সুনামগঞ্জে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও হয়নি অবকাঠামো উন্নয়ন। এ জেলার পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করার উদ্যোগ সংশ্লিষ্টদের।

গতকাল বুধবার দুপুরে দুই দিনব্যাপী পর্যটন ও পণ্য উদ্যোক্তাদের কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে এ পরিকল্পনার তথ্য জানায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। জেলা সার্কিট হাউস মিলনায়তনে এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন এর আয়োজন করে।

এ সময় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব আবু তাহের মুহাম্মদ জাবের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জসহ সিলেট বিভাগের পরিবেশ রক্ষা করেই পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করা ট্যুরিজম বোর্ডের চ্যালেঞ্জ। এতে উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে।’

আবু তাহের আরও বলেন, ‘সুনামগঞ্জে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এসব সম্ভাবনা কাজে লাগানোই বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের লক্ষ্য। পর্যটনশিল্পকে বিকশিত করতে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। পরিবেশকে আগে গুরুত্ব দিয়ে পর্যটন বিকশিত করতে হবে।’

সুনামগঞ্জের পর্যটনশিল্প কেন চ্যালেঞ্জিং, এর ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবেশকে গুরুত্ব না দিলে শুধু পর্যটনের কথা চিন্তা করলে হবে না। আগে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখেই পর্যটনশিল্পকে আমরা বিকশিত করব; তাই এটাকে আমরা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি। এ জন্যই ইকো ট্যুরিজমে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।’

কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘সুনামগঞ্জে পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন ততটা ভালো নয়। যাতায়াত ব্যবস্থাও নাজুক। এ জেলার পর্যটনকে সমৃদ্ধ করতে বেশ কিছু প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সুনামগঞ্জের পর্যটনশিল্প বিশ্বের দরবারে সুনাম অর্জন করতে পারবে।’

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, সুনামগঞ্জে উড়ালসড়ক হবে। সড়কটি হলে পর্যটনশিল্পের পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের অর্থনীতি আরও বেশি সমৃদ্ধ হবে।

ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক মুহাম্মদ জাবের পর্যটক উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন, পর্যটক উদ্যোক্তাদের অবশ্যই সুনামগঞ্জ সম্পর্কে জানতে হবে। যাঁরা পর্যটকদের গাইড হিসেবে থাকবেন, তাঁদের আমরা পর্যায়ক্রমে নিবন্ধিত করব। প্রত্যেক ট্যুর গাইডকে অবশ্যই সুনামগঞ্জের প্রতিটি জায়গা সম্পর্কে জানতে হবে; যাতে পর্যটকেরা কোনো ধরনের হয়রানি শিকার না হন।’

গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া এ কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক তামিম আল ইয়ামিন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সহকারী পরিচালক মো. বোরহান উদ্দিন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী ৪৩ জন উদ্যোক্তার হাতে সুনামগঞ্জের ব্র্যান্ডিং বই তুলে দেওয়া হয়।

মেঘালয় পাহাড়ের কোলঘেঁষা জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ মিঠাপানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওরের মোহনীয় রূপে মুগ্ধ পর্যটকেরা। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা আসেন এখানে।

দুই উপজেলার প্রায় এক শ বর্গকিলোমিটারের অপার সম্ভাবনার হাওরটি যেন সাজিয়েছে অপরূপ সৌন্দর্যে। কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়ন, যোগাযোগব্যবস্থাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত সম্ভাবনাময় পর্যটন এলাকাটি।

তাহিরপুর ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকায় পর্যটকেরা থাকেন নিরাপত্তাহীন। এ ছাড়া হাওরে বেড়াতে গিয়ে আবাসন, স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যা রয়েছে। ফলে বেড়াতে আসা পর্যটক ও দর্শনার্থীরা পড়েন চরম বিপাকে।