Ajker Patrika

সাইপ্রাসে রান্নার পোড়া তেল স্কুলে এনে টাকা পাচ্ছে শিশুরা, তৈরি হচ্ছে জৈব জ্বালানি

আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩: ৫৫
রান্নার পোড়া তেল। ছবি: সাইপ্রাস মেইল
রান্নার পোড়া তেল। ছবি: সাইপ্রাস মেইল

রান্নার পোড়া তেল থেকে জৈব জ্বালানি বা বায়োফুয়েল তৈরির এক অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সাইপ্রাসের কয়েকজন বিজ্ঞানী। তাঁরা এই কাজে শিশুদের সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিকভাবেও বেশ প্রশংসিত হয়েছেন। সাইপ্রাসের একটি এনজিও ক্যারাভান নিয়ে স্কুলে স্কুলে ঘুরে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখায় ও শেখায়। এই এনজিও প্রথমে শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে রান্নার পোড়া তেল সংগ্রহে উৎসাহিত করে। পরবর্তীকালে সংগ্রহ করা পরিত্যক্ত তেল পরিশোধন করে বায়োডিজেল তৈরি করে বিক্রি করা হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ‘তিগানোকিনিসি’ বা ফ্রাইং প্যান নামে পরিচিত এই প্রকল্পের আওতায় সাইপ্রাসের একটি এনজিও শিক্ষার্থীদের সহায়তায় এই কাজ করছে; যা ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর কয়েক মিলিয়ন লিটার রান্নার পোড়া তেল ফেলে দেওয়া হয়। এসব তেল পরে পানিতে মিশে ড্রেন বন্ধ করে দেয়, ভূমিতে জমে অনাকাঙ্ক্ষিত অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ায় ও ভূগর্ভস্থ পানি দূষিত করে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পরিত্যক্ত বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়া এসব পোড়া তেল সংগ্রহ করে বায়োডিজেল তৈরির এই প্রকল্প সাইপ্রাসের পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

দেশটির পরিবেশবিষয়ক এনজিও ‘এক্টি প্রজেক্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ এই প্রকল্প সমন্বয়ের কাজ করছে। এই এনজিওর চেয়ারম্যান জেনিয়া লোয়িজিদু বলেন, ‘প্রত্যেকের বাড়ি থেকে অল্প পরিমাণ রান্নার পোড়া তেল সংগ্রহ করা কঠিন কাজ। তাই আমরা স্কুলগুলোকে সংগ্রহকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করছি।’

পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রকল্পে অংশগ্রহণকারী স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের সংগ্রহ করা পোড়া তেলের পরিমাণ অনুযায়ী টাকাও পেয়ে থাকে। এই অর্থ পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ব্যয় করা হয়, যেখানে শিক্ষার্থীদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

এই প্রকল্প থেকে এখন পর্যন্ত ৫৫ লাখ ইউরো (প্রায় ৭০ কোটি টাকা) সংগ্রহ করা হয়েছে, যা দেশটির স্কুলগুলোতে সৌর প্যানেল স্থাপন, পানির কৃত্রিম ঝরনা নির্মাণ ও সুগন্ধি উদ্ভিদের বাগান তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে।

২০১৮ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় এই প্রকল্প সাইপ্রাসের জাতীয় পাঠ্যক্রমের অংশ হয়। প্রতিবছর ৮০ হাজার শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। এটি ইউরোপীয় কমিশন ও গ্লোবাল এডুকেশন নেটওয়ার্ক ইউরোপের (জিইএনই) শ্রেষ্ঠ সামাজিক উদ্ভাবনী প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।

২০২১ সালে মার্কিন জ্বালানি কোম্পানি শেভরন এই প্রকল্পকে সমর্থন জানিয়ে ভ্রাম্যমাণ ক্যারাভানের সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করে। এসব ক্যারাভান সাইপ্রাসের ৫০০টির বেশি স্কুলে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

শেভরনের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক ক্রিস্টিয়ান স্বেন্ডসেন বলেন, ‘আমরা এমন উদ্যোগের অংশ হতে চাই, যা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।’

‘এক্টি প্রজেক্ট অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টার’ এনজিওর চেয়ারম্যান জেনিয়া লোয়িজিদু জানান, সাইপ্রাসে প্রতিবছর আনুমানিক দুই হাজার টন রান্নার তেল ব্যবহৃত হয়। যার মাত্র ১০ শতাংশের পুনর্ব্যবহার হয়। তাই এই প্রকল্প আরও সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে।

জেনিয়া লোয়িজিদু বলেন, ‘আমরা শিশুদের শেখাতে চাই—বর্জ্য আসলে বর্জ্য নয়, এর মূল্য রয়েছে এবং এটাই চক্রাকার অর্থনীতির মূল ধারণা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত