Ajker Patrika

সহজেই মিলছে, তবু চাহিদা মিটছে না

আজাদুল আদনান, ঢাকা
আপডেট : ১৪ জুন ২০২২, ১১: ৪০
সহজেই মিলছে, তবু চাহিদা মিটছে না

একসময় জরুরি ভিত্তিতে রক্তের প্রয়োজন হলে ছুটতে হতো ব্লাড ব্যাংকে। আজকাল রক্ত সংগ্রহের সেই পদ্ধতি অনেকটাই বদলে গেছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। এখন ব্লাড ব্যাংকে খোঁজ নেওয়ার আগে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে পোস্ট দিয়ে রক্তদাতার সন্ধান করেন বেশির ভাগ মানুষ। তাতে ফলও পাওয়া যায়। পরিচিতদের মধ্যে কেউ না কেউ রাজি হয়ে যান রক্ত দিতে, এগিয়ে আসেন অপরিচিতরাও। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে দেশে রক্ত সংগ্রহ এখন অনেকাংশেই সহজ হয়েছে। একই সঙ্গে রক্তদানের ব্যাপারে সচেতনতাও বাড়ছে।

কিন্তু তাতেও প্রতিবছর রক্তের চাহিদা শতভাগ পূর্ণ হচ্ছে না। দেশে বছরে সাড়ে ৯ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে সংগ্রহ করা যাচ্ছে ৮০ শতাংশের মতো। এই ঘাটতির কারণে রক্তের অভাবে এখনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকেই বেশি রক্ত পাওয়া যায়। কিন্তু বাংলাদেশে স্বেচ্ছায় রক্তদানের হার কয়েক বছর ধরেই নিম্নমুখী। এর মধ্যে করোনা মহামারির সময়ে সেই স্বেচ্ছায় রক্ত দেওয়ার প্রবণতা আরও কমেছে। তবে রক্তদানে রোগীর স্বজন এবং নারী দাতাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব রক্তদাতা দিবস’। স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহ বাড়াতে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, ‘সংহতির উদ্দেশ্যে রক্ত দিন, এই উদ্যোগে জড়িত হোন এবং জীবন বাঁচান।’

সরকারের নিরাপদ রক্ত পরিচালন কর্মসূচির তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে দাতাদের কাছ থেকে ৯ লাখ ৪১ হাজার ১৭২ ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করা হয়। করোনার কারণে সেই হার এক-তৃতীয়াংশ কমেছে ২০২০ সালে, এ বছর রক্ত সংগ্রহ করা গেছে ৬ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ ব্যাগ। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসায় ২০২১ সালে রক্ত সংগ্রহের হার বাড়লেও তা প্রত্যাশিত নয়। গত বছর সরকারিভাবে রক্ত সংগ্রহ হয়েছে ৭ লাখ ৭১ হাজার ৭০৮ ব্যাগ; যা চাহিদার ৮০ শতাংশের মতো।

গত বছর রক্তদাতাদের মধ্যে ৭২ দশমিক ৮১ ভাগই ছিলেন রোগীর স্বজন এবং পরিচিত ব্যক্তিরা। এর আগের বছর এই হার ছিল ৭০ শতাংশ। স্বজনদের ক্ষেত্রে রক্ত দেওয়ার প্রবণতা বাড়লেও স্বেচ্ছাসেবক ক্ষেত্রে তা কমেছে। ২০২০ সালে মোট সংগৃহীত রক্তের ৩০ ভাগ এসেছে স্বেচ্ছাসেবকদের কাছ থেকে, কিন্তু গত বছরে এই হার কমে ২৭ দশমিক ১৯ শতাংশে নেমেছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদান বাড়লেও সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে কমছে। প্রতিটি মানুষকে যদি জানানো যায় যে তাঁর শরীরের রক্ত ১২০ দিন পরপর এমনিতেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তাহলে তাঁরা রক্তদানে উদ্বুদ্ধ হবেন। আমরা চাই প্রতিটি মানুষ স্বেচ্ছায় রক্ত দিক।’

২৫ বছর ধরে রক্ত সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাঁধন। স্বেচ্ছায় রক্তদান কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে এ সংগঠনের সভাপতি সেলিম রেজা আজকের পত্রিকাকে বলেন, রক্তগ্রহীতা কিংবা তাঁদের স্বজনদের আন্তরিকতার অভাবে রক্ত দিতে অনেককেই বিভিন্ন সময় বিব্রতকর পরিস্থিতি পড়তে হয়। এর ফলে রক্তদাতা পরবর্তী সময়ে রক্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে অনাগ্রহী হয়ে ওঠেন।

রক্তদাতাদের নিয়ে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছে ‘জাজিরা ব্লাড ব্যাংক’ নামে একটি সংগঠন। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে এই সংগঠনের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, স্বেচ্ছায় রক্ত দিতে গিয়ে অনেকেই অবমূল্যায়নের শিকার হন। রক্ত দেওয়ার পর বেশির ভাগ লোকজন রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, দাতার আর খবর রাখেন না। এতে রক্তদাতারা পরবর্তী সময়ে আর রক্ত দিতে চান না। এ ক্ষেত্রে রক্তগ্রহীতাদের আরও সচেতন হতে হবে।

এদিকে রোগীর স্বজনদের মধ্যে রক্ত দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেলেও এ নিয়ে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আসাদুল ইসলাম। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘নিজেদের মধ্যে রক্তদানের হার বেড়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বিয়ের আগে ছেলে-মেয়ে উভয়ের রক্ত পরীক্ষা করা এবং স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যেন রক্ত দেওয়া-নেওয়া না হয় সে ব্যাপারে জোর দিতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত