Ajker Patrika

সারা বছর নৌকা তৈরি

মুজিবর রহমান, পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা)
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ৩১
সারা বছর নৌকা তৈরি

এক সময় যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হতো নৌকা। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এই শিল্পকে এখনো কাজে লাগিয়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে অর্ধশতাধিক লোকের।

খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাটকেলঘাটার পেট্রল পাম্প এলাকায় রাস্তার পাশে বিরামহীন চলছে নৌকা তৈরির কাজ। বাপ-দাদা হতে প্রাপ্ত এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে হাতের নিপুণ ছোঁয়ায় শৈল্পিক সৌন্দর্যে তৈরি হয় এসব নৌকা। পাটকেলঘাটার তৈরি হওয়া এসব নৌকার কদর রয়েছে খুলনা বিভাগ জুড়ে।

সাতক্ষীরা জেলার পাটকেলঘাটা এলাকার সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে কয়েকটি নৌকা তৈরির কারখানা। প্রতি বছর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ার অন্যতম উপকরণ নৌকা থাকার কারণে পাটকেলঘাটায় সারা বছর নৌকা তৈরির কাজ করতে হয় কারিগরদের।

এ ছাড়া সাতক্ষীরাসহ খুলনা বিভাগের ঘের ব্যবসায়ীরা ক্রয় করেন এই নৌকা। তবে আধুনিক প্রযুক্তির বিশ্বে নৌকা তৈরির কাজে এখনো লাগেনি আধুনিকতার ছোঁয়া।

পাটকেলঘাটার নৌকার তৈরির কারিগরেরা সাধারণত ডিঙি ও কোষা ২ ধরনের নৌকা তৈরি করে থাকেন। কোষা ৯-১০ ফুট আর ডিঙি নৌকা ১৫-১৬ ফুট দৈর্ঘ্য হয়ে থাকে। কাঠসহ প্রয়োজনীয় মালামাল প্রস্তুত থাকলে দৈনিক ২টি থেকে ৩টি নৌকা তৈরি করা সম্ভব হয়। তবে এখানে সবচেয়ে কোষা নৌকার কদর বেশি রয়েছে বলে জানান বিক্রেতারা। কিন্তু অতীতের থেকে বর্তমানে নদ-নদীর সংখ্যা কম ও নৌ পথে চলাচলের মধ্য সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যবসায় চলছে মন্দা। মুনাফার পরিমাণ কম হলেও ধরে রেখেছে পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত এই শিল্প।

নৌকা তৈরি কারিগর আশাশুনি উপজেলার প্রতাপ নগর এলাকার খানজাহান ও সাকাত সরদার জানান, এলাকা ডুবে যাওয়ায় এক বছরের অধিক সময় এলাকার অনেক লোক পাটকেলঘাটায় নৌকা তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে চলেছে। তাঁরা জানান, ৪ হাজার টাকা চুক্তিতে আমরা একটা নৌকা তৈরি করি। একটা নৌকা তৈরি করতে ২-৩ দিন সময় লাগে। নৌকা তৈরিতে খই, কড়ই ও চম্বল, সুন্দরী গাছের কাঠ, ধাতু দ্রব্য পেরেক, তারকাঁটা, জলুই ব্যবহার হয়ে থাকে। তা ছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেহগনি গাছের কাঠ ব্যবহার করে থাকেন কারিগরেরা।

একটি ১২ হাত লম্বা একটি নৌকা তৈরি করতে তিনজন শ্রমিক এর মজুরি প্রায় ২২-২৫ শ টাকা। কাঠ বাবদ খরচ হয় চার হাজার টাকা, নানা বিধি আনুষঙ্গিক উপকরণ বাদে খরচ হয় তিন হাজার টাকা। ৯-১০ হাজার টাকা খরচ করে একটা নৌকা বিক্রি হয় ১২-১৪ হাজার টাকা।

সুমি ফার্নিচার আ্যান্ড নৌকা ঘরের মালিক মো. নুর ইসলাম জানান, ‘প্রতিদিন সকল খরচ মিটিয়ে সামান্য কিছু টাকা লাভ হয় আমাদের। তারপরেও এই শিল্পকে আমরা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।’

যশোর থেকে নৌকা কিনতে আসা এক ব্যক্তি জানান, তিনি ১২ হাত লম্বা একটি নৌকা ১৩ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন। তাঁর মৎস্য ঘেরে মাছের খাদ্য দেওয়া ও শেওলা পরিষ্কার করার জন্য এই নৌকা ব্যবহার করা হবে। যশোর জেলার অধিকাংশ মানুষ এখান থেকে নৌকা কিনে থাকেন।

পাটকেলঘাটা নৌকা তৈরির কারখানা মালিক মো. আনোয়ার হোসেন জানান, তাঁর বাবা এই নৌ-শিল্পের কাজ শুরু করেন। পৈতৃক সূত্রে প্রাপ্ত এই কারখানাটি তিনি ধরে রেখেছেন। বারো মাস নৌকা তৈরি করা হয়। তাঁর কারখানায় মোট ১২ জন শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন ৪-৫টা করে নৌকা তৈরি করা সম্ভব হয়। তবে নৌকা তৈরির সরঞ্জামের দাম ঊর্ধ্বগতির কারণে লাভ একটু কম হয়।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায়, নৌকার চাহিদা অনেক কম। এখন এই নৌ-শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারি সহায়তার বিকল্প নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারতের ভিসা নীতি দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে: বলছেন কূটনীতিকেরা

বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে ছাত্রদল ও এনসিপি

ফাইনালে ভারতের ‘যম’কে খেলানো নিয়ে দোটানায় নিউজিল্যান্ড

ফেরত পাঠাতে ৫০০ বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র

নিষিদ্ধ হিযবুত তাহ্‌রীরের মিছিল, পুলিশের টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডে ছত্রভঙ্গ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত