কাটা হচ্ছে ইতিহাসের সাক্ষী

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০৭: ০৯
আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ১২: ২৩

বরিশালের ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ৮০ বছরের বিশালাকার একটি রেইনট্রি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ অনেক নেতার নেতৃত্বে বড় সমাবেশে উদ্যানের পাশের গাছটি ছায়া দিত মানুষকে। গত কয়েক বছরে ধীরে ধীরে গাছটির মৃত্যু ঘটে। জেলা প্রশাসনের দরপত্র অনুযায়ী গত শুক্রবার থেকে গাছটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। বন বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, গাছটির মৃত্যুর অন্যতম কারণ এর চারপাশে সিমেন্ট ও বালুর বাউন্ডারি দিয়ে আটকে দেওয়া।

কালের সাক্ষী গাছটি কেটে ফেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। চার বছর আগে বরিশাল বিভাগীয় প্রাতর্ভ্রমণ ও শরীরচর্চা পরিষদের সদস্যরা চাঁদা তুলে গাছের চারপাশে সিমেন্ট-বালু দিয়ে বাঁধিয়ে টাইলস করায় ধীরে ধীরে এটির মৃত্যু ঘটে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বন বিভাগের বরিশালের কাশিরপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুস সালাম বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব পান। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন থেকে বন বিভাগকে চিঠি দেওয়া তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছের মৃত্যু ও মূল্য নির্ধারণ করেছেন। রেঞ্জ কর্মকর্তা সালাম বলেন, দুটি কারণে গাছটি মারা যেতে পারে। এর একটি বয়স, অন্যটি গাছের চারদিকে সিমেন্টের বাউন্ডারি দেওয়া। তাঁর ধারণা সিমেন্ট দিয়ে চারদিক আটকে দেওয়ায় হয়তো মাটি শুষ্ক হয়ে গেছে। যার ফলে খাবারের অভাব পড়েছে গাছটির। রেইনট্রি গাছের বয়স ৮০ বছর হতে পারে।

প্রাতর্ভ্রমণ ও শরীরচর্চা পরিষদের একাধিক সদস্য বলেন, ওই সময়ে সংগঠনের উপদেষ্টা মজিবর রহমানের নেতৃত্বে সদস্য ইকবাল হোসেন চাঁদা তুলে গাছের চারপাশে বাঁধাই করেছিলেন।

মজিবুর রহমান বলেন, সংগঠনের সদস্যদের টাকায় চার বছর আগে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে রেইনট্রি গাছটির গোড়ার চারদিকে ইট-বালুর প্রাচীর করে ঢেকে দেওয়া হয়। সেটিতে টাইলসও করা হয়েছিল। লোকজনদের বসার সুবিধার জন্য এটি করা হয়েছিল। এ কারণেই গাছটির মৃত্যু হয়েছে বলে সংগঠনের নেতারা মনে করছেন। ওই কাজটি করা ঠিক হয়নি।

সংগঠনের সদস্য ইকবাল বলেন, ২০১৭-১৮ সালের দিকে সংগঠনের তরফ থেকে চাঁদা তুলে গাছের চারপাশে সিমেন্ট, বালু দিয়ে দেয়াল দেওয়া হয়। তখন গাছে পাতা ছিল। জেলা প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না এ প্রসঙ্গে বলেন, উদ্যানের অনেক কাজই তাঁরা সংগঠনের পক্ষ থেকে করতেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু উদ্যান ঘুরে দেখা গেছে, পাঁচ-সাতজন শ্রমিক রেইনট্রি গাছটি কাটছেন। সেখানকার শ্রমিক নেতা আবুল কালাম বলেন, গত শুক্রবার থেকে তাঁরা রেইনট্রি গাছ কাটা শুরু করেছেন। আরও চার-পাঁচ দিন লাগবে। ৬৩ হাজার টাকায় গাছটি কিনেছেন ঠিকাদার কাজী মামুনর রশিদ জুয়েল।

রেইনট্রি গাছ টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক ও বরিশাল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তারিকুল ইসলাম জানান, গাছটির মৃত্যু হয়েছে বন বিভাগের প্রতিবেদনে নিশ্চিত হওয়ার পর দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেটি বিক্রি করা হয়েছে। ইট-বালুর প্রাচীর করে গোড়ার অংশ ঢেকে দেওয়ায় গাছটির মৃত্যু হয়েছে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে তাঁরা (প্রশাসন) জানতে পেরেছেন। বন বিভাগ থেকে গাছটির মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে লিখিতভাবে জানানো হলে গাছের মৃত্যুর জন্য কারা দায়ী তা শনাক্ত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) বরিশাল জেলার সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম বলেন, কী কারণে গাছটি মারা গেছে তা দেখা দরকার। প্রাতর্ভ্রমণ ও শরীরচর্চা পরিষদের সদস্যরা কোন শক্তিতে গাছটির চারপাশ সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে এটিকে ধীরে ধীরে হত্যা করল? এ ক্ষেত্রে বন বিভাগের নজরদারি কোথায় ছিল? জেলা প্রশাসনও কীভাবে ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধু উদ্যানের সম্পদে অন্যকে হাত দিতে দিল। রেইনট্রি গাছটিকে মৃত্যুর আগেই ধীরে ধীরে মেরে ফেলা হলো কিনা তা তদন্ত করে দেখা উচিত।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত