৎস ছাড়াও কণা বস্তুর ঘনত্বের এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত আসে আন্তসীমান্ত উৎস থেকে। 

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা কারণে আমাদের পালমোনারি ডিজিজ সামলানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে করোনা। এটাও কিন্তু ফুসফুসে প্রভাব ফেলে। এর চিকিৎসা প্রাথমিক পর্যায়ে করতে হয়, হাসপাতালে যেতে হয়। ফলে ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তারা তাঁদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনো কোনো জায়গায় খুবই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েন। অনেক জায়গায় অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত থাকেন। তাঁদের ক্ষেত্রে কিছু করা যায় না।’ 

প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে জ্বালানি ব্যবহার করি সেটি থেকে দূষণ পাওয়া যাচ্ছে, সেটি আমরা সরকারকে জানিয়েছি। বাংলাদেশে আমাদের যে রিফাইনিং সক্ষমতা আছে এটার মাধ্যমে তেল পরিশোধন করতে পারি। আমাদের যদি যদি দূষণের মাত্রা কমাতে হয়, তাহলে ওই মানের তেল আমদানি করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার নেবে বলে জানিয়েছে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত