সঙ্গিনীর খোঁজে তিন রাজ্যের ৭০০ কিলোমিটার পাড়ি দিল বাঘ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ১৫: ৩৭
Thumbnail image

একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার মধ্যপ্রদেশ থেকে ওডিশা পর্যন্ত ৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে। এই চলার পথে সে অতিক্রম করেছে ভারতের আরেক রাজ্য ছত্তিশগড়। ওডিশার বোনাইতে পৌঁছানোর পথে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি অরণ্য এলাকা অতিক্রম করেছে। মহাসড়ক এবং মানুষের আবাসস্থল এড়িয়ে চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বাঘটির এই বিশাল পথ পাড়ি দেওয়ার কারণ নিজের জন্য একটি এলাকা ও বাঘিনীর খোঁজ করা।

বাঘটির যাত্রা শুরু হয় মধ্যপ্রদেশের সঞ্জয়-দুবরি টাইগার রিজার্ভ থেকে। বোনাইয়ের ঘন বনাঞ্চলে পৌঁছার আগে তাকে পেরোতে হয় খনিজসমৃদ্ধ সুন্দরগড় এলাকা। স্বাভাবিকভাবেই খনি এলাকা, চোরা শিকারি, মানব বসতিসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা জয় করে তবেই বোনাইয়ে পৌঁছায় প্রাণীটি।

এসব তথ্য জানা যায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে।

বোনাইয়ের বিভিন্ন অংশে বাঘশুমারির জন্য বসানো একাধিক ক্যামেরা ট্র্যাপে বন্দী হয়েছে বাঘটি। ভারতের ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথোরিটির (এনটিসিএ) সংগ্রহে থাকা বাঘটির ডোরা মিলিয়ে এর পরিচয় ও ভ্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ওডিশার প্রধান বন সংরক্ষক সুশান্ত নন্দা সমাজিত যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লেখেন, ‘আপনাদের আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, প্রায় দুই দশক পর সুন্দরগড় জেলায় একটি বাঘ ক্যামেরাবন্দী হয়েছে। এনটিসিএর টাইগার সেল নিশ্চিত করেছে, এটি সঞ্জয় দুবরি টাইগার রিজার্ভ থেকে এসেছে। ওডিশায় তার নিজস্ব অঞ্চল তৈরি করতে কয়েক শ মাইল ভ্রমণ করতে হয়েছে একে।’

বন্যপ্রাণীবিষয়ক একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘বাঘ বেশির ভাগ সময় লম্বা দূরত্ব অতিক্রম করে সঙ্গী খুঁজতে। বোনাই একটি খনি এলাকা হওয়ার পরও বাঘটি সেখানে পৌঁছেছে। আগে অরণ্যের এই অংশ আঙ্গুলের সাতকোশিয়া টাইগার ফরেস্ট ডিভিশন ও ময়ূরভঞ্জের সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভের সঙ্গে আলাদা আলাদা করিডরের (পথ) মাধ্যমে যুক্ত ছিল। তবে উন্নয়ন ও খনির কাজের কারণে করিডরের মাঝখানে ছেদ পড়েছে। তবে বাঘেরা এখনো এই পথ ব্যবহার করে।’

বন্যপ্রাণীবিষয়ক অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কখনো কখনো একটি বাঘ নিজের জায়গা ছেড়ে অন্য জায়গায় যায় পর্যাপ্ত শিকার মেলে এমন একটি নিজস্ব অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করতে। একটি পূর্ণবয়স্ক বাঘ তার নিজস্ব এলাকা চিহ্নিত করার চেষ্টা করে, যা সাধারণত ২২ বর্গকিলোমিটার থেকে ৫০ বর্গকিলোমিটার পর্যন্ত হয়। বাঘটির শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করে তার এলাকা কত বড় হবে।

বোনাইয়ের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ললিত কুমার পাত্র টেলিগ্রাফকে বলেন, এই প্রথম বোনাই ডিভিশনের তোডা রিজার্ভ ফরেস্ট বাঘের ছবি ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এটি ১৫ হাজার ৭২২ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত বারুসুয়ান কোইদা রেঞ্জের ভেতরে পড়েছে । আগে এখানে কিছু বাঘ দেখার কথা শোনা গেলেও সেগুলো বৈজ্ঞানিকভাবে বা ছবির মাধ্যমে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।

পশ্চিম ওডিশার সুন্দরগড় তার গাছপালা ও বন্যপ্রাণীর জন্য পরিচিত। ২০২২ সালে, একটি অল্প বয়স্ক বাঘ ছত্তিশগড় থেকে বারগড় জেলার ডিব্রিগড়ে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে চলে আসে। প্রায় এক বছর ধরে সেখানে থাকার পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এটি ছত্তিশগড়ে ফিরে আসে।

‘বাঘ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যায় হয় মিলনের জন্য, নতুবা ভালো শিকার পাওয়ার আশায়। ২০২৩ সালের নভেম্বরে মহারাষ্ট্রের তাডোবা থেকে একটি পুরুষ বাঘ চারটি রাজ্যের মধ্যে ২ হাজার কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করে ওডিশার মহেন্দ্রগিরি রেঞ্জে পৌঁছায়। তারপর এটি ফিরে যায়।’ বলেন একজন বন কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত