আজাদুল আদনান, ঢাকা
প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোর বেহাল দশা ফুটে উঠতে শুরু করে। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন, কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও নেই ওষুধপথ্য। তদারকির অভাব, জনবলসংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ধুঁকতে থাকে ক্লিনিকগুলো।
এই ক্লিনিকগুলো সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের’ অধীনে পরিচালিত হয়। সেই বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকের দুরবস্থা আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে, আরও হবে। অনিয়মের বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জনবল নিয়োগের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা গেল, দুই কক্ষের একতলা ভবনে বৌনাকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝোপঝাড়ঘেরা জীর্ণ ভবনটির মেঝে অনেক উঁচু। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র। সেখানে রোগীর অপেক্ষায় থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আঞ্জুমান আরা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ক্লিনিকের কাছেই বাড়ি অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস আক্তারের। তিনি বলেন, এমন জায়গায় ক্লিনিকটি করা হয়েছে যে সহজে যাওয়ারই উপায় নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ক্লিনিক থাকার কথা থাকলেও আছে ২০টি। এর মধ্যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ অবস্থা শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জেই নয়; ঢাকা ছাড়াও গাইবান্ধা, গাজীপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ অন্তত ২০ জেলার পাঁচ শতাধিক ক্লিনিক পরিদর্শন করে একই চিত্র পেয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাতে ধরা পড়েছে জীর্ণ ভবন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবার নাজুক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর মাসুদ রেজা কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দেশে অর্ধেকের মতো ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। আগে ৪ লাখ টাকার মতো লাগলেও বর্তমানে নতুন নকশা ও পরিসরের কারণে প্রতিটির খরচ লাগছে ৩৪ থেকে ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম ধাপে ৭০০ ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।
জেলায় জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড বা সিবিএইচসির তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বানানো ক্লিনিক ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ঝুঁকিপূর্ণ। শতাধিক ভবন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
বরিশালে ৩০৫টি ক্লিনিকের মধ্যে ৯৬টি বেহাল। সদর, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীর ১৫টি ক্লিনিক ভবনের নিলাম ডাকা হয়েছে। বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা জানান, সংস্কারের অভাবে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী।
গাজীপুরে ২২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০টি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিছু নতুন ভবন বানানো হয়েছে। বাকিগুলোরও নির্মাণ বা সংস্কার চলমান।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ২০টি ক্লিনিকের মধ্যে দুটি নতুনভাবে হলেও বাকিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। কয়েকটি মেরামত করা হলেও মোকারিমপুর ইউনিয়নের দুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চারটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোলাম মস্তফা বলেন, ‘আমবাড়ীতে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অল্প দিনের মধ্য শুরু হবে। বাকিগুলোরও টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।’
নীলফামারীতে ১৯২টি ক্লিনিক। জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খুলে রড বেরিয়ে এসেছে। কোথাও ফাটল ধরেছে। কয়েকটি ক্লিনিকে বৃষ্টির পানি পড়ে ওষুধপথ্য নষ্ট হয়ে যায়। জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিগগিরই সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
সেবা পেতে হয়রানি
গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। অধিকাংশই যখন খুশি খোলা হয়, যখন খুশি বন্ধ রাখা হয়। প্রায়ই রোগীদের ফিরতে হয় সেবা ছাড়াই। সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধা কৃষ্ণপুরে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় ক্লিনিক। ওই এলাকার গৃহবধূ বিলকিস আক্তার বলেন, ‘এখানে এক ভাবি কাজ করেন। কোনো দিন আসেন, কোনো দিন আসেন না। এলেও ঘণ্টাখানেক থাকেন, আবার ব্যাগখান গাড়ত করে চলে যান।’ ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, নিয়মিত ক্লিনিকগুলো খোলা হচ্ছে না। মানুষ ওষুধ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। দায়িত্ব পালনে কর্মীদের অবহেলা ও অনৈতিকতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। ৩৪ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও আছে শুধু প্রসবপূর্ব টিকাদানসহ প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর নবজাতকের সেবা। চরাঞ্চলের ক্লিনিকে এসব সেবারও কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন কান্তি বলেন, ‘ক্লিনিক বন্ধ রাখা এবং সেবা দিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে দেখব।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ২৪টি ক্লিনিক প্রায়ই বন্ধ থাকে। বিনোদনগর ইউনিয়নের ডাংশেরঘাটে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক তালাবদ্ধ। পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুর গ্রামের বৃদ্ধা জয়মালা রানী শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে এসেছেন। ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে তাঁর মন খারাপ। সিএইচসিপি মোছা. শাপলা আকতার ফোনে বলেন, ‘ওষুধ নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, পথে ভ্যান বিকল হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণে, অফিসের কাজে, ওষুধ তুলতে বাইরে যেতে হয়। তাই ক্লিনিক তো বন্ধ রাখতেই হবে।’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাজারদিয়াড় চরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের ভরসা একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক। সেটি খোলা হয় সপ্তাহে মাত্র দুদিন। এই চরে স্থায়ীভাবে কোনো সিএইচসিপি যেতে চান না। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা হুজরিপাড়া ইউনিয়নের সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিন যেতে পারি না। নৌকায়-মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়া-আসা করতে অনেক খরচ।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বাসরী বলেন, ‘যত দিন চরের কারও নিয়োগ না হচ্ছে, তত দিন এ পারের লোক দিয়েই ক্লিনিকটি চালাতে হচ্ছে।’
বরিশালের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কখন খোলা হয়, আর কখন বন্ধ হয়, জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সিএইচসিপিরা সময়মতো না আসায় রোগীদের তালাবদ্ধ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে তদারকি জোরদার করেছেন তাঁরা।
পানি-শৌচাগার নেই
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই পানি ও শৌচাগার। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা খেমিরদিয়ার ও ফকিরাবাদ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, টয়লেট ও পানি না থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বসার জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের কয়েকটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। কোথাও কোথাও সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সরবরাহ ঠিক থাকে না। নিয়মিত পানির সরবরাহ মেলে না।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি ক্লিনিকের শৌচাগার নাজুক।
চাহিদামতো ওষুধ মেলে না
ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দিনে ৪০ জনের মতো রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিলেও ওষুধ ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ অনেক রোগীর। সেবা নিতে আসা খাদিজা বেগম (৪০) বলেন, ‘শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠান্ডায় জ্বর আর কাশি। ওষুধ নিতে গেলে কয়েকটা দিয়ে আর দেয় না।’ চাহিদামতো না দেওয়া গেলেও প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয় বলে দাবি করেন সিএইচসিপি মো. আল-আমিন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ৪০টি ক্লিনিকের অধিকাংশেই ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের ফজিলা খাতুন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে এলে ওষুধ পাওয়া যায় না। জ্বর, সর্দি, গ্যাস্টিকের ছাড়া কোনো ওষুধ পাই না।’ নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশিদ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে শতভাগ সেবা ও ওষুধ সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে প্রায় ৭৫০ রোগী। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হলেও রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। নূরপুর মালঞ্চি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আক্তারুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, আমাশয়ের ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।
জনবলসংকট
জনবল সংকট কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর আরেক বড় সমস্যা। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৬টি ক্লিনিক। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী আছেন মাত্র তিনজন। সিএইচসিপিসহ ২০টি পদ শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেন।
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি দিয়ে কোনোরকমে চলছে কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৭টি ক্লিনিকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
কিছু ক্লিনিক ভরসার স্থল
নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার জায়গা কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক থেকে নিয়মিত ২৭ রকমের ওষুধসহ সেবা মিলছে। জেলার ৭ উপজেলায় ২১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটিতে দিনে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছে। সিভিল সার্জন রোজী আরা বেগম বলেন, ‘উন্নতমানের ওষুধ ও কর্মীদের আন্তরিকতায় তৃণমূল মানুষের ভরসার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ হাজীপুর। এই গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে দুই কিলোমিটার হাঁটতেও হয়। তাই সদরে গিয়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া কষ্টকর। এই কষ্ট দূর করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
টাঙ্গাইলে ৪২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে রোগীদের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোসহ নানা সেবা দেওয়া হয়। গত বছর প্রায় ৫৬ হাজার রোগীকে পরামর্শ দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
আগে সেবার ধরন ঠিক করার তাগিদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কী সেবা দেওয়া হবে, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অথচ এগুলোতে প্রাথমিক সেবার সব ধরনের ব্যবস্থাই করা যেত। এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো আন্তরিকতার।’
[প্রতিবেদনের জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (গাজীপুর), আনোয়ার হোসেন শামীম (গাইবান্ধা), মো. রফিকুল ইসলাম খান (বরিশাল), মো. মোস্তাফিজুর রহমান (ভেড়ামারা), মো. নিয়াজ মোরশেদ (আক্কেলপুর), মো. জসিম উদ্দীন (নীলফামারী), মো. আমিনুল ইসলাম (ফুলবাড়ী), মো আতিকুল ইসলাম চৌধুরী (নবাবগঞ্জ), রিমন রহমান (রাজশাহী), ইলিয়াস আহমেদ ও মিন্টু মিয়া (নান্দাইল ও ময়মনসিংহ), মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ (নোয়াখালী), শিপুল ইসলাম (রংপুর), গনেশ দাস (বগুড়া), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), মো. শামীম রেজা (রাজবাড়ী), ফারুক হোসেন ফিরোজ (সরিষাবাড়ী) ও আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ঝিনাইদহ)]
প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬ সালে নেওয়া হয়েছিল কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৫৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই ধাপে দেশে ১৪ হাজার ২০০ কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। শুরুতে এসব ক্লিনিক গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ভরসাস্থল হয়ে উঠছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলোর বেহাল দশা ফুটে উঠতে শুরু করে। কোথাও জরাজীর্ণ ভবন, কোথাও চিকিৎসক নেই, কোথাও নেই ওষুধপথ্য। তদারকির অভাব, জনবলসংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা কারণে ধুঁকতে থাকে ক্লিনিকগুলো।
এই ক্লিনিকগুলো সরকারের ‘কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ডের’ অধীনে পরিচালিত হয়। সেই বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কিছু কমিউনিটি ক্লিনিকের দুরবস্থা আমরা চিহ্নিত করেছি। সেই তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেকগুলো নতুন করে স্থাপন করা হয়েছে, আরও হবে। অনিয়মের বিষয়ে তদারকি বাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। জনবল নিয়োগের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’
ঢাকার পাশে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা গেল, দুই কক্ষের একতলা ভবনে বৌনাকান্দি কমিউনিটি ক্লিনিক। ঝোপঝাড়ঘেরা জীর্ণ ভবনটির মেঝে অনেক উঁচু। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি স্বাস্থ্য সেবাদান কেন্দ্র। সেখানে রোগীর অপেক্ষায় থাকা কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আঞ্জুমান আরা জানান, ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকাভুক্ত। ক্লিনিকের কাছেই বাড়ি অন্তঃসত্ত্বা নার্গিস আক্তারের। তিনি বলেন, এমন জায়গায় ক্লিনিকটি করা হয়েছে যে সহজে যাওয়ারই উপায় নেই।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরাফাতুর রহমান বলেন, উপজেলায় ৩৬টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ক্লিনিক থাকার কথা থাকলেও আছে ২০টি। এর মধ্যে কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ। সেগুলোর তালিকা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এ অবস্থা শুধু ঢাকার কেরানীগঞ্জেই নয়; ঢাকা ছাড়াও গাইবান্ধা, গাজীপুর, বরিশাল, ময়মনসিংহ, নীলফামারী, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, রংপুর, টাঙ্গাইলসহ অন্তত ২০ জেলার পাঁচ শতাধিক ক্লিনিক পরিদর্শন করে একই চিত্র পেয়েছেন আজকের পত্রিকার প্রতিনিধিরা। তাতে ধরা পড়েছে জীর্ণ ভবন ছাড়াও স্বাস্থ্যসেবার নাজুক পরিস্থিতি।
এ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর মাসুদ রেজা কবির। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, দেশে অর্ধেকের মতো ক্লিনিক ঝুঁকিপূর্ণ। ইতিমধ্যে বেশ কিছু নতুনভাবে স্থাপিত হয়েছে। আগে ৪ লাখ টাকার মতো লাগলেও বর্তমানে নতুন নকশা ও পরিসরের কারণে প্রতিটির খরচ লাগছে ৩৪ থেকে ৩৮ লাখ টাকা। প্রথম ধাপে ৭০০ ক্লিনিক স্থাপন করা হবে।
জেলায় জেলায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন
কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টি বোর্ড বা সিবিএইচসির তথ্যমতে, ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে বানানো ক্লিনিক ভবনগুলোর মধ্যে প্রায় ছয় হাজার ঝুঁকিপূর্ণ। শতাধিক ভবন সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
বরিশালে ৩০৫টি ক্লিনিকের মধ্যে ৯৬টি বেহাল। সদর, আগৈলঝাড়া ও গৌরনদীর ১৫টি ক্লিনিক ভবনের নিলাম ডাকা হয়েছে। বাবুগঞ্জের মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিরা জানান, সংস্কারের অভাবে ভবন ব্যবহারের অনুপযোগী।
গাজীপুরে ২২৪টি কমিউনিটি ক্লিনিকের ৬৮টিই ঝুঁকিপূর্ণ। ২০টি সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন খায়রুজ্জামান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিকের তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিছু নতুন ভবন বানানো হয়েছে। বাকিগুলোরও নির্মাণ বা সংস্কার চলমান।
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় ২০টি ক্লিনিকের মধ্যে দুটি নতুনভাবে হলেও বাকিগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী। কয়েকটি মেরামত করা হলেও মোকারিমপুর ইউনিয়নের দুটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সামান্য বৃষ্টিতে ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। দেয়ালে ফাটল ধরেছে।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ২১টি কমিউনিটি ক্লিনিকের চারটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক গোলাম মস্তফা বলেন, ‘আমবাড়ীতে নতুন ভবন নির্মাণকাজ অল্প দিনের মধ্য শুরু হবে। বাকিগুলোরও টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন।’
নীলফামারীতে ১৯২টি ক্লিনিক। জলঢাকা উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের গাবরোল কমিউনিটি ক্লিনিক ভবনের ছাদের পলেস্তারা খুলে রড বেরিয়ে এসেছে। কোথাও ফাটল ধরেছে। কয়েকটি ক্লিনিকে বৃষ্টির পানি পড়ে ওষুধপথ্য নষ্ট হয়ে যায়। জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর কবির বলেন, শিগগিরই সংস্কার বা পুনর্নির্মাণ করা হবে।
সেবা পেতে হয়রানি
গাইবান্ধার ৭ উপজেলায় ৩০৫টি কমিউনিটি ক্লিনিক। অধিকাংশই যখন খুশি খোলা হয়, যখন খুশি বন্ধ রাখা হয়। প্রায়ই রোগীদের ফিরতে হয় সেবা ছাড়াই। সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের রাধা কৃষ্ণপুরে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় গিয়ে বন্ধ পাওয়া যায় ক্লিনিক। ওই এলাকার গৃহবধূ বিলকিস আক্তার বলেন, ‘এখানে এক ভাবি কাজ করেন। কোনো দিন আসেন, কোনো দিন আসেন না। এলেও ঘণ্টাখানেক থাকেন, আবার ব্যাগখান গাড়ত করে চলে যান।’ ফুলছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, নিয়মিত ক্লিনিকগুলো খোলা হচ্ছে না। মানুষ ওষুধ নিতে এসে ফিরে যাচ্ছে।’
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অবস্থা বেশ নাজুক। দায়িত্ব পালনে কর্মীদের অবহেলা ও অনৈতিকতায় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। ৩৪ ধরনের সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও আছে শুধু প্রসবপূর্ব টিকাদানসহ প্রসবকালীন এবং প্রসবোত্তর নবজাতকের সেবা। চরাঞ্চলের ক্লিনিকে এসব সেবারও কোনো ব্যবস্থা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুমন কান্তি বলেন, ‘ক্লিনিক বন্ধ রাখা এবং সেবা দিয়ে টাকা গ্রহণের বিষয়টি জানা নেই। তদন্ত করে দেখব।’
দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার ২৪টি ক্লিনিক প্রায়ই বন্ধ থাকে। বিনোদনগর ইউনিয়নের ডাংশেরঘাটে বেলা ১১টায় গিয়ে দেখা যায়, ক্লিনিক তালাবদ্ধ। পার্শ্ববর্তী পাহাড়পুর গ্রামের বৃদ্ধা জয়মালা রানী শরীরে তীব্র ব্যথা নিয়ে এসেছেন। ক্লিনিক তালাবদ্ধ দেখে তাঁর মন খারাপ। সিএইচসিপি মোছা. শাপলা আকতার ফোনে বলেন, ‘ওষুধ নিতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়েছিলাম, পথে ভ্যান বিকল হওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।’ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা শ্যামল কুমার রায় বলেন, ‘সিএইচসিপিদের প্রশিক্ষণে, অফিসের কাজে, ওষুধ তুলতে বাইরে যেতে হয়। তাই ক্লিনিক তো বন্ধ রাখতেই হবে।’
রাজশাহীর পবা উপজেলার মাজারদিয়াড় চরে প্রায় ১২ হাজার মানুষের ভরসা একমাত্র কমিউনিটি ক্লিনিক। সেটি খোলা হয় সপ্তাহে মাত্র দুদিন। এই চরে স্থায়ীভাবে কোনো সিএইচসিপি যেতে চান না। অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা হুজরিপাড়া ইউনিয়নের সিএইচসিপি সাবিনা সুলতানা বলেন, ‘প্রতিদিন যেতে পারি না। নৌকায়-মোটরসাইকেলে চড়ে যাওয়া-আসা করতে অনেক খরচ।’ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাবেয়া বাসরী বলেন, ‘যত দিন চরের কারও নিয়োগ না হচ্ছে, তত দিন এ পারের লোক দিয়েই ক্লিনিকটি চালাতে হচ্ছে।’
বরিশালের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো কখন খোলা হয়, আর কখন বন্ধ হয়, জানেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। সিএইচসিপিরা সময়মতো না আসায় রোগীদের তালাবদ্ধ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. সব্যসাচী বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর কার্যক্রম গতিশীল করতে তদারকি জোরদার করেছেন তাঁরা।
পানি-শৌচাগার নেই
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে নেই পানি ও শৌচাগার। টিউবওয়েল অকেজো থাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট। উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের নওদা খেমিরদিয়ার ও ফকিরাবাদ ক্লিনিকে সেবা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, টয়লেট ও পানি না থাকায় পড়তে হয় ভোগান্তিতে। বসার জায়গা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
গাজীপুরের কয়েকটি ক্লিনিকে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। কোথাও কোথাও সৌরবিদ্যুৎ থাকলেও সরবরাহ ঠিক থাকে না। নিয়মিত পানির সরবরাহ মেলে না।
বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা, পশ্চিম পাংশা ও হাদিবাসকাঠি ক্লিনিকের শৌচাগার নাজুক।
চাহিদামতো ওষুধ মেলে না
ঢাকার কেরানীগঞ্জের হযরতপুর ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে দিনে ৪০ জনের মতো রোগীকে প্রাথমিক সেবা দিলেও ওষুধ ঠিকমতো না পাওয়ার অভিযোগ অনেক রোগীর। সেবা নিতে আসা খাদিজা বেগম (৪০) বলেন, ‘শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। ঠান্ডায় জ্বর আর কাশি। ওষুধ নিতে গেলে কয়েকটা দিয়ে আর দেয় না।’ চাহিদামতো না দেওয়া গেলেও প্রয়োজন অনুযায়ী দেওয়া হয় বলে দাবি করেন সিএইচসিপি মো. আল-আমিন।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় ৪০টি ক্লিনিকের অধিকাংশেই ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রোগীদের। উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রামের ফজিলা খাতুন বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকে এলে ওষুধ পাওয়া যায় না। জ্বর, সর্দি, গ্যাস্টিকের ছাড়া কোনো ওষুধ পাই না।’ নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহমুদুর রশিদ জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে শতভাগ সেবা ও ওষুধ সরবরাহের কাজ করে যাচ্ছেন।
নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ১৭টি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবা নিচ্ছে প্রায় ৭৫০ রোগী। রোগীদের বিনা মূল্যে ওষুধ দেওয়া হলেও রোগীর তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। নূরপুর মালঞ্চি কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি আক্তারুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট, আমাশয়ের ওষুধ সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।
জনবলসংকট
জনবল সংকট কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর আরেক বড় সমস্যা। দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় ২৬টি ক্লিনিক। কিন্তু প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রী আছেন মাত্র তিনজন। সিএইচসিপিসহ ২০টি পদ শূন্য। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান জনবলসংকটের কথা স্বীকার করেন।
নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার ২৯৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে ২৭টিতে নেই স্বাস্থ্যকর্মী। ফলে অন্য ক্লিনিকের সিএইচসিপি দিয়ে কোনোরকমে চলছে কার্যক্রম। কর্তৃপক্ষ বলছে, ২৭টি ক্লিনিকের শূন্য পদে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হবে।
কিছু ক্লিনিক ভরসার স্থল
নাটোরের সুবিধাবঞ্চিত গ্রামীণ মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় আস্থার জায়গা কমিউনিটি ক্লিনিক। এসব ক্লিনিক থেকে নিয়মিত ২৭ রকমের ওষুধসহ সেবা মিলছে। জেলার ৭ উপজেলায় ২১১টি কমিউনিটি ক্লিনিক। প্রতিটিতে দিনে অর্ধশতাধিক রোগী সেবা নিচ্ছে। সিভিল সার্জন রোজী আরা বেগম বলেন, ‘উন্নতমানের ওষুধ ও কর্মীদের আন্তরিকতায় তৃণমূল মানুষের ভরসার প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে কমিউনিটি ক্লিনিক।’
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে সাত কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ হাজীপুর। এই গ্রাম থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেতে দুই কিলোমিটার হাঁটতেও হয়। তাই সদরে গিয়ে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া কষ্টকর। এই কষ্ট দূর করেছে কমিউনিটি ক্লিনিক।
টাঙ্গাইলে ৪২৯টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতিসহ নানা বিষয়ে রোগীদের পরামর্শ দিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানোসহ নানা সেবা দেওয়া হয়। গত বছর প্রায় ৫৬ হাজার রোগীকে পরামর্শ দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
আগে সেবার ধরন ঠিক করার তাগিদ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল হামিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে কী সেবা দেওয়া হবে, সেটি আগে ঠিক করতে হবে। তারপর সে অনুযায়ী অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। বর্তমানে উদ্দেশ্যহীনভাবে চলছে। অথচ এগুলোতে প্রাথমিক সেবার সব ধরনের ব্যবস্থাই করা যেত। এখন সব চেয়ে বড় সমস্যা হলো আন্তরিকতার।’
[প্রতিবেদনের জন্য তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান (গাজীপুর), আনোয়ার হোসেন শামীম (গাইবান্ধা), মো. রফিকুল ইসলাম খান (বরিশাল), মো. মোস্তাফিজুর রহমান (ভেড়ামারা), মো. নিয়াজ মোরশেদ (আক্কেলপুর), মো. জসিম উদ্দীন (নীলফামারী), মো. আমিনুল ইসলাম (ফুলবাড়ী), মো আতিকুল ইসলাম চৌধুরী (নবাবগঞ্জ), রিমন রহমান (রাজশাহী), ইলিয়াস আহমেদ ও মিন্টু মিয়া (নান্দাইল ও ময়মনসিংহ), মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ (নোয়াখালী), শিপুল ইসলাম (রংপুর), গনেশ দাস (বগুড়া), আনোয়ার সাদাৎ ইমরান (টাঙ্গাইল), মো. শামীম রেজা (রাজবাড়ী), ফারুক হোসেন ফিরোজ (সরিষাবাড়ী) ও আব্দুল্লাহ আল মাসুদ (ঝিনাইদহ)]
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৪ দিন আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৪ দিন আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৪ দিন আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
৪ দিন আগে