Ajker Patrika

উৎপাদন খরচও উঠছে না কমে যাচ্ছে ধান চাষ

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২২, ১২: ৪২
উৎপাদন খরচও উঠছে না কমে যাচ্ছে ধান চাষ

শরীয়তপুরে গত পাঁচ বছরে ৪ হাজার ১৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ কমেছে। এতে উৎপাদন কমেছে ১২ হাজার মেট্রিক টন ধানের। যার বর্তমান বাজারমূল্য কমপক্ষে ৩৮ কোটি টাকা। বীজ, সার, সেচের জ্বালানির মূল্য ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ উঠছে না। ফলে আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কৃষকেরা।

শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র ও কৃষকেরা জানান, শরীয়তপুরে চলতি মৌসুমে ২৪ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন। পাঁচ বছর আগে বোরো ধানের আবাদ হয় ২৮ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন। এ পাঁচ বছরে আবাদ কমেছে ৪ হাজার ১৪০ হেক্টর। আর উৎপাদন কমেছে ১২ হাজার মেট্রিক টন।

শরীয়তপুর কৃষি বিভাগের ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের বোরো ধান আবাদ ও উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে প্রতি বছরই ধানের আবাদ ও উৎপাদন কমেছে।

২০১৮ সালে আবাদ হয় ২৮ হাজার ১৮০ হেক্টর, যার উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন। ২০১৯ সালে আবাদ হয় ২৭ হাজার ২১৫ হেক্টর, যার উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৭১ হাজার ৭৭২ মেট্রিক টন। ২০২০ সালে আবাদ হয় ২৬ হাজার ৪০০ হেক্টর, যার উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৭০ হাজার ৩১৯ মেট্রিক টন।

২০২১ সালে আবাদ হয় ২৪ হাজার ৫১০ হেক্টর, যার উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২২২ মেট্রিক টন। ২০২২ সালে আবাদ কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৪০ হেক্টর জমিতে। আর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৬১ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন।

মাঠপর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানান, চলতি মৌসুমে বীজ, সার, সেচের জ্বালানির মূল্য ও শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। যার কারণে কৃষকের বোরো উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। এ বছর প্রতি কেজি ধানের উৎপাদন খরচ হবে ২৫ টাকার বেশি।

বর্তমানে প্রতি কেজি ধানের বাজারমূল্য রয়েছে ২৮ টাকা থেকে ৩১ টাকা পর্যন্ত। নতুন ধান (বোরো) বাজারে এলে এর দাম কমে যাবে কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা।

শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার সরকার বলেন, বোরো ধান আবাদে কৃষকের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। যাঁদের নিজেদের জমি আছে এবং অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ও বিকল্প আয়ের সুযোগ নেই বর্তমানে শুধু তাঁরাই বোরো চাষ করেন। এতে তাঁদের সারা বছরের খাবারের নিশ্চয়তা পান। আর যাঁরা শ্রমিকের ওপর নির্ভর করে বোরো চাষ করেন, তাঁদের উৎপাদন খরচ ওঠে না। ফলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তাঁরা বোরো ফসল না করে অন্য ফসল করেন অথবা জমি অনাবাদি রাখেন। এভাবেই প্রতিবছর বোরোর আবাদ কমছে।

নড়িয়ার ভড্ডা গ্রামের কৃষক মোস্তাফিজুর রহমানের ১০ বিঘা ফসলি জমি। নিচু হওয়ায় একটি ফসল উৎপাদন করা যায়। পরিবারের সারা বছরের খাবার নিশ্চিত করার জন্য এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছেন। বাকি পাঁচ বিঘা জমি অনাবাদি রেখেছেন।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত ৭-৮ বছর বোরো ধান উৎপাদনে লোকসান হচ্ছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রতি কেজি ধান ৫ টাকা থেকে ৬ টাকা কমে বিক্রি করতে হচ্ছে। তাই দুই বছর ধরে অর্ধেক জমিতে বোরো ধান আবাদ করছি। বাকি অর্ধেক জমি অনাবাদি থাকছে।’

জানতে চাইলে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুস সাত্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, কৃষকের উৎপাদন খরচের চেয়ে ধানের বাজারমূল্য কম। গত বছর সরকার ২ হাজার ৪৩৮ মেট্রিক টন ধান কেনার ঘোষণা দেয়। কিন্তু কৃষক সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করেননি। তাই খাদ্য বিভাগ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান কিনতে পারেনি। বোরো ধান উৎপাদনে পরিশ্রম ও খরচ বেশি, সে অনুযায়ী দাম পাওয়া যায় না। এ কারণে অনেক কৃষক ও জমির মালিকেরা বোরো আবাদে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এক ছাতায় সব নাগরিক সেবা

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত