অ্যান্টার্কটিকায় বরফের চাদর সরিয়ে ফুটছে ফুল, শঙ্কা বিজ্ঞানীদের 

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১: ২৩
আপডেট : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১: ৩০

বরফের চাদর সরিয়ে উঁকি দিচ্ছে সবুজ পাতা ও ফুলের দল। তবে কি বসন্ত এসে গেল! আনন্দের বদলে কিন্তু আশঙ্কার মেঘই দেখছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ এই ফুল ফুটেছে অ্যান্টার্কটিকায়। এর আগে এই তীব্র শীতল অঞ্চলে এত দ্রুত কখনো কোনো উদ্ভিদের বৃদ্ধি হয়নি। সঙ্গে আবার ফুল ফোঁটা!

বিজ্ঞানবিষয়ক অনলাইন আউটলেট ‘সায়েন্স অ্যালার্ট’ এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

অ্যান্টার্কটিকার বুকে ফুল ফোটা আদতে জলবায়ুর পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দেয়। বরফে ঢাকা এই মহাদেশে ফুল ফোঁটা এক প্রকার অসম্ভব। তাতেই ভয় পাচ্ছেন পরিবেশবিদ এবং আবহাওয়াবিদরা।

এই নাটকীয় পরিবর্তনগুলো গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফল হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২২ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা অ্যান্টার্কটিকায় সবচেয়ে বড় তাপপ্রবাহ রেকর্ড করেছেন।

চলতি বছরের মার্চে দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে তাপমাত্রা টানা তিন দিন ৩৯ সেলসিয়াস ছিল, যা খুবই অস্বাভাবিক। এতে অ্যান্টার্কটিকায় তাপমাত্রা দাঁড়ায় মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।  

এ বিষয়ে বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানী ও ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাপত্রের লেখক এডওয়ার্ড ব্ল্যানচার্ড-রিগলসওয়ার্থ ওয়াশিংটন পোস্টে কাশা প্যাটেলকে বলেন, ‘এটি পৃথিবীর যেকোনো স্থানে রেকর্ড করা উষ্ণতম তাপমাত্রার অসঙ্গতি।’ 

বিজ্ঞানীদের রিপোর্ট বলছে, সিগনি দ্বীপে মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদ জন্মাতে দেখা গেছে। তাতে ফুল ফুটেছে। ১৯৬০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই অঞ্চলে যে হারে এই উদ্ভিদের জন্ম হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তার ১০ গুণ উদ্ভিদ জন্মেছে।

অ্যান্টার্কটিকায় অন্য ধরনের উদ্ভিদের জন্মের হারও বৃদ্ধি হয়েছে। রিপোর্ট বলছে, আগের তুলনায় এখন ওই অঞ্চলে বিভিন্ন উদ্ভিদের বৃদ্ধি বেড়েছে পাঁচ গুণ।

সারা বছর হিমাঙ্কের অনেক নিচে তাপমাত্রা থাকে অ্যান্টার্কটিকায়। সে কারণে মস, লিচেন জাতীয় শৈবালেরই জন্ম হয়। তারাই ওই অঞ্চলের আদি বাসিন্দা। এবার অ্যান্টার্কটিকায় নতুন ধরনের উদ্ভিদের দেখা মিলছে। 

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনের সুযোগ নিয়ে সেখানে নতুন ধরনের উদ্ভিদের জন্ম হচ্ছে। এর ফলে কোপ পড়তে পারে সেখানকার আদি বাসিন্দা মস, লিচেনের বৃদ্ধিতে।

এমনকি মাটির চরিত্রও বদলে যেতে পারে বলে মত গবেষকদের। এই ধরনের উদ্ভিদ পচে মাটির সঙ্গে মিশলে মাটির অম্লত্বের পরিমাণ বদলে যেতে পারে। তাতে নতুন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে। তার প্রভাব পড়তে পারে পরিবেশে, বাস্তুতন্ত্রে।

অ্যান্টার্কটিকার বুকে এই ফুল প্রথম লক্ষ্য করেন অস্ট্রেলিয়ার ওলংগং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা। তারা দেখেন, অ্যান্টার্কটিকায় মূলত দুই ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি হচ্ছে আগের তুলনায় বেশি হারে। প্রথম দিকে নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলে দেখা যেত এই উদ্ভিদ। এখন তার বাইরেও বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে এই উদ্ভিদ।

এই পরিবর্তনের কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়নের পাশাপাশি মানুষকেও দায়ী করেন। তাদের মতে, অ্যান্টার্কটিকায় গবেষকদের সঙ্গে অভিযাত্রীদের আনাগোনাও বেড়েছে। তাদের পায়ে-পায়েই এই উদ্ভিদের বীজ ছড়িয়ে পড়েছে বহু দূর। সে কারণে এর বংশবৃদ্ধি হচ্ছে।

গবেষকদের একটা অংশের মতে, সিল মাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণেও বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটেছে। সিল মাছ শৈবাল-সহ বিভিন্ন উদ্ভিদের ওপর দিয়ে মাড়িয়ে চলত। সে কারণে সেগুলি মরে যেত। এখন সিল মাছের সংখ্যাও কমেছে। যার অন্যতম কারণ খাদ্যাভাব। সে কারণে বেড়েছে উদ্ভিদের সংখ্যা, যাতে বিপদ দেখছেন বিজ্ঞানীরা।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত