রাজবাড়ীর পাংশায় নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় ৭টি বাড়ি ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। গত শুক্রবার উপজেলার কসবামাজাইল ও মাছপাড়া ইউনিয়নে পৃথক ঘটনায় এ হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।

সহিংসতায় দুই ইউনিয়নের অন্তত ১৪ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে কসবামাজাইলের ঘটনায় সাতজন এবং বাকি সাতজন মাছপাড়া ইউনিয়নের ঘটনায় আহত হন। আহতদের সবাইকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গত ৫ জানুয়ারি পঞ্চম ধাপে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে বিজয়ী ও পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার কসবামাজাইল ইউনিয়নে নৌকা ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় নৌকার সাতজন সমর্থক আহত হয়েছে। তাঁদের মধ্যে নটাভাঙ্গা গ্রামের মৃত দাউদ মন্ডলের ছেলে মোসলেম উদ্দিন মন্ডলের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অন্যরা পাংশা সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তাঁরা হলেন, ডেমনামাড়া গ্রামের মৃত সামছুদ্দিনের ছেলে মতিকুল, একই গ্রামের রহমান সরদারের ছেলে অহিদুল সরদার, আমজাদ মিয়ার ছেলে মনোয়ার, সামছুদ্দিনের ছেলে মুকুল মন্ডল, নটাভাঙ্গা গ্রামের সিরাজ উদ্দিন খার ছেলে জিকু খান ও কসবামাজাইল গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আওয়াল।

আহতদের সূত্রে জানা গেছে, বিকেল ৪টার দিকে কসবামাজাইল ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রকিবুল ইসলামের কর্মীরা স্থানীয় নতুন বাজার থেকে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা বাজারের তিন থেকে চারটি দোকান ভাঙচুর করে।

এ ঘটনায় অহিদুল সরদার বাদী হয়ে ৪৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। এর মধ্যে দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

অপরদিকে শুক্রবার সকালের দিকে মাছপাড়া ইউপিতে বিজয়ী ইউপি সদস্য মো. মোন্তাজ আলী ও পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থী মোহাম্মাদ আব্দুল কায়েম খানের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি ও বসতঘর ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয় পক্ষের সাতজন আহত হয়েছেন।

পরাজিত ইউপি সদস্য প্রার্থীর আহত কর্মী সুরুজ খান ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং হিরো কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।

এ ছাড়া বিজয়ী ইউপি সদস্যের পাঁচজন কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মাছপাড়া গ্রামের মাজেদ মন্ডলের ছেলে ইমন মন্ডল ফরিদপুর কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। অন্যরা পাংশা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁরা হলেন-পেচুয়াট গ্রামের আবু মন্ডলের স্ত্রী রিক্তা খাতুন, একই গ্রামের হোসেন আলী মণ্ডলের ছেলে আনোয়ার হোসেন, ওহাব মণ্ডল ও মাছপাড়া গ্রামের গফুর প্রামানিকের ছেলে মিলন প্রামানিক।

বিজয়ী প্রার্থীর আহত কর্মী-সমর্থকেরা জানান, সদস্যপ্রার্থী মো. আব্দুল কায়ুম খান নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা তাঁদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় তাঁদের হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে বলে দাবি তাঁদের।

তাঁরা বলেন, হামলাকারীরা আমাদের পাঁচটি টিনশেড ঘর ভাঙচুর করেছে এবং একটি পাকা ঘরের জানালার গ্লাস ভাঙচুর করে।

এ দিকে মাছপাড়ার এ ঘটনায় দশের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনকে আসামি করে পাংশা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিজয়ী ইউপি সদস্য মোন্তাজ আলী।

পাংশা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) উত্তম কুমার ঘোষ বলেন, ‘কসবামাজাইল ইউনিয়নে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতার ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় অহিদুল সরদার বাদী হয়ে ৪৫ জনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা দুজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘একই দিনে মাছপাড়া ইউনিয়নে নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় আবুল কালাম আজাদ বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ২০/২৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।’