কিশোরগঞ্জ-ভৈরব রেলপথের ১২টি রেলস্টেশনের মধ্যে ৫টিই দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ফলে হাজারো মানুষ যাতায়াত ও মালপত্র পরিবহন করতে না পেরে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এতে রেলওয়ে যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি চুরি হয়ে যাচ্ছে বন্ধ স্টেশনগুলোর দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। অন্যদিকে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে স্টেশনগুলো। সন্ধ্যা নামলেই যা হয়ে উঠছে স্থানীয়দের আতঙ্কের নাম। 
তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকাল ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্টেশনমাস্টার সংকটসহ নানা কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়। প্রয়োজনীয় লোকবল না থাকায় স্টেশনগুলো তদারকি করাও সম্ভব হচ্ছে না। তবে লোকবল নিয়োগ দেওয়ার পর বন্ধ স্টেশনগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদলে দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়ির কাছে যশোদলপুর রেলওয়ে স্টেশন। দীর্ঘদিনের পুরোনো এ স্টেশন ভেঙে আংশিক মেরামত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরও স্টেশনকে পাশ কাটিয়ে চলছে ট্রেন। এ স্টেশনে কোনো ট্রেন থামে না। একইভাবে ঐতিহ্যবাহী নীলগঞ্জ স্টেশন, বাজিতপুর উপজেলার হালিমপুর, কুলিয়ারচর উপজেলার ছয়সূতি ও ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ স্টেশনে দীর্ঘদিন ধরে কোনো ট্রেনই থামে না।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ-ভৈরব-ঢাকা রেলপথের দূরত্ব ১৩৫ কিলোমিটার। কিশোরগঞ্জ-ভৈরব পথে মোট স্টেশন ১২টি। এর মধ্যে চালু আছে সাতটি। এ পথে আন্তনগর এগারো সিন্ধুর প্রভাতি, আন্তনগর এগারসিন্ধুর গোধূলি, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ছাড়াও ময়মনসিংহ-ভৈরব হয়ে চট্টগ্রামে যাতায়াত করে আন্তনগর বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, একসময়ের ব্যস্ত স্টেশনে সময়ের পরিক্রমায় শোনা যায় না কোনো হুইসেল। নেই আগের মতো কর্মব্যস্ততাও। চারদিকে এখন সুনসান নীরবতা। স্টেশনগুলো আবার চালু করতে বিভিন্ন সময় দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে কাজ হয়নি তাতে। স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় নিয়মিত সংকেতদান, টিকিট বিক্রি, মালামাল বুকিংসহ বন্ধ রয়েছে সব কার্যক্রম। স্টেশনের সিগন্যাল পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টাই থাকে বিপজ্জনক সংকেত। রাতে বিরাজ করে ভুতুড়ে পরিবেশ।

যশোদল ইউনিয়নের বাসিন্দা মোহাম্মদ আল আমিন বলেন, ‘প্রতিদিন আমাদের চোখের সামনে দিয়ে ট্রেন চলাচল করে। কিন্তু স্টেশনটি রয়ে গেছে পরিত্যক্ত। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বীর যশোদলপুর এলাকার নামানুসারে এ স্টেশনের নাম করা হয় যশোদলপুর। কয়েক বছর আগে পুরোনো একটি স্থাপনা ভেঙে নতুন প্ল্যাটফর্ম নির্মাণ শুরু করা হলেও এটি আর শেষ করা হয়নি। আমরা স্টেশনটি অবিলম্বে চালুর দাবি জানাচ্ছি।’

মহিনন্দ ইউনিয়নের বাসিন্দা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসার জন্য নীলগঞ্জ একটি প্রসিদ্ধ এলাকা। কিন্তু এখানে ট্রেন না থামায় বাজারের ব্যবসায় ধস নেমেছে। যাত্রীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে জেলা শহরে গিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়।’

সমন্বয় সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এ এম ওবায়েদ বলেন, ‘রেলস্টেশনগুলো বন্ধ থাকার কারণে হাজারো মানুষ পণ্য আনা-নেওয়া ও রেলভ্রমণ নিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। জনগণের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাড়তি অর্থ খরচ করতে হচ্ছে।’

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জনবল-সংকটে স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নতুন লোকবল নিয়োগ হলেই বন্ধ স্টেশনগুলো চালু হয়ে যাবে।’