সাইফুল মাসুম, ঢাকা
বিয়ের অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, সমাবেশ, রোগী আনা-নেওয়াসহ নানা কাজে হেলিকপ্টারের ব্যবহার বেড়েছে। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী যানজট এড়িয়ে কারখানা পরিদর্শন কিংবা জরুরি সভায় যেতে হেলিকপ্টার বেছে নেন। দেশে হেলিকপ্টার ব্যবহারের চাহিদা বাড়লেও সে অনুযায়ী অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
সারা দেশের হেলিকপ্টার ওঠানামা পরিচালিত হয় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। জানা যায়, এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়।এ সংখ্যা বছরে পাঁচ হাজারের বেশি।
স্বাধীনতার আগে দেশে শিডিউল হেলিকপ্টার ফ্লাইট ছিল। প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন রুটে যাত্রীরা ২৬-২৮ সিটের হেলিকপ্টারে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারতেন। দুটি দুর্ঘটনার কারণে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর শিডিউল হেলিকপ্টার ফ্লাইট চালু হয়নি। দেশে ১৯৯৯ সালে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার-সেবা চালু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। এখন যে কেউ চাইলে হেলিকপ্টার ভাড়া নিতে পারেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্যমতে, দেশে ১১টি বেসরকারি কোম্পানির ৩৪টি হেলিকপ্টার আছে। কোম্পানিগুলো হলো বিসিএল এভিয়েশন, ইমপ্রেস এভিয়েশন, আরএনআর এভিয়েশন, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (ইঞ্জিন মেরামতের কারণে বন্ধ), স্কয়ার এয়ার লি., মেঘনা এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারলাইনস, বিআরবি এয়ার, বেক্সিমকো এয়ার, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস লিমিটেড।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, হেলিকপ্টার খাত এখনো ততটা লাভজনক নয়। অধিকাংশ মালিক নিজস্ব কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। বাকি সময়ে ভাড়া দিয়ে ব্যয় সমন্বয় করেন। ব্যবসাসফল না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে টেকনোলজিস লিমিটেড, নিটোল এভিয়েশনসহ কিছু কোম্পানি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেলিকপ্টার ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স-ভ্যাট কমানো নিয়ে কিছু দাবি আছে, এসব যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ দেশে হেলিপোর্ট তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন তো সংকটকাল যাচ্ছে। বিমানবন্দরসংলগ্ন হেলিপোর্ট তৈরির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনও করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা এসেছে। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তবে সারা দেশে হেলিকপ্টারবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘হেলিকপ্টার সার্ভিসের অনেক চ্যালেঞ্জ। ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে মালিকদের দাবি রয়েছে। হেলিকপ্টার পরিচালনা কীভাবে সহজ করা যায়, সেই বিষয়ে চেষ্টা করছি। কমার্শিয়াল কার্যক্রম কীভাবে সহজ করা যায়, এর জন্য আমরা কাজ করছি।’
দুদিন আগে বুকিং দিতে হয়
২০১০ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে স্কয়ার এয়ার। তাদের তিনটি হেলিকপ্টার আছে। কোম্পানিটির সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ কাইয়ুম সরকার বলেন, যাত্রী ভ্রমণ করলে দুই দিন আগে বুকিং দিতে হবে। এর জন্য যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র, বিদেশিদের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফটোকপি লাগে। যাত্রীর তথ্য দিয়ে বেবিচকের কাছে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি নিতে হয়। তবে মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার নোটিশে হেলিকপ্টার সার্ভিস দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
দেশে এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট ও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট—এই দুই ধরনের হেলিকপ্টার আছে। এক ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারে আকাশে ওড়ার সময় ঘণ্টাপ্রতি ৬৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার আর ভূমিতে থাকলে ঘণ্টাপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এতে চারজন পর্যন্ত ভ্রমণ করা যায়। এক ইঞ্জিনে ছয়জন ভ্রমণ করতে চাইলে ভাড়া দিতে হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। দুই ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের ভাড়া ২ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত। এতে সাতজন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা যায়। রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ সম্পূরক কর ছাড় পাওয়া যায়।
পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে যেতে ব্যবসায়ীরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। বিদেশি বায়াররা দুই-এক দিনের জন্য এসে কারখানা পরিদর্শনের জন্য হেলিকপ্টারে চড়েন।
এর বাইরে বিনোদনের জন্য হেলিকপ্টার রাইড আছে বগুড়ার মম ইন রিসোর্ট এবং হবিগঞ্জের দ্য প্যালেস রিসোর্টে। মম ইন রিসোর্টে ১০ মিনিট হেলিকপ্টারে চড়তে জনপ্রতি লাগে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। সপ্তাহে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার চড়া যায়। দ্য প্যালেস রিসোর্টে হেলিকপ্টারে জনপ্রতি খরচ পড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
চড়া শুল্ক-কর, কঠোর নীতি
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার বড়লোকদের বাহন মনে করে হেলিকপ্টারকে শৌখিন পণ্যের তালিকায় রেখেছে। ফলে যাত্রীভাড়ার ৪৫ শতাংশই ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়।
এর মধ্যে ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং সম্পূরক কর ৩০ শতাংশ।
একটি বেসরকারি হেলিকপ্টার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হেলিকপ্টার পরিচালনা খুবই ব্যয়বহুল। এর ওপর বেবিচকের কঠিন সব নিয়মে বিপাকে পড়তে হয়। ইঞ্জিনে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে বিদেশ থেকে সারিয়ে আনতে হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ইঞ্জিন বিদেশে আনা-নেওয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
ইঞ্জিনে ত্রুটির কারণে এক বছর ধরে ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ আছে বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাপ্টেন মো. শফিকুল আলম বলেন, ‘জানুয়ারি ২০২২ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। ইঞ্জিন সিঙ্গাপুরে মেরামত করতে পাঠিয়েছি। আশা করি দুই মাসের মধ্যে ফ্লাইট চালু হবে।’
ব্যক্তি খাতে হেলিপোর্টেও বাধা
দেশের হেলিকপ্টার নীতিমালা ব্যবসাবান্ধব নয় বলে মনে করেন উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার মালিকদের সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব মফিজুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে পলিসি রয়েছে, তা যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি নয়। ব্যক্তি খাতে হেলিপোর্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সরকারের বাধার মুখে সেটা হয়নি। রোগী বিমানবন্দরে নামিয়ে আবার অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিতে হয়। হাসপাতাল অথবা করপোরেট ভবনের ছাদে হেলিপোর্ট তৈরির বিষয় নীতিমালায় যুক্ত হতে পারে। দেশে ট্যুরিজমে হেলিকপ্টার ব্যবহারের নীতিমালা হয়নি।
মফিজুর রহমান জানান, হেলিকপ্টার-সেবা অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখছে। তিনি বলেন, যে আকারে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে, সে আকারে অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ঢাকা বিমানবন্দরের দক্ষিণাংশে হেলিকপ্টার ওঠানামা করত। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজের কারণে এখন উত্তরাংশে অস্থায়ীভাবে হেলিকপ্টার ওঠানামা করে। এটা অপারেশনের জন্য উপযোগী নয়। নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত কমার্শিয়াল হেলিপোর্ট তৈরি করা।
জায়গার সীমাবদ্ধতা থাকলেও সঠিকভাবে হেলিকপ্টার ওঠানামা চলছে বলে দাবি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলামের। তিনি বলেন, হেলিকপ্টারগুলো ঠিকভাবে অপারেশন করছে। টেক-অফ করার জন্য হয়তো মাঝেমধ্যে অপেক্ষা করতে হয়। জায়গার সীমাবদ্ধতা আছে, তবু প্রতিটি কোম্পানি সঠিকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে। প্রতিদিন ১৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। দিন দিন অপারেশন বাড়ছে।
বেবিচক ২০২০ সালে বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলা এলাকায় হেলিপোর্ট তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল। প্রায় ৩০ একর জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাচীরঘেরা জায়গাটির কিছু অংশে মাটি রাখায় উঁচু ঢিবির মতো হয়েছে। পুরোনো একটি ভবন ব্যবহার হচ্ছে বেবিচকের ট্রান্সমিটিং স্টেশন হিসেবে। এর দায়িত্বে থাকা এস এম নোয়াজেশ আহমেদ বলেন, ‘এখানে হেলিপোর্ট হবে শুনেছি। কিছুদিন মাটি ভরাটের কাজ হয়েছিল। এখন কাজ বন্ধ। শুরু হলে অফিস এখান থেকে সরিয়ে নেব।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘হেলিপোর্ট তৈরির প্রকল্প নিয়েছিলাম। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে কাজ থেমে আছে। জাইকার অর্থায়নে করার কথা ছিল, পরে তারা রাজি হয়নি। এখন নিজস্ব অর্থায়নে করব। ব্যয় ৫৫০ কোটি টাকা ধরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে কাজ শুরু হবে।’
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার তাগিদ
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সেভাবে হেলিকপ্টার-সেবা চালু হয়নি। এখন কিছু করপোরেট হেলিকপ্টার সার্ভিস আছে। রোগী আনা-নেওয়াসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বিমানবন্দরে নেমে হেলিকপ্টারে পরবর্তী গন্তব্যে যান।
এই সেবার ভালো চাহিদা আছে। কিন্তু সরকারের যে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার, তা হয়নি। তাঁর মতে, এই সেবার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন।
বিয়ের অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, সমাবেশ, রোগী আনা-নেওয়াসহ নানা কাজে হেলিকপ্টারের ব্যবহার বেড়েছে। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী যানজট এড়িয়ে কারখানা পরিদর্শন কিংবা জরুরি সভায় যেতে হেলিকপ্টার বেছে নেন। দেশে হেলিকপ্টার ব্যবহারের চাহিদা বাড়লেও সে অনুযায়ী অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
সারা দেশের হেলিকপ্টার ওঠানামা পরিচালিত হয় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে। জানা যায়, এখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়।এ সংখ্যা বছরে পাঁচ হাজারের বেশি।
স্বাধীনতার আগে দেশে শিডিউল হেলিকপ্টার ফ্লাইট ছিল। প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন রুটে যাত্রীরা ২৬-২৮ সিটের হেলিকপ্টারে নিয়মিত যাতায়াত করতে পারতেন। দুটি দুর্ঘটনার কারণে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর শিডিউল হেলিকপ্টার ফ্লাইট চালু হয়নি। দেশে ১৯৯৯ সালে প্রথম বেসরকারি উদ্যোগে বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার-সেবা চালু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস। এখন যে কেউ চাইলে হেলিকপ্টার ভাড়া নিতে পারেন।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) তথ্যমতে, দেশে ১১টি বেসরকারি কোম্পানির ৩৪টি হেলিকপ্টার আছে। কোম্পানিগুলো হলো বিসিএল এভিয়েশন, ইমপ্রেস এভিয়েশন, আরএনআর এভিয়েশন, বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (ইঞ্জিন মেরামতের কারণে বন্ধ), স্কয়ার এয়ার লি., মেঘনা এভিয়েশন, বসুন্ধরা এয়ারলাইনস, বিআরবি এয়ার, বেক্সিমকো এয়ার, সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইনস লিমিটেড।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, হেলিকপ্টার খাত এখনো ততটা লাভজনক নয়। অধিকাংশ মালিক নিজস্ব কাজে হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। বাকি সময়ে ভাড়া দিয়ে ব্যয় সমন্বয় করেন। ব্যবসাসফল না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে টেকনোলজিস লিমিটেড, নিটোল এভিয়েশনসহ কিছু কোম্পানি।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হেলিকপ্টার ব্যবসায়ীদের ট্যাক্স-ভ্যাট কমানো নিয়ে কিছু দাবি আছে, এসব যৌক্তিক দাবিগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি।’ দেশে হেলিপোর্ট তৈরির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন তো সংকটকাল যাচ্ছে। বিমানবন্দরসংলগ্ন হেলিপোর্ট তৈরির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপনও করা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা এসেছে। এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তবে সারা দেশে হেলিকপ্টারবান্ধব অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘হেলিকপ্টার সার্ভিসের অনেক চ্যালেঞ্জ। ট্যাক্স কমানোর বিষয়ে মালিকদের দাবি রয়েছে। হেলিকপ্টার পরিচালনা কীভাবে সহজ করা যায়, সেই বিষয়ে চেষ্টা করছি। কমার্শিয়াল কার্যক্রম কীভাবে সহজ করা যায়, এর জন্য আমরা কাজ করছি।’
দুদিন আগে বুকিং দিতে হয়
২০১০ সালে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে স্কয়ার এয়ার। তাদের তিনটি হেলিকপ্টার আছে। কোম্পানিটির সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ কাইয়ুম সরকার বলেন, যাত্রী ভ্রমণ করলে দুই দিন আগে বুকিং দিতে হবে। এর জন্য যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র, বিদেশিদের ক্ষেত্রে পাসপোর্টের ফটোকপি লাগে। যাত্রীর তথ্য দিয়ে বেবিচকের কাছে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি নিতে হয়। তবে মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে এক ঘণ্টার নোটিশে হেলিকপ্টার সার্ভিস দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।
দেশে এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট ও দুই ইঞ্জিনবিশিষ্ট—এই দুই ধরনের হেলিকপ্টার আছে। এক ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারে আকাশে ওড়ার সময় ঘণ্টাপ্রতি ৬৫ হাজার থেকে ৭৫ হাজার আর ভূমিতে থাকলে ঘণ্টাপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। এতে চারজন পর্যন্ত ভ্রমণ করা যায়। এক ইঞ্জিনে ছয়জন ভ্রমণ করতে চাইলে ভাড়া দিতে হয় ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। দুই ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারের ভাড়া ২ লাখ ২০ হাজার থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত। এতে সাতজন পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করা যায়। রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ সম্পূরক কর ছাড় পাওয়া যায়।
পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে যেতে ব্যবসায়ীরা হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। বিদেশি বায়াররা দুই-এক দিনের জন্য এসে কারখানা পরিদর্শনের জন্য হেলিকপ্টারে চড়েন।
এর বাইরে বিনোদনের জন্য হেলিকপ্টার রাইড আছে বগুড়ার মম ইন রিসোর্ট এবং হবিগঞ্জের দ্য প্যালেস রিসোর্টে। মম ইন রিসোর্টে ১০ মিনিট হেলিকপ্টারে চড়তে জনপ্রতি লাগে ৪ হাজার ৪০০ টাকা। সপ্তাহে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার চড়া যায়। দ্য প্যালেস রিসোর্টে হেলিকপ্টারে জনপ্রতি খরচ পড়ে পাঁচ হাজার টাকা।
চড়া শুল্ক-কর, কঠোর নীতি
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার বড়লোকদের বাহন মনে করে হেলিকপ্টারকে শৌখিন পণ্যের তালিকায় রেখেছে। ফলে যাত্রীভাড়ার ৪৫ শতাংশই ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হয়।
এর মধ্যে ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং সম্পূরক কর ৩০ শতাংশ।
একটি বেসরকারি হেলিকপ্টার কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হেলিকপ্টার পরিচালনা খুবই ব্যয়বহুল। এর ওপর বেবিচকের কঠিন সব নিয়মে বিপাকে পড়তে হয়। ইঞ্জিনে কোনো ত্রুটি দেখা দিলে বিদেশ থেকে সারিয়ে আনতে হয়। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ইঞ্জিন বিদেশে আনা-নেওয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়।
ইঞ্জিনে ত্রুটির কারণে এক বছর ধরে ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ আছে বাংলা ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের। প্রতিষ্ঠানটির ক্যাপ্টেন মো. শফিকুল আলম বলেন, ‘জানুয়ারি ২০২২ থেকে ফ্লাইট বন্ধ রয়েছে। ইঞ্জিন সিঙ্গাপুরে মেরামত করতে পাঠিয়েছি। আশা করি দুই মাসের মধ্যে ফ্লাইট চালু হবে।’
ব্যক্তি খাতে হেলিপোর্টেও বাধা
দেশের হেলিকপ্টার নীতিমালা ব্যবসাবান্ধব নয় বলে মনে করেন উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টার মালিকদের সংগঠন এভিয়েশন অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) মহাসচিব মফিজুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, যে পলিসি রয়েছে, তা যথেষ্ট ফ্রেন্ডলি নয়। ব্যক্তি খাতে হেলিপোর্ট তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সরকারের বাধার মুখে সেটা হয়নি। রোগী বিমানবন্দরে নামিয়ে আবার অ্যাম্বুলেন্সে হাসপাতালে নিতে হয়। হাসপাতাল অথবা করপোরেট ভবনের ছাদে হেলিপোর্ট তৈরির বিষয় নীতিমালায় যুক্ত হতে পারে। দেশে ট্যুরিজমে হেলিকপ্টার ব্যবহারের নীতিমালা হয়নি।
মফিজুর রহমান জানান, হেলিকপ্টার-সেবা অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখছে। তিনি বলেন, যে আকারে সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে, সে আকারে অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। ঢাকা বিমানবন্দরের দক্ষিণাংশে হেলিকপ্টার ওঠানামা করত। থার্ড টার্মিনাল নির্মাণকাজের কারণে এখন উত্তরাংশে অস্থায়ীভাবে হেলিকপ্টার ওঠানামা করে। এটা অপারেশনের জন্য উপযোগী নয়। নিরাপত্তাঝুঁকি রয়েছে। সরকারের উচিত দ্রুত কমার্শিয়াল হেলিপোর্ট তৈরি করা।
জায়গার সীমাবদ্ধতা থাকলেও সঠিকভাবে হেলিকপ্টার ওঠানামা চলছে বলে দাবি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মো. কামরুল ইসলামের। তিনি বলেন, হেলিকপ্টারগুলো ঠিকভাবে অপারেশন করছে। টেক-অফ করার জন্য হয়তো মাঝেমধ্যে অপেক্ষা করতে হয়। জায়গার সীমাবদ্ধতা আছে, তবু প্রতিটি কোম্পানি সঠিকভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে। প্রতিদিন ১৫টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। দিন দিন অপারেশন বাড়ছে।
বেবিচক ২০২০ সালে বিমানবন্দরসংলগ্ন কাওলা এলাকায় হেলিপোর্ট তৈরির প্রকল্প নিয়েছিল। প্রায় ৩০ একর জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। সরেজমিনে দেখা যায়, প্রাচীরঘেরা জায়গাটির কিছু অংশে মাটি রাখায় উঁচু ঢিবির মতো হয়েছে। পুরোনো একটি ভবন ব্যবহার হচ্ছে বেবিচকের ট্রান্সমিটিং স্টেশন হিসেবে। এর দায়িত্বে থাকা এস এম নোয়াজেশ আহমেদ বলেন, ‘এখানে হেলিপোর্ট হবে শুনেছি। কিছুদিন মাটি ভরাটের কাজ হয়েছিল। এখন কাজ বন্ধ। শুরু হলে অফিস এখান থেকে সরিয়ে নেব।’
বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, ‘হেলিপোর্ট তৈরির প্রকল্প নিয়েছিলাম। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে কাজ থেমে আছে। জাইকার অর্থায়নে করার কথা ছিল, পরে তারা রাজি হয়নি। এখন নিজস্ব অর্থায়নে করব। ব্যয় ৫৫০ কোটি টাকা ধরে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হলে কাজ শুরু হবে।’
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার তাগিদ
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্বাধীনতার ৫১ বছর পরও সেভাবে হেলিকপ্টার-সেবা চালু হয়নি। এখন কিছু করপোরেট হেলিকপ্টার সার্ভিস আছে। রোগী আনা-নেওয়াসহ জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারী বিমানবন্দরে নেমে হেলিকপ্টারে পরবর্তী গন্তব্যে যান।
এই সেবার ভালো চাহিদা আছে। কিন্তু সরকারের যে পৃষ্ঠপোষকতা দরকার, তা হয়নি। তাঁর মতে, এই সেবার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন।
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৩ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৩ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৩ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৩ দিন আগে