সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে যত ভোগান্তি ১২০০ মিটারে

লবীব আহমদ, সিলেট
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১১: ৫২
আপডেট : ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১২: ২২

সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের ১ হাজার ২০০ মিটার অংশের উন্নয়নকাজ চলছে সাড়ে তিন মাস ধরে। সড়কের অর্ধেক খোলা রেখে এক পাশে কাজ চলছে। তবে সেই পাশের কাজই পুরোপুরি শেষ না করে খুলে দিয়ে শুরু হয় অপর পাশের কাজ। এ ছাড়া কয়েক দিন পর পর সড়ক মেরামত ও নালা নির্মাণকাজ করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে এ সড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের। যাত্রী ও পথচারীদের পড়তে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের মদিনা মার্কেট এলাকায় রাস্তার উন্নয়নকাজ চলছে। প্রথমে এক পাশে কাজ করলেও সেই পাশ পুরোপুরি শেষ না করে খুলে দিয়ে শুরু করেছে অপর পাশের কাজ। এতে করে দুই দিক দিয়ে আসা গাড়ি আটকে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এই সড়ক দিয়ে যেতে হয় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকেও দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন অংশ বন্ধ থাকায় ফুটপাত দিয়ে চলাচল করছে সাইকেল-মোটরসাইকেলও। এতে পথচারীরাও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

উন্নয়নকাজ চলায় সড়কের পাঠানটুলা এলাকায়ও একই অবস্থা। এর আগে এই সড়কের টুকের বাজার এলাকায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল চলাচল করা যাত্রীদের। 
গত রোববার এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থপতি, নাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা শাকুর মজিদ। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেন, ‘সিলেট শহরে কোনো নিয়ন্ত্রিত ট্রাফিক ব্যবস্থা যে নাই, এটা এখন বুঝলাম। ফ্যাক্ট: আম্বরখানা টু আখালিয়া। ১ ঘণ্টায়ও যাওয়া যায় না। হঠাৎ করে বাম দিকের গাড়ি ডানে চলে যায়। তারপর রাস্তা ব্লক।’

শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়ার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহমিদ হাসান আজকের পত্রিকাকে জানায়, আগে সে মাদ্রাসা ছুটি হলেই গাড়ি পেয়ে যেত। আর এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ধুলাবালু ও হর্নের কারণে দাঁড়িয়ে থাকাও দায়। আবার গাড়িতে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।

নগরের টুকেরবাজার-জিতু মিয়া রুটের সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক মেহেদি হাসান বলেন, ‘কয়েক মাস ধরে এভাবে রাস্তার কাজ চলার কারণে প্রতিদিনই আধা ঘণ্টার দূরত্ব যেতে লেগে যায় এক ঘণ্টার বেশি। আবার অনেক সময় মদিনা মার্কেটের যানজটেই বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এখন এই রোডে গাড়ি চালানোই দায়।’ 
মদিনা মার্কেট পয়েন্টের ব্যবসায়ী ইউনুছ মিয়া বলেন, কোনো প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ করেই রাস্তা বন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় একটু একটু করে কাজ শুরু হয়। এতে সময় লাগে প্রচুর, আর মানুষ পড়ে সীমাহীন দুর্ভোগে। ব্যবসায়ীরা ভালোভাবে ব্যবসা করতে পারছেন না। দোকান খুলে রাখলেও ক্রেতারা আসতে পারছেন না।

মদিনা মার্কেট পয়েন্টে ট্রাফিকের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য জাকির হোসেন বলেন, ‘মদিনা মার্কেটে রাস্তার উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই এখানে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এক পাশ বন্ধ থাকায় রাস্তা সরু, আবার প্রচুর গাড়ি। আবার যাত্রীদের এই পয়েন্ট থেকে গাড়িতে উঠতে হয়। গাড়ি একটু করে দাঁড়ালেই শুরু হয় দীর্ঘ যানজটের। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে যানজট না লাগে।’

রাস্তার কাজের দায়িত্বে থাকা জামিল ইকবাল এন্টারপ্রাইজের প্রকৌশলী মৃদুল দেব আজকের পত্রিকাকে জানান, সাড়ে তিন মাস ধরে এই আঞ্চলিক মহাসড়কের ১ হাজার ২০০ মিটার অংশের কাজ চলছে। কাজ বর্তমানে শেষের পথে। মদিনা মার্কেটের কাজ শেষ হতে লাগবে আরও সপ্তাহখানেক। কাজটি ঠিক সময়ে শেষ হলে রাস্তা পুরোপুরি খুলে দিতে লাগবে আরও ১০-১২ দিন।

রাস্তার এক পাশ পুরোপুরি খুলে না দিয়ে অপর পাশের কাজ কীভাবে শুরু করলেন? জানতে চাইলে মৃদুল দেব বলেন, ওয়ান ওয়ে রোডে এভাবে কাজ করা যায়। 
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মানুষ যাতে ভোগান্তির মধ্যে না পড়েন, সেই ব্যবস্থা করেই কাজ চলছে। একটা ঢালাই করলে ২৮ দিন সময় নিতে হয়। এতে যান চলাচলে একটু সমস্যা হয়। কাজ শেষ হয়ে গেলে মানুষের ভোগান্তিটা কমে যাবে। আমরা যত দ্রুত পারা যায় কাজটা শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত