বিসিবির এজিএম কি শুধুই প্রশংসা আর দামি উপহারের

রানা আব্বাস, ঢাকা
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১০: ১০
আপডেট : ৩১ মার্চ ২০২৪, ২১: ৩৪

নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি হওয়ার প্রথম ৮ বছরে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আয়োজন হয়েছিল একবার। গত তিন বছরে চিত্রটা বদলেছে। ২০২১, ২০২২ সালের পর আজ আরেকটি এজিএম আয়োজন করতে যাচ্ছে বিসিবি।

সূত্র জানায়, এজিএমের আলোচ্যসূচিতে প্রথাগত বিষয়গুলোই থাকছে। গত এজিএমের কার্যবিবরণী অনুমোদন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার প্রতিবেদন, ২০২২-২৩ সালের কার্যক্রমের প্রতিবেদন ও অনুমোদন, প্রধান অর্থ কর্মকর্তার প্রতিবেদন ও অনুমোদন, চলতি অর্থবছরের বাজেট পর্যালোচনা ও অনুমোদন। বিসিবির গঠনতন্ত্র (২০২২ সালের সংশোধিত) সংশোধন, পর্যালোচনা ও অনুমোদন ইত্যাদি আজকের এজিএমের আলোচনার বিষয়।

গঠনতন্ত্রের যে জায়গায় সংশোধন আনা হচ্ছে, সেটি হলে বিসিবি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে বলে আশঙ্কা কোনো কোনো কাউন্সিলরের। ক্রীড়া সংস্থা হিসেবে মনোযোগ শুধুই খেলায় থাকা দরকার বলে মনে করেন তাঁরা। তবে বিসিবি মনে করে, সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেলে বিসিবি যেকোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে ঋণ, এলসি খুলতে পারবে। স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রাখতে পারবে। এফডিআরের অর্থ ঝুঁকিবিহীন লাভজনক বিনিয়োগ করতে পারবে। যেকোনো বাণিজ্যিক ও সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। এত দিন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, একটি ক্রীড়া সংস্থা হিসেবে তারা তা করতে পারত না। এখন সংশোধনীর মাধ্যমে বিষয়গুলোর আইনত বৈধতা নিতে চাচ্ছে তারা।

এজিএমকে বলা হয় কাউন্সিলরদের কথা বলার বিরাট মঞ্চ। দেশের ক্রিকেটকে আরও এগিয়ে নিতে বোর্ডকে নিজেদের প্রত্যাশা, পরামর্শ, মতামত জানানোর বড় প্ল্যাটফর্ম। এজিএমকে বলা হয় পরিচালনা পরিষদের ভুল-ত্রুটি, অনিয়ম-অসংগতি ধরিয়ে দেওয়ার বড় জায়গা। প্রতি এজিএমেই নির্দিষ্টসংখ্যক কাউন্সিলরের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ থাকে। সূত্র জানায়, তাঁদের বক্তব্যের বেশির ভাগ অংশেই পরিচালনা পর্ষদ বিশেষ করে বিসিবিপ্রধানকে প্রশংসায় ভাসানো হয়। এজিএমের আলোচ্যসূচিতে থাকা প্রায় সব প্রস্তাব সহজেই ‘পাস’ হয়।

বোর্ডের কার্যক্রম নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা, তর্কবিতর্ক, অনিয়ম-অসংগতি ধরিয়ে দেওয়ার রীতি প্রায় বিলুপ্ত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিশেষ করে টেস্ট ও আইসিসির ইভেন্টে জাতীয় দলের ধারাবাহিক ভরাডুবি নিয়েও খুব একটা আলোচনা হয় না। বেশির ভাগ কাউন্সিলর বাংলাদেশ ক্রিকেটের চলমান অগ্রগতিতে বোর্ড সভাপতির নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ২০২২ এজিএমের কথাই বলা যাক, ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর মোহিত-উর-রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, বর্তমান বোর্ড সভাপতির যোগ্য নেতৃত্বের কারণে আজ বাংলাদেশ ক্রিকেট বিশ্বব্যাপী সাফল্য পাচ্ছে। তিনি সভাপতিকে তাই ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

কালিন্দী ক্রীড়া চক্রের আলী হোসেনও ধন্যবাদ জানান বিসিবি সভাপতিকে। ঢাকা বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার এ বি সাইফ অবশ্য সব কাউন্সিলরকেই ধন্যবাদ জানান গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে সমর্থন দেওয়ায়। বোর্ড জেলা ক্রিকেট সংস্থাকে যে সহযোগিতা করছে, সে কারণে তিনি বোর্ড সভাপতিকে ধন্যবাদ জানান। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাহী উদ্দিন আহমেদ পুরো সিলেটবাসীর পক্ষ থেকে বোর্ড সভাপতিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। ঠাকুরগাঁওয়ের মাসুদুর রহমান বাবু আশা ব্যক্ত করেন, বর্তমান সভাপতির যোগ্য নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ দল একদিন বিশ্বকাপ জিতবে। চট্টগ্রামের সিরাজ উদ্দিন আলমগীর গত এজিএমে আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা গঠনের বিল পাস হওয়ায় দিনটিকে ‘ক্রিকেট উন্নয়নের দিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। এক কাউন্সিলর তাই গত পরশু রসিকতার সুরে বলছিলেন, ‘প্রশংসার পঞ্চবাণীর এজিএম আমাদের।’

এই প্রশংসার বন্যার মাঝে ব্যতিক্রম দু-একজন কাউন্সিলর থাকেন। তবে এজিএমের আলোচ্যসূচির বাইরে তাঁদের প্রস্তাব আলোর মুখ কমই দেখে। এমনকি কারও কারও ঝাঁজালো বক্তব্য এজিএম রিপোর্টে লিপিবদ্ধ না করার অভিযোগও আছে। এজিএম আয়োজনে বিসিবির ব্যয় দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ২০২১ সালের এজিএমে খরচ হয় ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। ২০২২ সালের এজিএমে সেটি হয়ে গেছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ২০২১ এজিএমে উপহার হিসেবে কাউন্সিলররা পেয়েছিলেন ১ লাখ টাকা এবং একটি করে ল্যাপটপ। গত এজিএমে কাউন্সিলরদের উপহার ছিল ৫০ হাজার টাকা আর একটি করে ফোন। ঢাকার বাইরের কাউন্সিলরদের জন্য বিসিবির পক্ষ থেকে বরাদ্দ করা হয় পাঁচ তারকা হোটেলের কক্ষ। এবারও ব্যতিক্রম হচ্ছে না, ৫০ হাজার টাকা আর একটি করে গ্যাজেট থাকছে কাউন্সিলরদের জন্য।

প্রথাগত আলোচনা, প্রশংসা আর উপহারের এই এজিএম আজ বিকেলে দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ করার পরিকল্পনা বিসিবির নীতিনির্ধারকদের। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত