রিকশা চালিয়েই গরিবের বন্ধু মাইকেল ইউপি সদস্য

মো. বেলাল হোসাইন, শরীয়তপুর
প্রকাশ : ১১ মে ২০২৩, ০৮: ৩০

মা-বাবা নাম রেখেছিলেন মাসুম ঢালী। নাম পাল্টে হয়ে যান নিউ মাইকেল ঢালী। গরিব পরিবারের মাইকেল খেয়ানৌকার মাঝি ছিলেন ১০ বছর। এরপর ১৫ বছর ধরে চালাচ্ছেন রিকশা। রিকশা চালাতে চালাতে ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন খেটে খাওয়া গরিবের বন্ধু। তারপর জনপ্রতিনিধি।

৪৬ বছর বয়সী মাইকেল ঢালী শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য। তিনি পেশায় রিকশাচালক।গত ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ইউপি সদস্য নির্বাচিত হন। জনপ্রতিনিধি হয়েও ছাড়েননি পুরোনো পেশা। রিকশা চালিয়েই করছেন জীবিকা নির্বাহ এবং জনগণের সেবা।

নিউ মাইকেলের বাড়ি ওই ওয়ার্ডের পোড়াগাছা গ্রামে। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় এবং ভাইদের মধ্যে বড়। বাবা আব্দুর রব ঢালীও রিকশা চালিয়ে সংসার চালিয়েছেন। বাবার রেখে যাওয়া জমির ৩ শতাংশ ভাগে পেয়েছেন মাইকেল। তার মধ্যেই দোচালা একটি টিনের ঘর তুলে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে সাদামাটা জীবনযাপন করছেন।

ওই এলাকায় গিয়ে কথা হয় মাইকেল ও এলাকাবাসীর সঙ্গে। জানা যায়, সরল স্বভাবের মাইকেল কীভাবে খেয়াঘাটের মাঝি থেকে রিকশাচালক, তারপর গরিব-দুঃখীর কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন।

মাইকেল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি ছিলাম ভাইদের মধ্যে বড়। ২০ বছর আগে বাবা মারা যান, আর মা মারা যান ১০ বছর হলো। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়ে। প্রথমে মানুষের খেতে-খামারে শ্রমিকের কাজ করেছি। ২০ বছর বয়সে চলে যাই ঢাকায়। ১০ বছর বুড়িগঙ্গা নদীতে ডিঙি চালিয়ে মানুষকে খেয়া পার করেছি। এরপর এলাকায় এসে ১৫ বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি।’

মাইকেল জানান, রিকশা চালাতে চালাতে যাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা বলতেন। এলাকার মানুষের আপদে-বিপদে এগিয়ে যেতেন। এভাবে মানুষের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। দরিদ্র প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনের উপকারে সব সময় এগিয়ে যেতেন। একদিন তাঁর এক দরিদ্র আত্মীয়ের জন্য এলাকার এক জনপ্রতিনিধির কাছে সরকারি সাহায্য চেয়ে অপমানিত হয়েছিলেন। সেই অপমানের কষ্ট থেকে মনে জেদ জাগে, তিনিও একদিন জনপ্রতিনিধি হবেন। গরিব-দুঃখীর পাশে দাঁড়াবেন। প্রথমবার পরাজিত হন, তবু হাল ছাড়েননি মাইকেল। দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সফল হন।

মাইকেল বলেন, ‘২০১৬ সালে প্রথম নির্বাচনে দাঁড়িয়ে টাকার কাছে হেরে যাই, কিন্তু হাল ছাড়িনি। এরপর থেকে এলাকার মানুষের আরও বেশি উপকার করতে থাকি। পালের গরু বিক্রি করে এবং দুই লাখ টাকা ঋণ করে করোনা মহামারির সময় মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। পরেরবার নির্বাচনে আমি সফল হয়েছি।’

এলাকার অন্যান্য রিকশাচালক ও সাধারণ মানুষ নির্বাচনের সময় মাইকেলের পাশে ছিলেন। নিজেদের অর্থ ও শ্রম দিয়ে মাইকেলের পক্ষে কাজ করেছেন। এলাকার যুবক হাবিব বলেন, ‘মাইকেল সহজ-সরল প্রকৃতির। তাঁর মধ্যে কোনো লোভ-লালসা নেই। তিনি মানুষের উপকার করে আনন্দ পান। তাঁর মতো একজন মেম্বার পেয়ে আমরা খুশি।’

মোক্তারের চর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাদশা শেখ বলেন, মাইকেল শান্ত স্বভাবের লোক। তিনি কোনো নয়ছয় বোঝেন না। তাঁর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে যাচ্ছেন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত