Ajker Patrika

বৃক্ষহীন দ্বীপে গুপ্ত প্রাচীন অরণ্যের খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা

বৃক্ষহীন দ্বীপে গুপ্ত প্রাচীন অরণ্যের খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা

দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ এখানকার ঝোড়ো হাওয়ার জন্য বিখ্যাত। দ্বীপটিতে হাজারো বছর ধরে কোনো বৃক্ষ জন্মায় না। কেবল গুল্ম ও নিচু গাছপালার দেখা মেলে এখানে। আর তাই এখানে মাটির প্রায় ২০ ফুট নিচে সম্প্রতি বৃক্ষের উপস্থিতি আবিষ্কার চমকে দিয়েছে বিজ্ঞানীদের।

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনের ফিজিক্যাল জিওগ্রাফির প্রভাষক ড. জোয়ি থমাস ২০২০ সালে ফিল্ডওয়র্ক করছিলেন দ্বীপটিতে।  এ সময় তাঁর এক বন্ধু খবর দেন, রাজধানী স্ট্যানলির কাছে একটি নির্মাণ এলাকায় কয়লার স্তর থেকে গাছের গুঁড়ি উদ্ধার হয়েছে।

‘আমরা অবাক হয়ে গেলাম। কারণ সবাই জানি ফকল্যান্ডে কোনো বৃক্ষ জন্মে না,’ ফকল্যান্ডের নতুন গবেষণার মূল গবেষক থমাস বলেন, ‘এখানে প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হয় এবং জায়গাটি ঊষর।’

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, ব্রিটিশ শাসিত ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের অধিকার নিয়ে ১৯৮২ সালে গ্রেট ব্রিটেন ও আর্জেন্টিনার মধ্যে সংক্ষিপ্ত এক যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে ব্রিটেন জিতলেও আর্জেন্টিনা এর দাবি ছাড়েনি।

থমাস এবং সহকর্মীরা জায়গাটিতে গিয়ে ‘এই কাঠের বড় খণ্ডগুলি’ তুলতে শুরু করেন। থমাস বলেন, গাছের অবশিষ্টাংশগুলি চমৎকারভাবে সংরক্ষিত ছিল। কিন্তু ফকল্যান্ডের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা থাকায় গবেষকেরা জানতেন যে এ অবশিষ্টাংশ সাম্প্রতিক কালের হতে পারে না।

গাছের জীবাশ্মের উপস্থিতি নির্দেশ করে যে দ্বীপটিতে এক সময় একটি নাতিশীতোষ্ণ রেইনফরেস্টের ছিল। দ্বীপের বর্তমান পরিবেশ থেকে যেটি নাটকীয়ভাবে আলাদা। এ মাসে অ্যান্টার্কটিক সায়েন্স নামে এক সাময়িকীতে থমাস এবং তাঁর সঙ্গীরা এসব তথ্য প্রকাশ করেন বলে জানায় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।

পুরোপুরি সংরক্ষিত এই গাছের টুকরোর বয়স দেড় থেকে তিন কোটি বছর। ছবি: ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনমজার ঘটনা বৃক্ষের এই খণ্ডাংশগুলি এতই পুরোনো যে রেডিও কার্বনের মাধ্যমে এদের বয়স নির্ণয় করা যাচ্ছিল না। রেডিও কার্বনের সাহায্যে ৫০ হাজার বছর পর্যন্ত পুরোনো জৈব পদার্থের বয়স নির্ণয় করা যায়।

আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের দল উত্তর খুঁজতে জায়গাটিতে পাওয়া আনুবীক্ষণীক পরাগ রেণুর সাহায্য নেন।

শিকাগো ফিল্ড মিউজিয়ামের মিশেল ডনোভান বলেন, ‘জীবাশ্মযুক্ত পরাগ ভূতাত্ত্বিক সময়ের একটি নির্দিষ্ট সময়ের নির্দেশক। তাই এর উপস্থিতি একটি জীবাশ্ম সাইটের বয়স নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে।’

শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলসে ইলেকট্রনিক অণুবীক্ষণ যন্ত্রে নামুনাগুলো ফেলে গবেষকরা আবিষ্কার করলেন গাছের ডাল-পালাগুলো দেড় কোটি থেকে তিন কোটি বছরের পুরোনো। এই বিশ্লেষণে বৃক্ষগুলোর প্রজাতিও শনাক্ত করতে পারলেন গবেষকেরা। 

নমুনাগুলো এমন একটি অরণ্যের অংশ ছিল যা এখনকার পাতাগোনিয়ায় যে ধরনের অরণ্য দেখা যায় তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। পাতাগোনিয়া অঞ্চল পড়েছে দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা ও চিলিতে। এখনকার তুলনায় কোটি বছর আগে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের আবহাওয়া আরও উষ্ণ এবং আর্দ্র ছিল বলেই ধারণা দেয় এই আবিষ্কার।

প্রাচীন অরণ্যের খোঁজ পাওয়া জায়গাটিতে কাজ করছেন ড. জোয়ি থমাস এবং তাঁর এক সহকর্মী। ছবি: ইউনিভার্সিটি অব সাউদাম্পটনকিন্তু ফকল্যান্ডে কেন এখন বৃক্ষ জন্মায় না এটি পরিষ্কার নয়। কারণ দক্ষিণ আমেরিকায় একই অক্ষাংশ ঠিকই বৃক্ষশোভিত।

থমাস এবং ডনোভান দুজনেই মনে করেন, দ্বীপপুঞ্জে বয়ে যাওয়া শক্তিশালী বাতাস এবং এখানকার অম্লীয় পিট সমৃদ্ধ মাটি এর কারণ হতে পারে।

এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যগুলি ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ দক্ষিণ গোলার্ধে জলবায়ু পরিবর্তন অধ্যয়নের জন্য কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা তা প্রমাণ করে বলেও মন্তব্য করেন থমাস। তাঁর গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল গত ২০ হাজার বছরে দ্বীপপুঞ্জে পরিবেশগত পরিবর্তনগুলি বোঝা।

দ্বীপপুঞ্জে বয়ে যাওয়া পশ্চিমা বাতাস অ্যান্টার্কটিক বরফ, বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন এবং বৃষ্টিপাতের ধরনকে প্রভাবিত করতে পারে বলে ধারণা তাঁর। দ্বীপপুঞ্জটি ওই বয়ে যাওয়া ঝোড়ো বাতাসের পথে পড়া স্থলভাগের মধ্যে একটি বলে মন্তব্য করেন থমাস। অ্যান্টার্কটিকার কাছে এর অবস্থান এবং অতীতে এই বায়ু কীভাবে শক্তিশালী বা দুর্বল হয়েছিল তা বোঝা ভবিষ্যৎ জলবায়ু পরিবর্তনের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করেন থমাস। একই সঙ্গে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে শিগগিরই বনভূমিতে ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত