১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংস্কারকাজে ‘অনিয়ম’

কোটচাঁদপুর (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ৫২

কোটচাঁদপুরে ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেরামতকাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। ভ্যাট ও আয়করের নামে প্রতিটি বিদ্যালয়ে বরাদ্দ থেকে 
কেটে নেওয়া হয়েছে ৩০-৪০ হাজার টাকা। তবে কাজ ভালো হয়েছে বলে দাবি করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে কোটচাঁদপুর উপজেলার ১৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেয় সরকার। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে রঘুনাথপুর, কুল্লাগাছা, মানিকদিহি, ছয়খাদা, শালকুপা, রাজাপুর, পারলাট, আবদুর রাজ্জাক, বাজেবামনদহ, হাড়ডাঙ্গা বিদ্যাধরপুর, বলাবাড়িয়া, চাঁদপাড়া, দূর্বাকুণ্ড, কামার কুণ্ড, চতুরপুর, ব্রহ্মপুর, হরিণদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়ের কাজ শেষ হয়েছে। বিলও তুলেছেন অনেকে। এগুলোর একটি হচ্ছে রঘুনাথ প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবেদ হাসান, আর প্রধান শিক্ষক হচ্ছেন আবেদ হাসানের ভাই অমেদুল ইসলাম।

তাঁরা দুই ভাই মিলে বিদ্যালয়ের মেরামতকাজের শিডিউল অনুযায়ী না করে তা ইচ্ছেমতো সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্য তাসলিমা খাতুন। তিনি বলেন, ‘কমিটি গঠনের পর মাত্র একটি মিটিংয়ে আমাকে ডেকেছিল, আর কোনো দিন ডাকেননি। আর বিদ্যালয়ে কখন কী হচ্ছে, তা আমি জানি না। তবে অনিয়ম হচ্ছে এমন কথা শুনতে পাচ্ছি।’

কাজ নিয়ে অভিযোগ তুলেছেন ওই গ্রামের কলেজছাত্র সজিব আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘দুই ট্রলি বালু আর কয়েক বস্তা সিমেন্ট নিয়ে এসেছিলেন, যা দিয়ে বিদ্যালয়ের ভবনে রং ও জলছাদের কাজ করেছেন তাঁরা। এতে ৭০ হাজার টাকা খরচ হতে পারে। আর বাকি টাকা হয়েছে লুটপাট।’

একই অভিযোগ শালকুপা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য বীথি ঘোষের। তিনি বলেন, ‘আগে দু-একটা কাজের সময় আমাকে ডাকত। এবার আমাকে এ বিষয়ে কেউ কিছু বলেননি।’

এ বিষয়ে শালকুপা গ্রামের বাবুল আহম্মেদ ও আবুল খায়ের বলেন, ‘কোনো দিন কোথাও রাতে রঙের কাজ করতে দেখিনি। এই স্কুলে সেটা দেখলাম। বিকেল ৫টার সময় আসত রংমিস্ত্রি আর রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করত। তাহলে কাজ কেমন হয়েছে, এটা আপনাদের কাছে প্রশ্ন আমাদের।’

এমন অভিযোগ প্রতিটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির বিরুদ্ধে। অন্যদিকে কথা উঠেছে ওই কাজের ভ্যাট আর আয়করের টাকা নিয়ে। জানা গেছে, ভ্যাট আর আয়কর বাবদ কেটে নেওয়া হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা।

যার প্রমাণ মিলেছে মানিক দিহি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন, ‘মেরামতের জন্য ২ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে ৪০ হাজার টাকা কেটে বাকি টাকার কাজ করা হয়েছে।’

একই কথা বলেন ছয়খাদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক খাইরুল হোসেন। তবে শালকুপা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেহেনা খাতুন বলেন, ‘ভ্যাট আর আয়কর বাবদ আমাদের কাছ থেকে কেটেছে ৩০ হাজার টাকা।’

তবে এসব মানতে নারাজ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অসিত বরণ পাল। তিনি দাবি করেন, কাজ শিডিউল অনুযায়ী হয়েছে। আর ভ্যাট আর আয়করের যে টাকা টাকার অভিযোগ উঠেছে, এটা সঠিক নয়। কারণ, তাদের টাকা চেকের মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। টাকা কেটে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

অসিত বরণ পাল আরও বলেন, ‘আমার জানামতে হিসাবরক্ষণ অফিস ১০ শতাংশ ভ্যাট আর ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ আয়কর কাটছে।’ তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ওই কাজের টাকা থেকে ৭ শতাংশ ভ্যাট আর ৩ শতাংশ আয়কর কাটা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর উপজেলা প্রকৌশলী রুহুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ওই কাজের কারিগরি দিকটা দেখার দায়িত্বে রয়েছি। বিল দেবে শিক্ষা অফিস। কাজের মান ভালো হয়েছে বলে দেখেশুনে বিল দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছুই জানা ছিল না। এখন জানলাম। শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে দেখি, ঘটনাটি কী ঘটেছে। এরপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত