নানা চাপে দেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়া কঠিন

বাংলাদেশে নানা চাপ এবং শক্তিশালী বিভিন্ন প্রভাবের মাঝে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গতকাল আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এ কথা জানায় সংস্থাটি।

আলোচনা সভায় উপস্থাপিত ‘বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: গণমাধ্যমের প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়, এ দেশে গণমাধ্যমের উত্থান ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ করপোরেটকরণ হয়েছে। ৩২টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের অধীনে রয়েছে দেশের ৪৮টি গণমাধ্যম। এগুলো মালিকের ঢাল হিসেবে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় সার্বিকভাবে স্বচ্ছতার ঘাটতিও দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমের লাইসেন্স পাওয়া নির্ভর করছে সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর। ব্যাপক করপোরেট পুঁজির প্রভাব সম্পাদকীয় নীতিমালাকেও আচ্ছন্ন করেছে। অন্তত ২০টি আইন, ধারা ও নীতিমালা মিডিয়ার ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করছে।

টিআইবি আরও জানায়, দেশে বহু গণমাধ্যম গড়ে উঠলেও পেশাদারি নিশ্চিত হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোতে সর্বজনীন কোনো মানবসম্পদ নীতিমালাও নেই।

দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা ভয়াবহ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে জানিয়ে প্রবন্ধে বলা হয়, গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিস্তার ঘটলেও তুলনামূলকভাবে মানসসম্মত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রসার হয়নি। লিক সাংবাদিকতা, পাপারাজ্জি সাংবাদিকতা, সরাসরি নথি চুরির মতো ঘটনাকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে। বাংলাদেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ছয়টি মূল চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে

মনে করছে টিআইবি। এগুলো হলো নিয়ন্ত্রিত বাজার ও করপোরেট পুঁজির প্রভাব; রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রীয় আইনি ও নীতি কাঠামো; সেল্ফ সেন্সরশিপ; প্রতিষ্ঠানের ইচ্ছার ঘাটতি; সক্ষমতার ঘাটতি এবং নিরাপত্তাহীনতা।

আলোচনায় অংশ নেন চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট জুলফিকার আলি মাণিক, এমআরডিআই এর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা হেল্প ডেস্কের প্রধান মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা, গ্লোবাল ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের রোভিং এশিয়া এডিটর মিরাজ আহমেদ চৌধুরী এবং একাত্তর টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর সুজন কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সাংবাদিকতার জন্য যে পরিবেশটা দরকার সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।

দুর্নীতি বিরোধী দিবস উপলক্ষে টিআইবি জাতীয় পর্যায়ে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং কার্টুন প্রতিযোগিতার পুরস্কার ঘোষণা ও প্রদর্শনীরও আয়োজন করে। এ বছর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট দুজন ক্যামেরা পারসনসহ ১০ জন সাংবাদিককে দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার দেওয়া হয়।