Ajker Patrika

বগুড়ায় পুড়ে কয়লা পাঁচ শ্রমিক

আদমদীঘি ও বগুড়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪৪
বগুড়ায় পুড়ে কয়লা পাঁচ শ্রমিক

বাতাসে পোড়া লাশের গন্ধ। আহাজারি চারপাশে। এর মধ্যে কেউ খুঁজছেন স্বামীকে, কেউ বাবাকে আর কেউবা আদরের ছেলেকে। তাঁদের গগনবিদারী চিৎকারে ভারী হয়ে উঠছে সান্তাহার শহরতলি।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহারে শহরের বিআইআরএস প্লাস্টিক কারখানায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে পুড়ে যাওয়া পাঁচ শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। প্রাথমিক অবস্থায় উদ্ধার করা লাশের পরিচয় মেলেনি।

প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম প্লেট ও গ্লাস তৈরির কারখানাটি সম্প্রতি গড়ে উঠেছে। এখানে কর্মরত আছেন ৭২ জন কর্মচারী। প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের পাশাপাশি কিশোরেরাও কাজ করে এই কারখানায় সহকারী শ্রমিক হিসেবে।

শ্রমিকেরা জানান, গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফ্যাক্টরির একটি মেশিন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে কারখানার ভেতরে কর্মরত শ্রমিকেরা চিৎকার শুরু করেন এবং দৌড়ে বের হতে থাকেন। খবর পেয়ে আদমদীঘি থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আগুনের মাত্রা বাড়তে থাকলে পাশের নওগাঁ ও বগুড়া সদর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দল এসে এ কাজে অংশ নেয়। ফায়ার সার্ভিসের মোট ১২ ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে কারখানার প্রায় সব পুড়ে শেষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, কারখানার দেয়াল ছাড়া অবশিষ্ট কিছুই নেই। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা কারখানার ভেতর থেকে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া পাঁচটি লাশ উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থলে স্বজনহারাদের আহাজারি করতে দেখা যায়।

দোগাছি মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে সজিব (১২) কাজ করত এই কারখানায়। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তার খোঁজ নেই। কারখানার পাশে বসে আহাজারি করছিলেন তাঁর মা। মায়ের ভয়, হয়তো পুড়ে যাওয়া পাঁচটি লাশের একটি তাঁর ছেলের।

এরপর পৃষ্ঠা ২ কলাম ৬

কিন্তু চেনার উপায় নেই। কারণ, আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে লাশগুলো।

আহাজারি করছিলেন সান্তাহার পৌর শহরের ঘোড়াঘাট মহল্লার আব্দুল খালেক (৪৫), শহর কোলের সান্দিড়া গ্রামের শাহজাহানের (৩০) স্বজনেরাও। অগ্নিকাণ্ডের পরে খোঁজ নেই দুই শ্রমিকের।

নওগাঁ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ শফিউল ইসলাম বলেন, আগুন লাগার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি।

চারজনের যৌথ মালিকানায় কারখানাটি পরিচালিত হয়ে আসছে। তাঁরা হলেন—ব্যবসায়ী সোহেল রানা, জিয়াউর হক নাসিম, ইসমাইল হোসেন ও সান্তাহার পৌরসভার মেয়র সাবেক বিএনপি নেতা তোফাজ্জল হোসেন ভুট্টু। ভুট্টুর দাবি, অগ্নিকাণ্ডে মালামালসহ ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বগুড়া জেলা প্রশাসক মো. জিয়াউল হক, এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী, আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শ্রাবণী রায়সহ পুলিশ এবং প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তদন্তে কারখানা কর্তৃপক্ষের অবহেলা বা কারও কোনো দায় থাকলে সেই অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসপি সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, লাশ পাঁচটি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। পুড়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের ডিএনএ পরীক্ষা করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত