Ajker Patrika

৩৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জুন ২০২২, ১৩: ৪২
৩৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা

প্রথম দফার বন্যার ধকল কাটিয়ে না উঠতেই আবারও পানিতে তলিয়েছে সুনামগঞ্জ। উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও টানা বর্ষণ অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। লোকালয়, সড়কসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে বন্যার পানি ঢুকেছে। এমন অবস্থায় দোয়ারাবাজার ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার ৩৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

দোয়ারাবাজার: উপজেলার সব কটি নদ-নদী ও হাওরের পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। সড়ক, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিদ্যালয়ে ঢুকেছে বন্যার পানি। ইতিমধ্যে ৩০ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অনুকূল চন্দ্র দাস জানান, পুনরায় বন্যায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে পানি ঢুকেছে। এই অবস্থায় সব প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের আসবাব ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ এবং সার্বক্ষণিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এ কর্মকর্তা বলেন, উপজেলার বন্যাকবলিত ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ছাতক-দোয়ারাবাজার সড়ক, দোয়ারাবাজার-বাংলাবাজার সড়ক, দোয়ারাবাজার লক্ষ্মীপুর সড়ক, নরসিংপুর-শ্যামারগাঁও, কাঞ্চনপুর-দোহালিয়া সড়কের বিভিন্ন অংশে পানি বাড়তে থাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা।

দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারজানা প্রিয়াংকা জানান, ‘বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকায় বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে। উপজেলার সব কটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফারজানা প্রিয়াংকা বলেন, ‘বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করেছি। নতুন করে আরও ২০ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ করেছি। ত্রাণ কার্যক্রম চলমান থাকবে।’

শান্তিগঞ্জ: মহাসিং, লাউয়া ও নাইন্দা নদীর পানি বেড়ে উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার দূর্বাকান্দা, উলারভিটা, মৌখলাসহ নিম্নাঞ্চলের এলাকাগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া উপজেলার তিনটি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢোকায় বিদ্যালয়গুলো কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করেছে।

জানা গেছে, উপজেলার আটটি ইউনিয়নের শিমুলবাক-তেহকিয়া, কাকিয়ারপাড়-নোয়াগাঁও, পার্বতীপুর-সুলতানপুর, কামরূপদলং-আস্তমা সড়কসহ ছোট-বড় গ্রামীণ রাস্তা অতিবৃষ্টির ফলে তলিয়ে গেছে। এতে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। বেড়েছে হাওর ও নদ-নদীর পানি।

এতে অনেক এলাকার নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে ওই সব এলাকার মানুষদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। পাশাপাশি উপজেলার ধনপুর, উমেদনগর ও বীরকলস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি আসায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

উপজেলার শিমুলবাক ইউনিয়নের ধনপুর সর্দারপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মইনুল হক জানান, বিদ্যালয়টি সুরমা নদীর কাছে অবস্থিত। এর আগে সুরমা নদীর ভাঙনের কবলে পড়েছে বিদ্যালয়টি। দুদিন আগে সুরমা নদীর পানি বাড়ায় বিদ্যালয়ের টয়লেট, ক্লাসরুম হাঁটুপানিতে তলিয়েছে।

মইনুল হক বলেন, অধিকাংশ শিক্ষার্থী সাঁতার জানে না। শিক্ষার্থীরা পানিতে ক্লাস করতে পারবে না। তাই উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়ের আদেশ মোতাবেক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. ফারুক আহমদ বলেন, ‘উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত বন্যার পানিতে হাওর পরিপূর্ণ ছিল। এর মধ্যে গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকেছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আমি উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পানিবন্দী মানুষদের সহায়তার ব্যবস্থা করেছি।’

শান্তিগঞ্জের ইউএনও মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, অতিবৃষ্টির কারণে পানি বাড়ছে। উপজেলার কিছু কিছু এলাকা নিম্নাঞ্চল থাকায় বসতবাড়ি ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকছে। যাদের বাড়িতে পানি ঢুকছে, তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ত্রাণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

ছাতক: বন্যায় প্লাবিত হয়েছে উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে বন্যায় তলিয়ে গেছে সড়ক, ঘরসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পৌরসভাসহ উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। শহরের নিচু এলাকার বাসাবাড়িতে বন্যার পানি ঢুকেছে।

এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার। উপজেলা শহরের সব ক্রাশার মিল বন্ধ রয়েছে। নদীতে কার্গো লোডিং ও আনলোডিং বন্ধ রয়েছে। এতে শত শত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, বুধবার দুপুর পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানিতে ছাতক-সিলেট সড়কের ফায়ার সার্ভিস এলাকা তলিয়ে গেছে। বুধবার সকাল থেকে ছাতকের সঙ্গে সিলেটসহ সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলা সদরের সঙ্গে ইসলামপুর, চরমহল্লা, ভাতগাঁও, সিংচাপইড়সহ সাতটি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

ছাতকের ইউএনও মো. মামুনুর রহমান বলেন, ছাতকে বন্যা হতে পারে এমন পূর্বাভাস জনসাধারণকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত