Ajker Patrika

পিবিআইয়ের তদন্ত: পুলিশ কর্তারাই তৈরি করেন ভুয়া পরোয়ানা

আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
পিবিআইয়ের তদন্ত: পুলিশ কর্তারাই তৈরি করেন ভুয়া পরোয়ানা

আদালত থেকে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা অনুযায়ী আসামিকে গ্রেপ্তার করার দায়িত্ব পুলিশের। তবে জাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বানিয়ে ফায়দা লোটার একটি চক্রের সঙ্গে পুলিশের জড়িত থাকার সত্যতা মিলেছে। ভুয়া পরোয়ানা বানিয়ে চক্রটি নিরপরাধ এক ব্যক্তিকে দীর্ঘদিন কারাগারে রেখেছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি মহলের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এমনটি ঘটানো হয়েছে। ভুয়া পরোয়ানা তৈরির সঙ্গে দুই পুলিশের সম্পৃক্ততা মিলেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে।

অভিযুক্ত দুই পুলিশ সদস্য হলেন বরিশাল রেঞ্জ পুলিশ কার্যালয়ে কর্মরত পরিদর্শক ডেরিক স্টিফেন কূঁইয়া ও বগুড়া জেলার উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন। দুজনই ২০১৭ সালে গাজীপুরের জয়দেবপুর থানায় কর্মরত ছিলেন। জামাল উদ্দিন তখন এএসআই ছিলেন।

জানা যায়, ২০১৭ সালে ২০ মার্চে জয়দেবপুর থানার একটি মাদক মামলায় সাভারের ফিরিঙ্গীকান্দা গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান ওরফে আবদুল আজিজকে আসামি করেন এএসআই মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন। ওই মামলার পরোয়ানা বলে ২০১৮ সালের ৭ মার্চ সাভার থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এরপর তাঁর নামে কারাগারে আরও সাতটি মামলার পরোয়ানা যায়। এসব মামলায় আজিজ ১০০ দিন বিভিন্ন কারাগারে ছিলেন।

আজিজুর রহমান ২০২২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদন করলে হাইকোর্ট ভুয়া পরোয়ানার বিষয়ে  পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। গাজীপুর জেলা পিবিআই তদন্ত শেষে ভুয়া পরোয়ানা ও মিথ্যা মামলায় আজিজুরকে ফাঁসানোর ঘটনায় দুই পুলিশের সম্পৃক্ততা পায়।

গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের সুপার মোহাম্মদ মাকছেদুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুয়া পরোয়ানার সঙ্গে জড়িত পুরো সিন্ডিকেটকে পাওয়া যায়নি। তবে যাদের যতটুকু পেয়েছি, তাদের বিষয়ে প্রতিবেদনে সেটুকু উল্লেখ করা হয়েছে।’

তদন্তে উঠে এসেছে, জয়দেবপুর থানার মাদক মামলায় আজিজুরকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসামি করেছিলেন তৎকালীন এএসআই মুহাম্মদ জামাল উদ্দিন। তাঁর করা মামলায় আজিজের কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি পিবিআই। পিবিআইয়ের মতে, জয়দেবপুর থানার মাদক মামলাটির পরোয়ানা ছাড়া অন্য কোনো পরোয়ানা কোনো আদালত থেকে ইস্যু করা হয়নি। সব জাল।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাগারগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ায় জাল পরোয়ানার পুরো চক্রকে শনাক্ত করা যায়নি। তবে জয়দেবপুর থানার মাদক মামলাটি ছিল উদ্দেশ্যমূলক। পিবিআইয়ের সার্বিক বিবেচনায় জাল পরোয়ানা বানিয়ে আজিজকে কারাগারে রাখার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে এএসআই জামাল উদ্দিন ও পরিদর্শক ডেরিক স্টিফেন কূঁইয়ার যোগসাজশ আছে।

দুই পুলিশ কর্মকর্তাই অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পরিদর্শক ডেরিক স্টিফেন কূঁইয়া বলেন, ‘আমি আব্দুল আজিজের মাদক মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলাম। তার বিষয়ে সাভার থানায় অনুসন্ধানী স্লিপ পাঠানোর পর তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রতিবেদন আসে। এরপর তাকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দিই।’ তিনি বলেন, ‘মামলা করেছিল তৎকালীন এএসআই জামাল উদ্দিন। তিনি সবকিছু জানতে পারেন।’

বগুড়ায় কর্মরত এসআই জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি ভুয়া পরোয়ানার বিষয়ে জানি না। পিবিআই আমাকে বক্তব্যের জন্য ডেকেছিল, আমি বক্তব্য দিয়ে এসেছি। এরপর কী হয়েছে জানি না।’

তবে পিবিআইয়ের প্রতিবেদন নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আজিজুরের আইনজীবী সৈয়দ ইউনুস আলী রবি। তিনি বলেন, ‘পিবিআইয়ের যে প্রতিবেদন দেখেছি, এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান বলেন, ‘একটি প্রভাবশালী মহল আমার বিরুদ্ধে হয়রানিমূলকভাবে এসব ভুয়া মামলা ও পরোয়ানা তৈরি করেছে। সাভারে এক জমির দালাল এই হয়রানি করেছে বলে আমার ধারণা। এর সঙ্গে সাভাবের দুই পুলিশও জড়িত।’ তিনি বলেন, ‘আমি খুবই আতঙ্কে রয়েছি। তারা যেকোনো সময় আমার ক্ষতি করতে পারে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত