দেয়াল তুলে শীতলক্ষ্যার তীর দখল চেয়ারম্যানের

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২২, ১২: ১৬

গাজীপুরের শ্রীপুরে শীতলক্ষ্যা নদী দখল করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহীন মোড়ল এই দেয়াল তৈরি করেছেন।

চেয়ারম্যানের দাবি, ওই স্থান দিয়ে একটি রাস্তা তৈরির জন্য দেয়াল তুলেছেন তিনি। তবে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বলছেন, নদীর চর দখল না করতে ইতিমধ্যে চেয়ারম্যানকে নিষেধ করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার গোসিঙ্গা বাজার ও গোসিঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) পাশে অনেকটা জায়গা নিয়ে একটি সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হচ্ছে। দেয়ালের ভেতর জায়গার অনেকটা এক সময় শীতলক্ষ্যা নদী ছিল। দেয়াল নির্মাণের পর এটি ভরাট করে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান।

স্থানীয় বাসিন্দা লোকমান হোসেন বলেন, এক সময় বাজারের পাশ দিয়ে শীতলক্ষ্যার নদীর পানি প্রবাহিত হতো। বহু বছর আগে এই জায়গায় চর জেগেছে। যেখানে ইট দিয়ে দেয়াল তোলা হচ্ছে, এটি নদীর জায়গা।

গোসিঙ্গা ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এই প্রকল্পের সভাপতি বলে জানি, তবে দেয়াল তৈরির বিষয়ে কিছু জানি না। এটি নদীর জায়গা কি না, তাও আমার জানা নেই। তবে এখান দিয়ে বাজারের রাস্তা হবে। রাস্তা হলে খেয়াঘাট থেকে মানুষ সহজেই রাস্তায় উঠতে পারবে।’

গোসিঙ্গা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল ওহাব বলেন, ‘দেয়ালের অংশটি সম্পূর্ণ নদীর জায়গা। নদীর জায়গা দখল করে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ না করতে চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে আমি সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানিয়েছি; কিন্তু নিষেধ থাকা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।’

নদীর পাড় দখল করে দেয়াল নির্মাণ বিষয়ে জানতে চাইলে গোসিঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহীন মোড়ল বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি কী জানেন? এটা আমিই করছি, নদীর পাড় দিয়ে একটি রাস্তা হবে। এটি গোসিঙ্গা খেয়াঘাট পর্যন্ত যাবে। এটি নদীর জায়গা না।’

ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বক্তব্য প্রসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এটা তাঁদের বিষয়, তারা কী বলবে না বলবে। বাজারের একটি সিঁড়ি রয়েছে, এখন সেই সিঁড়ি কেউ ব্যবহার করে না। তাই এই সীমানাপ্রাচীর নির্মাণের পর এখানে রাস্তা করা হবে।’

শ্রীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেহেনা আক্তার বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভূমি কর্মকর্তার রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ইউএনও তরিকুল ইসলাম বলেন, খোঁজখবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নদীর জায়গা দখলের কোনো সুযোগ নেই আর নদীর জায়গা দখল করে কোনো রাস্তা করার নিয়ম নেই।

নদীরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদীর চর দখলকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। দখলদার যিনিই হোন, তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেকোনোভাবে দেশের নদ-নদী দখল-দূষণ থেকে রক্ষা করা হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত