এক বাগানে দুই ফলের চাষ

সিয়াম সাহারিয়া, নওগাঁ
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২২, ০৮: ২৬
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১২: ০৮

নওগাঁর পোরশায় একসঙ্গে আম ও পেয়ারার বাগান করে সফলতা পেয়েছেন উদ্যোক্তা রায়হান আলম (৪২)। উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ছাওড় ইউনিয়নের বন্ধুপাড়া গ্রামে ৫০ বিঘা জমিতে তিনি বাগানটি গড়ে তুলেছেন। কয়েক বছরের ব্যবধানে সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠেছেন রায়হান। তাঁর এমন উদ্যোগে সফলতার মুখ দেখায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন স্থানীয় তরুণেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্যোক্তা রায়হান আড়াই বছর আগে ৫০ বিঘা জমিতে গৌড়মতী জাতের সাত হাজার আমগাছ রোপণ করেন। তিন মাস পরে সেই বাগানের ভেতরে ফাঁকা জায়গায় থাই জাতের ৫ হাজার পেয়ারা গাছের চারা রোপণ করেন। পেয়ারার গাছ রোপণের এক বছরের মাথায় ফলন পেতে শুরু করেন তিনি। এখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪০-৫০ মণ পেয়ারা পাচ্ছেন। যদিও আমগাছে এখনো ফলন পাননি। তবে, গত বছর গৌড়মতীর কলম চারা বিক্রি করে ৭ লাখ টাকা আয় করেছেন। বন্ধুপাড়ার ওই বাগান ছাড়াও জেলার সাপাহার ও পত্নীতলার বিভিন্ন এলাকায় বর্তমানে রায়হানের ২০০ বিঘার বিভিন্ন ফলদ বাগান আছে।

রায়হানের বাড়ি সাপাহার উপজেলার দোয়াশ গ্রামে। মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারে জন্ম তাঁর। উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করা অবস্থায় ২০০৪ সালে শখের বশে বাড়ির পাশে নিজেদের জমিতে আম চাষ করে দেড় লাখ টাকা আয় করেন। তখন থেকেই টাকা জমাতে শুরু করেন রায়হান। ২০০৯ সালে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করার পর চাকরির পেছনে না ছুটে ২৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে আরও একটি আমবাগান গড়ে তোলেন। এরপর প্রতিবছর পুঁজি বাড়তে থাকলে রায়হান তাঁর বাগানের পরিমাণও বাড়াতে থাকেন।

সম্প্রতি বন্ধুপাড়া এলাকায় রায়হানের বাগানে গিয়ে দেখা গেছে, বাগানে গৌড়মতী জাতের আমগাছের পাতাগুলো ঝলমল করছে। এসব গাছের সারির ফাঁকে থাই পেয়ারার গাছ। সবুজ পাতার ফাঁকে ছোট-বড় পেয়ারা ঝুলছে। ডালে ডালে ফুল ও মুকুল। গাছে ধরে থাকা প্রতিটি পেয়ারা পলিথিন দিয়ে ব্যাগিং করা। বাগানে আট থেকে দশজন শ্রমিক বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করছেন।

রায়হান আলম বলেন, ২০১৯ সালে বন্ধুপাড়া গ্রামের মাঠে ৫০ বিঘা জমি ১২ বছরের জন্য ইজারা নিয়েছেন তিনি। শুরুতেই লিজ নেওয়া জমিতে প্রথমে প্রায় সাত হাজার আমগাছের চারা রোপণ করেন। কিছুদিন পর সেই বাগান পরিদর্শনে এসে কৃষি কর্মকর্তারা আমগাছের সারির ফাঁকা জায়গায় পেয়ারাগাছ রোপণের পরামর্শ দেন। এরপর চারা সংগ্রহ করে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে পেয়ারার চারা রোপণ করেন। মাত্র ১০ মাসের মাথায় গাছে পেয়ারার ফুল আসে। তাঁর বাগান থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে গত বছরের এপ্রিল পর্যন্ত পেয়ারা বিক্রি করেছেন ১০ লাখ টকার। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৮ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল ওয়াদুত বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ফলের বাগান গড়ে তোলার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। জেলায় আমের পাশাপাশি পেয়ারা ও বরই চাষ বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত