Ajker Patrika

পাহাড় কেটে সমতলে রূপ

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ১২: ০৬
পাহাড় কেটে সমতলে রূপ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান এলাকা থেকে আনোয়ারা বৈরাগ পর্যন্ত উঁচু পাহাড়ের সেই রূপ এখন বিলুপ্তির পথে। বাকি যে টিলা-পাহাড় রয়েছে, সেগুলো কেটে মাটি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে ভরাট করে গড়ে উঠছে কারখানা, ইমারত, রাস্তা।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে কাছের উপজেলা কর্ণফুলী। নদী-সমুদ্র পরিবেষ্টিত এ উপজেলার অপার সৌন্দর্য নদীতীরের দেয়াং পাহাড়। সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের এই পাহাড় আজ আর অক্ষত নেই। শিল্পায়নের নামে খননযন্ত্র দিয়ে তা কেটে মাটি অপসারণ করে সমতল করা হচ্ছে। পাহাড় কাটার ঠিকাদারিতে রয়েছে স্থানীয় দুই উপজেলার রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীরা।

জানা গেছে, আট বছর ধরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান দৌলতপুর এলাকার কেইপিজেড অঞ্চল, আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের মধ্য বন্দর, উত্তর বন্দর, মোহাম্মদপুর, ফকির কিল ও হাজিগাঁও এলাকায় চলে পাহাড় কাটা। কয়েক বছর আগে হাজিগাঁও ও মোহাম্মদপুর এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ হলেও বড় উঠান দৌলতপুর এলাকার কেইপিজেড অঞ্চল এলাকায় এখনো পাহাড় কাটার মহোৎসব চলছে। দিন-রাতে খননযন্ত্র দিয়ে বড় উঠান এলাকা থেকে আনোয়ারা বৈরাগ পর্যন্ত উঁচু পাহাড় কেটে মাটি অপসারণ করে সমতল করা হয়েছে। অপার সৌন্দর্য নদীতীরের দেয়াং পাহাড়ের সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যের সেই রূপ এখন বিলুপ্তের পথে। বাকি যে টিলা-পাহাড়গুলো রয়েছে, সেগুলো কেটে মাটি একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে ভরাট করে গড়ে উঠছে কারখানা, ইমারত, রাস্তা।

২০১২ সালে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসসহ পরিবেশ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে কেইপিজেডের (কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা) তিন শীর্ষ কর্মকর্তার পাশাপাশি অজ্ঞাত আরও সাত থেকে আটজনকে আসামি করে মামলাও করেন পরিবেশ অধিদপ্তর। কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার আড়াই হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে কেইপিজেড গড়ে উঠছে। পরিবেশ অধিদপ্তর ২০০৯ সালের ২৩ নভেম্বর ৩৩টি শর্তে কেইপিজেডকে পাহাড় কাটার অনুমতি দেয়। শর্তে লেখা আছে, অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী পাহাড় কর্তন ও মোচন করা যাবে। পাহাড়-টিলা কাটার আগে পরিবেশ অধিদপ্তরকে জানাতে হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কেইপিজেড কর্তৃপক্ষ পাহাড়ের পাদদেশে টার্ফিং, স্ট্যাবিলাইজিং, সিল্ট ট্র্যাপ ইত্যাদি ব্যবস্থা না নিয়েই ভূমি উন্নয়নের নামে এসব পাহাড় কেটে যাচ্ছে সমানে। দেয়াং পাহাড়গুলো যখন ছিল, তখন লোকালয়ে কখনো হাতি আসত না। কেইপিজেড একের পর এক পাহাড়গুলো কেটে শেষ করছে। এখন বন্যপ্রাণীগুলো তাদের বাসস্থান হারিয়ে দিন-দুপুরে চলে আসে লোকালয়ে। দেয়াং পাহাড় এখন নামে আছে, উঁচু পাহাড়গুলো কেটে সমতল করে দিচ্ছে। তারা যেভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে, আগামী কয়েক বছর পর পাহাড়ের নিশানাও থাকবে না। পাহাড় হারিয়ে গেলে কিছুদিন পর জীবজন্তু সবই লোকালয়ে চলে আসবে।

কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, কেইপিজেড শিল্পায়নের নামে দেয়াং পাহাড়কে ক্ষতবিক্ষত করে ফেলেছে। পরিবেশ রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি। তাদের বেপরোয়া পাহাড় কাটার মাশুল দিচ্ছে এলাকাবাসী। জলাধার ভরাটের কারণে বর্ষায় পানি নামে লোকালয়ে। এ জন্য পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি স্থানীয়দের ভোগান্তি হয়।

পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে কেইপিজেডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়েই এখানে শিল্পায়নের জন্য প্লট ও সড়ক তৈরি করছি। পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয়, সেভাবে পাহাড়ের টিলা কেটে সমতল করা হচ্ছে। যেসব শর্তে পরিবেশ অধিদপ্তর অনুমতি দিয়েছে আমরা কোনোভাবেই ওই শর্ত লঙ্ঘন করিনি।’

পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার বলেন, ‘সম্প্রতি কেইপিজেডে পাহাড় কাটার ওই স্থান সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। সেখানে দুই কিলোমিটার এলাকায় যে সড়ক করা হচ্ছে, তা পরিবেশ ছাড়পত্রের শর্তানুযায়ী কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবেশের শর্ত লঙ্ঘন হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুফিদুল আলম বলেন, ‘কেইপিজেডে পাহাড় কাটার বিষয়ে সদর দপ্তর থেকেও আমাকে অবগত করা হয়েছে। বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাগল বেশে রাস্তায় মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর সম্পর্কে যা জানা গেল

প্রধান উপদেষ্টার নতুন বিশেষ সহকারী কে এই আনিসুজ্জামান চৌধুরী

হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা

ধর্ষণের পর যৌনাঙ্গ ও স্তন কেটে হত্যা, চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ল আসামি

এনসিটিবিতে দুর্নীতির অভিযোগে এনসিপি নেতা তানভীরের নাম, সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড়

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত