ঋণ আর ডেঙ্গুতে তছনছ পরিবারটি

খান রফিক, বরিশাল
প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১১: ৪০
Thumbnail image

হতদরিদ্র পরিবারটির অভিভাবক ছিলেন রিনা বেগম (৪৫)। শয্যাশায়ী স্বামী আর পাঁচ সন্তানকে নিয়ে চলছিল তাঁর টিকে থাকার লড়াই। ঋণের বোঝায় নুয়ে পড়ার মতো অবস্থা। পাওনাদারদের ভয়ে এক বছর বাড়িছাড়া ছিল পরিবারটি। প্রতিবেশীদের উদ্যোগে ঘরে ফিরতেই হানা দেয় ডেঙ্গু। কেড়ে নেয় রিনা বেগমের প্রাণ। আজীবন সংগ্রাম করে যাওয়া রিনা বেগমের চিরস্থায়ী ঠিকানা হয় অন্যের জমিতে। এদিকে তাঁর মৃত্যুতে চোখে অন্ধকার দেখছে পুরো পরিবার। 

রিনা বেগমের বাড়ি বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়নের জাহাপুর হাইস্কুল-সংলগ্ন এলাকায়। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত শনিবার মারা যান রিনা। স্থানীয় ব্যক্তিরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারির চেয়েও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। কিন্তু করোনার সময় যেভাবে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল, সরকার নানা সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে এসেছিল, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে তার ছিটেফোঁটাও নেই। কিন্তু ডেঙ্গুতে রিনার মতো অনেক পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে, তছনছ হচ্ছে।

  • শয্যাশায়ী স্বামী আর সন্তানদের নিয়ে ছিল রিনার লড়াই।
  • ডেঙ্গুতে মৃত্যুর পর রিনার দাফন হয়েছে অন্যের জমিতে।
  • পরিবারের ওপর এখনো ১২ লাখ টাকার মতো ঋণের বোঝা। 

প্রয়াত রিনার মেজ সন্তান সুমন খান বলেন, তাঁর বাবা নূর ইসলাম কৃষিকাজ করতেন। কিন্তু এখন রোগে শয্যাশায়ী। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। মা গৃহিণী হলেও ছিলেন পরিবারের মূল শক্তি। এক ভাই ও এক  বোনের বিয়ে হলেও মায়ের সঙ্গেই তাঁরা থাকেন। ডেঙ্গু মাকে কেড়ে নিয়েছে। তাঁদের পরিবারটাও তছনছ হয়ে গেছে। 

সুমন বলেন, তাঁরা দুই ভাই দরজির কাজ করেন। ছোট ভাই লেখাপড়া করছে। অভাব-অনটনের কারণে দিনে দিনে ঋণের বোঝা বেড়েছে। বিভিন্ন এনজিওর কাছ থেকে নেওয়া ঋণ বেড়ে ২০ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। পাওনাদারদের ভয়ে করোনার সময় এক বছর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন তাঁরা। পরে এলাকাবাসী তাঁদের আবার এলাকায় ফেরান। মায়ের চেষ্টায়ই ধীরে ধীরে ঋণ পরিশোধ করার চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। তবে এখনো ১২ লাখ টাকার মতো ঋণ রয়েছে। তিনি বলেন, একমাত্র টিনের ঘরটি ছাড়া তাঁদের আর কিছুই নেই।

শনিবার মায়ের মৃত্যুর পর তাঁকে বাড়ির পাশে অন্যের জমিতে দাফন করতে হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. জুয়েল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, দরিদ্র পরিবারটিকে মা রিনা বেগমই আগলে রেখেছিলেন। ঋণের কারণে পালিয়ে ছিল পুরো পরিবার। এবার ডেঙ্গু পরিবারটির শক্তিই যেন ভেঙে দিয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত