Ajker Patrika

ঢাকার মধ্যেই কষ্ট দিতে পারে যানজট

সৌগত বসু, ঢাকা
আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪: ০১
ঢাকার মধ্যেই  কষ্ট দিতে  পারে যানজট

ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথের যানজটও হতে পারে বাড়িমুখী মানুষের ভোগান্তির বড় কারণ। সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী-দোলাইরপাড়, গুলিস্তান, বাবুবাজার, বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী, টেকনিক্যাল থেকে গাবতলীর যানজট বাড়ি ফেরার শুরুতেই মানুষকে দুর্ভোগে ফেলার আশঙ্কা তৈরি করেছে। আবার রাজধানীর সব প্রবেশমুখের যানজটও বিলম্বিত করতে পারে ঈদযাত্রা।

বছরের পর বছর রাজধানীর ভেতরের সড়ক এবং মহাসড়কের যানজট মানুষের আনন্দযাত্রাকে ভোগান্তির যাত্রা করে তুলছে। কর্তৃপক্ষ একেকবার একেক কারণকে দায়ী করলেও পরের বছর ঈদযাত্রার আগে সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ চোখে পড়ে না। ফলে কষ্ট থেকে মুক্তিও মেলে না।

এবারও ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন করতে ২১ মার্চ বিআরটিএতে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি ঈদযাত্রাকে স্বস্তির করতে মহাসড়কে তিন চাকার যান চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন নির্দেশনাও দিয়েছেন। সভায় তিনি ঢাকার প্রবেশপথে মেয়র হানিফ (যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান) উড়ালসড়কের তীব্র যানজটের প্রসঙ্গও তুলেছেন। তিনি এ বিষয়ে নজর দিতে বললেও পরিস্থিতি এখনো বদলায়নি। 

যাত্রী ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানী থেকে বের হওয়ার ও প্রবেশপথে জটের মূল কারণ যানবাহনের সড়ক আটকে রাখা ও বিশৃঙ্খলা, সড়ক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা। এগুলো ঠিক করতে পারলেই মানুষের যাত্রায় স্বস্তি আসবে অনেকটাই।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, বিগত বছরে অবকাঠামোর দোষ দিয়ে অনেকে পার পেয়েছে। এবার যদি প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে যানজট হয়, তাহলে অবকাঠামোর দায় দেওয়া যাবে না। কারণ, টঙ্গীতে ১০ লেনের ফ্লাইওভার হয়েছে, কাঞ্চন ব্রিজ প্রশস্ত হয়েছে, পোস্তগোলা সেতু সংস্কার হয়েছে, আমিনবাজারে আট লেনের নতুন সেতু হয়েছে। পাশে চার লেনের পুরোনো সেতু আছে। এর মানে বের হওয়ার পথ ও প্রবেশদ্বার প্রসারিত। এরপরও যানজট হলে তার কারণ হবে ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, যত্রতত্র পার্কিং, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১০ বা ১১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতর। ৯ এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে ঈদের ছুটি। মূলত ৮ এপ্রিল দুপুরের পর থেকে শুরু হবে ঈদে বাড়ি ফেরার মূল চাপ। একই সঙ্গে শুরু হবে বাস টার্মিনাল, বাস কাউন্টার, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটকেন্দ্রিক এবং রাজধানী থেকে বের হওয়ার পথে যানবাহন ও মানুষের চাপ। রাজধানীর বিপণিবিতানকেন্দ্রিক জটও ভোগান্তিতে ফেলে বাড়িমুখী মানুষকে। বিশেষ করে গুলিস্তান, মিরপুর রোড ও কাজী নজরুল ইসলাম অ্যাভিনিউ।  

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্ব-দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের ভোগান্তির শুরু হতে পারে সায়েদাবাদ থেকে। কারণ, একটু পরপর কাউন্টারের সামনে বাস থেমে থাকার কারণে সায়েদাবাদ থেকে জনপথ হয়ে যাত্রাবাড়ী যেতেই লেগে যেতে পারে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি। গোলাপবাগ থেকে উড়ালসড়কে (ফ্লাইওভার) ওঠার সড়কও আটকে থাকতে পারে বাসের কারণে। আবার অনেক বাস যাত্রী তোলার জন্য উড়ালসড়কেই থেমে থাকে। সায়েদাবাদের এই যানজট গিয়ে ঠেকে টিটিপাড়া পর্যন্ত। ফলে সায়েদাবাদ আসতেই এক দফা ভুগতে হবে মানুষকে। বাসে ওঠার পর সিলেট-কুমিল্লা-চট্টগ্রাম অঞ্চলের যাত্রীদের যাত্রাবাড়ী-শনির আখড়া পার হতেই কেটে যেতে পারে আরও এক ঘণ্টা। শনির আখড়ার পর থেকে মহাসড়ক নির্বিঘ্ন থাকতে পারে।

দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীদের বড় অংশ সায়েদাবাদ থেকে বাসে ওঠেন। তাঁদের যাত্রাবাড়ী পার হতে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু যাত্রাবাড়ী মোড় পার হলেও স্বস্তি মিলবে না। কারণ, দোলাইরপাড়মুখী সরু সড়কের বেশির ভাগ দখল করে রাখে দক্ষিণাঞ্চল, মাওয়ামুখী ও লোকাল মিনিবাস। ওই সড়কের বড় অংশই যেন লোকাল মিনিবাসের টার্মিনাল। সড়কজুড়ে রাখা এসব মিনিবাস প্রতিদিনের যানজটের কারণ হলেও সরানোর উদ্যোগ নেই। অপর প্রান্তের সড়ক স্ট্যান্ড বানিয়ে দুই সারি বাস-মিনিবাস রেখে দেওয়ায় প্রবেশপথেও সৃষ্টি হচ্ছে তীব্র যানজট।

আবার গুলিস্তান থেকে মাওয়া হয়ে বাড়িমুখী যাত্রীরা যানজটে পড়তে পারেন পল্টন মোড় থেকে। কারণ, গুলিস্তানে সড়কে বাস-মিনিবাস, রিকশা-অটোরিকশার বিশৃঙ্খলা এবং ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কে নামা দোকান হাঁটার পথও সংকুচিত করে ফেলে। সদরঘাট থেকে লঞ্চে দক্ষিণাঞ্চলমুখী যাত্রীরা এই ধকল পোহাতে পারেন পল্টন থেকে সদরঘাট পর্যন্ত।

গুলিস্তান থেকে বাবুবাজার সেতু হয়ে বাড়িমুখী যাত্রীরাও এই যানজটে পড়বেন।

দেশের উত্তরাঞ্চলের বেশির ভাগ দূরপাল্লার বাস যাত্রা করে কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলেরও বাস ছাড়ে এ দুটি স্থান থেকে। কিন্তু এসব পথের যাত্রীদের শ্যামলী থেকেই জট ঠেলে যেতে হয়। আমিনবাজার সেতু পর্যন্ত এই জট প্রতিবছরই হয়। আবার প্রবেশমুখে কল্যাণপুর থেকে বলিয়ারপুর পর্যন্ত যানজট তৈরি হয়। কখনো কখনো হেমায়েতপুর গিয়েও ঠেকে। প্রবেশপথের এই জটের কারণে অনেক বাস আটকে পড়ায় নির্ধারিত সময়ে আবার ঢাকা থেকে যাত্রা করতে পারে না। 
উত্তরাঞ্চল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের যাত্রীদের জন্য ভোগান্তি হতে পারে বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী সেতু পর্যন্ত সড়ক। যদিও সেখানে উড়ালসড়ক চালু হয়েছে, তারপরও যানবাহনের বিশৃঙ্খলায় সেই সুবিধা নষ্ট হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এ পথে গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের নির্মাণকাজও যানজট তৈরি করে ভোগান্তিতে ফেলতে পারে যাত্রীদের। সরু রাস্তায় অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে আবদুল্লাহপুর থেকে আশুলিয়া বেড়িবাঁধ পর্যন্ত সড়কেও তীব্র জট হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান।

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মুনিবুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, চাপ তো থাকবেই। সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ঈদের আগে তাঁরা সব সময় বিশেষ ব্যবস্থা নেন। ঢাকার এসব প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোতে কী কী সমস্যা আছে, সেগুলো চিহ্নিত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, হানিফ ফ্লাইওভার, আমিনবাজার সেতু, যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা রাস্তা, উত্তরার কিছু অংশ–এই চার বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদের সব পদ স্থগিত

টিআইএন নেওয়ার পরে কিন্তু ঘুমাইতে পারবেন না: এনবিআর চেয়ারম্যান

আ. লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কি না, তারাই সিদ্ধান্ত নেবে: বিবিসিকে প্রধান উপদেষ্টা

এনআইডির তথ্য ফাঁস করে ২০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ জিয়াউলের বিরুদ্ধে

সাতকানিয়ায় নিহত জামায়াত কর্মীর লাশের পাশে ব্রাজিলের তৈরি অত্যাধুনিক পিস্তল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত